কলকাতা, 1 জুলাই: চিকিৎসক দিবসের দিনই বড় সাফল্য শহর কলকাতার এক হাসপাতালে। সফল ফুসফুস প্রতিস্থাপন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে দিশা দেখাল মেডিকা হাসপাতাল। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ওড়িশার 30 বছর বয়সি এক যুবকের। ব্রেন ডেথ হওয়ার কারণে তাঁর অন্যান্য অঙ্গদান করা হয়। সেই যুবকের শরীরের ফুসফুসই প্রতিস্থাপিত হয়েছে কলকাতার 16 বয়সের কিশোর স্বপ্ননীলের শরীরে। এর আগে মেডিকাতেই এক রোগীর শরীরে ফুসফুস প্রতিস্থাপন হলেও তার কিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল ওই রোগীর । তবে এবারের এই সফল ফুসফুস প্রতিস্থাপনের পর সুস্থ রয়েছে এই কিশোর ।
শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রথম সফল ফুসফুস প্রতিস্থাপনকে বড় সাফল্য হিসেবেই দেখছেন কলকাতার চিকিৎসকরা । বারাসতের বাসিন্দা স্বপ্ননীল বিশ্বাস । বর্তমানে সে দশম শ্রেণির ছাত্র । তাঁর পরিবার জানিয়েছে, বাড়িতে পোকামাকড় মারার জন্য প্যারাকোয়াট ডাইক্লোরাইড নামে এক ধরনের কীটনাশক রাখা ছিল । ভুলক্রমে তা রাখা হয়েছিল একটি কোল্ড ড্রিংকস-এর বোতলে। আর তাতেই চুমুক দিয়ে দেয় স্বপ্ননীল ৷ এরপরেই তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা শুরু হয় ৷ প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসাতের একটি হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইপাসের এই বেসরকারি হাসপাতালে ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই কীটনাশক শরীরে প্রবেশ করলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গলিয়ে দেয় । বহুক্ষেত্রেই দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে ৷ জীবিত থাকলেও যে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তা বোঝা যায় দিন সাতেক পর থেকে । তখন কিডনি, লিভার ও ফুসফুস সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে । এই কিশোরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল ফুসফুসের । চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ফুসফুসের ছবি দেখে জানিয়েছিলেন, দেখে মনে হচ্ছে যেন তার ফুসফুস জ্বালিয়ে কালো করে দেওয়া হয়েছে । এই ঘটনার সাতদিন পরে তাকে আনা হয় এই বেসরকারি হাসপাতালে । উপায় বলতে ছিল, একমাত্র ফুসফুস প্রতিস্থাপন ।
ফলে ফুসফুস দাতার অপেক্ষায় ছিল স্বপ্ননীলের পরিবার । অন্যদিকে, কিশোরের হৃদযন্ত্রকে সচল রাখতে টানা 37 দিন কৃত্রিম ফুসফুস বা একমো সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাকে ৷ গত শনিবার ওড়িশার পথ দুর্ঘটনাগ্রস্ত এক ব্যক্তির ব্রেন ডেথ হওয়ার খবর পাওয়া যায় । তাঁর ফুসফুস স্বপ্ননীলের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় কলকাতা থেকে চিকিৎসকদল ওড়িশা গিয়ে ফুসফুস সংগ্রহ করে আনেন ।
আরও পড়ুন: আজ জাতীয় চিকিৎসক দিবস ! জেনে নিন বিস্তারিত
তবে এর সঙ্গে তৈরি হয়েছিল আরও একটি বড় সমস্যা, তাহলো এই জটিল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার খরচ । বেসরকারি হাসপাতালটির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয় । সেই আবেদনের সাড়া দেয় সরকার । 5 লক্ষ টাকা আর্থিক অনুমোদন দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে । এরপর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতায় শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয় স্বপ্ননীলের অস্ত্রোপচার । প্রায় আটঘন্টা ধরে চলে এই প্রতিস্থাপন ।
কিশোরের শরীরে এই ফুসফুসের সফল প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসক কুণাল সরকার, সৌম্যজিৎ বসু এবং সপ্তর্ষি রায় । এর আগে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন হতে দেখা গিয়েছে, তবে সফল ফুসফুস প্রতিস্থাপন এই প্রথমে করল কলকাতার কোনও বেসরকারি হাসপাতাল ৷ চিকিৎসক কুণাল সরকার এই প্রসঙ্গে বলেন,"ফুসফুস প্রতিস্থাপন সবথেকে বেশি জটিল, তার কারণ এখানে মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে দুটো অর্গ্যান প্রতিস্থাপন করতে হয় ৷ এটা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল ।" ছেলের এই নবজীবন প্রাপ্তিতে স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে স্বপ্ননীলের পরিবার ৷