কলকাতা, 19 অগাস্ট : প্রবল বৃষ্টির জন্য ডেঙ্গির প্রকোপ কমে যাওয়ার আশায় করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর । তবে, এর পরে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলে, পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে । স্বাস্থ্য দপ্তর এমনটা বললেও, এ রাজ্যের সরকারি ডাক্তারদের বিভিন্ন সংগঠন বলছে, এই বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গির প্রকোপ আরও বেড়ে যাবে ।
চলতি বছরে এ রাজ্যে ডেঙ্গির সব থেকে বেশি প্রকোপ দেখা যাচ্ছে উত্তর 24 পরগনায় । এই জেলার হাবড়া, দেগঙ্গা, গাইঘাটা, বনগাঁয় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে । রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে ডেঙ্গির জন্য এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে । আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজারের একটু বেশি । এর মধ্যে উত্তর 24 পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার । স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তী বলেন, "উত্তর 24 পরগনার কয়েকটি জায়গায় ডেঙ্গির আউট ব্রেক হয়েছে । তবে, এই পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে । গত সপ্তাহে দেখা গিয়েছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নমুখী । তার আগের দুই সপ্তাহে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল।"
স্বাস্থ্য অধিকর্তা আরও বলেন, "হাবড়াকে কেন্দ্র করে আশপাশের কিছু অংশে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে । স্বরূপনগর, গাইঘাটা, বনগাঁর কোথাও কোথাও দুই-একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে । আমরা এখন অনেক বেশি সতর্ক ।" রাজ্যের বাকি অংশের পরিস্থিতি কেমন? তিনি বলেন, "এক একটি জেলায় প্রায় 60 জন করে ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে ।" এই যে প্রবল বৃষ্টি হল, তার প্রভাব ডেঙ্গির উপর কতটা পড়বে? স্বাস্থ্য অধিকর্তার জবাব, "বেশি বৃষ্টি হল । এর জন্য ডেঙ্গির সংক্রমণ কমে যাওয়া উচিত । এত বৃষ্টির জন্য ডেঙ্গির সূত্র সব ধুয়ে যাবে । তবে, এর পরে অল্প অল্প বৃষ্টিটাই সব থেকে ভয়ঙ্কর ।"
সরকারি ডাক্তারদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক, ডাক্তার মানস গুমটা বলেন, "ডেঙ্গির পরিস্থিতি কেমন, এর মধ্যে সত্যি এবং মিথ্যা, এই দুটি বিষয় রয়েছে । আমরা জানি, রক্ত পরীক্ষায় NS1 পজ়িটিভ পাওয়া গেলে, এর ভিত্তিতে বেশিরভাগ জায়গায় ডেঙ্গির জন্য চিকিৎসা হচ্ছে । প্লেটলেট কমে গেলে, রোগীর অবস্থা খারাপ হলে, তার জন্য চিকিৎসা হচ্ছে । কিন্তু, সরকারের একটা পদ্ধতির জন্য সরাসরি ডেঙ্গি লেখা যাচ্ছে না । যেগুলি হচ্ছে, তার মধ্যে বহু রোগীর মধ্যে ডেঙ্গি রয়েছে ।"
একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ডেঙ্গি সংক্রমণের বিষয়টি অস্বীকার করে এর গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে । তিনি বলেন, "সরকারকে আমরা বলছি, গুরুত্ব না কমিয়ে সবার কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হোক । ডাক্তার হিসাবে আমরা সব সময় সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত । কিন্তু, বিষয়টাকে গোপন করার জন্য সরকার যদি অলিখিত নির্দেশ দেয়, তা হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয় যে কিছু হয়নি ।"
মানস গুমটা আরও বলেন, "ডেঙ্গির প্রকোপ অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরেও একই রকম রয়েছে । প্রবল বৃষ্টির জল জমে থাকলে এর প্রভাব তো ডেঙ্গি সংক্রমণের উপর পড়বেই । সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।" রাজ্যের সরকারি ডাক্তারদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, সজল বিশ্বাসের অভিযোগ, "স্বাস্থ্য দপ্তর লোক দেখানো কাজ করছে । দেখানো হচ্ছে অনেক কিছু । আদতে কিছু হচ্ছে না৷"