কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর: আর মাত্র কয়েকটা দিন ৷ তার পরেই দুর্গাপুজো ৷ ইতিমধ্যে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে ৷ রাজ্য তথা কলকাতা শহরের বড় বড় পুজোগুলিতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ৷ কিন্তু, সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী বলে দাবি করা বিজেপি-র তরফে দুর্গাপুজো নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই ৷ এবারের দুর্গাপুজোয় বিজেপি অংশ নেবে কি না, বা দলের তরফে দুর্গাপুজো করা হবে কি না, সে নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কোনও নির্দেশই আসেনি ৷
কলকাতা তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ছোট-বড় পুজোগুলির সঙ্গে জড়িত রাজ্যের শাসকদলের নেতানেত্রীরা ৷ বিশেষত, কলকাতার নামকরা থিম পুজোগুলির উদ্যোক্তা তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের নেতা ও মন্ত্রীরা ৷ এই পুজোগুলি শুধুই দেবী দুর্গার আরাধনা বা উৎসব পালন নয় ৷ এই পুজোগুলি তৃণমূলের জনসংযোগের অন্যতম মাধ্যম ৷ মানুষের আরও কাছে যাওয়ার চেষ্টা ৷ সেই জায়গা থেকে 2024 লোকসভা নির্বাচনের আগে এবারের দুর্গাপুজো আরও বেশি করে জনসংযোগের মাধ্যম হয়ে উঠবে তৃণমূলের জন্য ৷
কিন্তু, সেখানেই রাজ্যের বিরোধী তথা কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি-র এ নিয়ে নাকি কোনও মাথাব্যাথাই নেই ! সনাতনী রীতি মতে পদ্মফুল ছাড়া দুর্গাপুজো কখনই সম্পূর্ণ হয় না ৷ কিন্তু, নির্বাচনী আবহে বঙ্গ-বিজেপিতে পুজো নিয়ে কোনও সাড়া শব্দ নেই ৷ সম্প্রতি বিধায়কদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ৷ সূত্রের খবর সেই বৈঠকে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মজয়ন্তী, মন কি বাত এবং অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলেও, দুর্গাপুজোর প্রসঙ্গ তোলাই হয়নি ৷ আবার বিজেপির একাংশের দাবি, আগামী মাসে দুর্গাপুজো করা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷
কিন্তু, নির্বাচনী আবহে সনাতনী বিজেপি নেতৃত্ব দুর্গাপুজো বিমুখ কেন ? যেখানে রাজ্য নেতাদের আগামী লোকসভায় 35-এর বেশি আসনের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ সেখানে বাঙালি-হিন্দু ভোটকে নিজেদের দিকে করার এই সুযোগকে কাজে লাগাতে বিজেপির গা-ছাড়া মনোভাবের কারণ কী ? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের একাংশের ৷
আরও পড়ুন: কলকাতায় এবার রাম মন্দির! উদ্বোধনে আসতে পারেন অমিত শাহ
তবে, কয়েকটি ক্ষেত্রে বিজেপির হাতে কলকাতার বড় দুর্গাপুজোগুলি রয়েছে ৷ যার মধ্যে অন্যতম, উত্তর কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার বা লেবুতলা পার্কের পুজো ৷ যে পুজো বিজেপি নেতা তথা কলকাতা পৌরনিগমের কাউন্সিলর সজল ঘোষের পুজো বলে পরিচিত ৷ গত বছর এই পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীও ৷ এবার অযোধ্যার রামমন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের উদ্যোক্তারা ৷ সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উপস্থিত থাকতে পারেন বলে সূত্রের দাবি ৷
কিন্তু, এর বাইরে রাজ্য বিজেপির উদ্যোগে দুর্গাপুজো করা নিয়ে কোনও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না ৷ 2020 সালে ইজেডসিসি-তে বিজেপি-র দুর্গাপুজো শুরু হয় ৷ প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি পুজোর সূচনা করেন ৷ বিশাল জাঁকজমক হয়েছিল ৷ কিন্তু, 2021 সালে বিজেপির বিধানসভা নির্বাচনে হারের পর, সেই পুজোর আয়োজনে উৎসাহ একেবারে ছিল না ৷ কোনও মতে সেই পুজো করা হয় ৷ এরই মধ্যে মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে আসেন ৷ তার পর 2022 সালে পুজো হবে কি, হবে না করে শেষ মুহূর্তে কোনও রকমে আয়োজন করা হয় ৷ এবারেও সেই একই পরিস্থিতি ৷
আরও পড়ুন: তিন বছরেই হাল ছাড়ল পদ্মশিবির, উমার আরাধনায় আর নেই বিজেপি
সূত্রের খবর, জেলা স্তরে বিজেপির নেতা ও কর্মীদের দুর্গাপুজোর সঙ্গে বেশি করে যুক্ত হতে বলা হয়েছে ৷ বিশেষত, জেলা ও সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের ৷ পাশাপাশি, আগে থেকে যাঁরা দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত, সেই পুজোগুলিকে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে ৷ কিন্তু, রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতারা নিজেরা পুজোর সঙ্গে যুক্ত হবেন কি না, সে নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে ৷