শিলিগুড়ি, 14 ফেব্রুয়ারি: প্রেম দিবসের প্রাক্কালে শিলিগুড়িতে হইচই ফেলে দিল একটি পোস্টার ৷ না, সেই পোস্টারে কোনও ভালোবাসার কথা লেখা নেই ৷ বরং লেখা রয়েছে প্রেমে আঘাত পাওয়ার কাহিনি ৷ প্রেমিকের প্রতি ঝরে পড়েছে রাগ, বিদ্বেষ ৷ এমনকি রয়েছে ছবি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকিও !
ঘটনাস্থল শিলিগুড়ি কলেজের 2 নম্বর গেট ৷ সেখানে বৃহস্পতিবার দেখা যায় জনাকয়েক কলেজ পড়ুয়া আর যুবক-যুবতীদের জটলা । তাঁদের চোখে মুখে কৌতূহলের ছাপ । প্রত্যেকেই মোবাইল দিয়ে কীসের যেন ছবি তুলছে । একজন, দু'জন করে সেই জটলা বাড়ছে ৷ প্রত্যেকেই জানতে চাইছে, আসলে সেখানে চলছেটা কী ? এগিয়ে গিয়েই সবাই দেখল এক অবাক করা কাণ্ড !
কলেজের গেটের পাশের স্তম্ভে দুটি সাদা কাগজের পোস্টার সাঁটানো । আর তাতে লেখা 'রোহণ ইউ চিটেড অন মি । হিয়ার আর ইওর পিকস, নাও এভরিওয়ান উইল সি ।" যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, "রোহণ তুমি আমায় ধোকা দিয়েছো । এই তোমার ছবি দিলাম, এখন সবাই তোমাকে দেখবে ।"
এই লেখাটার ঠিক নীচে একটি কিউআর কোড দেওয়া । বিষয়টা বুঝতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গেল । বেশ কয়েকজন ততক্ষণে কৌতূহলের বশে সেই কিউআর কোড স্ক্যানও করা শুরু করে দিয়েছে । কে এই রোহণ জানতে সবাই তখন উৎসুক । সবাই তখন জানতে চাইছে, কিউআর কোড স্ক্যান করে কার ছবি ভেসে উঠবে ৷ সেটা কি হবে কলেজেরই চেনা কারও ছবি !
এরপরই হল রহস্যের যবনিকা পতন । কিউআর কোড স্ক্যান করে কোনও রোহণের ছবি বের হয়নি ৷ বেরিয়ে এল রকমারি গাছের চারার নাম এবং তাদের দাম । যেমন এনচান্ট্রেস । তার দাম 349 টাকা । তারপর কনফেশন, তার দাম 1299 টাকা । মিস রোজ, তার দাম 679 টাকা । পরপর রয়েছে এমনই আরও অনেক চারাগাছের নাম । আর সেই কাণ্ড দেখে কেউ বেদম হাসছে । আবার কেউ চূড়ান্ত হতাশ হয়ে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে জায়গা ছাড়ছে ।
এ বিষয়ে কলেজ ছাত্রী জিনিয়া ঘোষ বলেন, "কলেজের আশপাশে এরকম বেশ কয়েকটা পোস্টার চোখে পড়েছে । বোকা বানানোর ভালো বুদ্ধি । লিঙ্ক খুলতেই ফুলের ক্যাটালগ খুলছে । যেই করুক ফুলের বিজ্ঞাপনের জন্য ভালো বুদ্ধি ।"
আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা রণজিৎ বোস বলেন, "ওখানে দাঁড়িয়ে থাকার সময় পোস্টারটা চোখে পড়ে । প্রথমে একটু আশ্চর্য হই । প্রেমে ধোকা খেলে কেউ আবার এরকম করে নাকি ! তারপর কিউআর কোড স্ক্যান করে লিঙ্ক খুলতেই বুঝি বোকা বনেছি । তবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-কে মাথায় রেখেই এটা করা হয়েছে সেটা বুঝতে পারলাম ।"
তবে এসবের মাঝে প্রতারণার পরিকল্পনার আশঙ্কা করছেন পুলিশ কর্তারা । পুলিশ কর্তাদের কথায়, নিশ্চিত না-হয়ে এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কোনও কিউআর কোড গ্রাহকদের স্ক্যান না-করাই ভালো । তাতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় । এই ধরনের বিজ্ঞাপনের পিছনে নিছক প্রচার, নাকি অন্য কোনও পরিকল্পনা রয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ।
এই বিষয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, "এই ধরনের রাস্তার আশপাশে থাকা অজানা কিউআর কোড হুটহাট করে নিশ্চিত না-হয়ে স্ক্যান না-করাই শ্রেয় । এতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । সাধারণ মানুষের এই বিষয়ে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ।"
শিলিগুড়ির আর এক পুলিশ কর্তার কথায়, "যুবক যুবতীরা অনেক সময় এই ধরনের বিজ্ঞাপন দেখে কৌতূহলের বশে ভুল করে বসে । এই পোস্টারে প্রতারণার কিছু না থাকলেও, আগামীতে এমন ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার না হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয় । কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে প্রতারণা এখন আকছার হচ্ছে ৷ আর এই পোস্টার থেকেও প্রতারণা হতে পারে ৷ সেজন্য এই ধরনের বিজ্ঞাপন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখাটাই নিরাপদ ।"
কলেজের এক ছাত্রীর বাবা মনোজ রাউথ বলেন, "মেয়েকে কলেজে দিতে এসেছিলাম । গেটের কাছে এই পোস্টার দেখি । বিষয়টা দেখে কিছুটা আঁচ পাই । মনে হয়, এটা প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে । সেজন্য খুব একটা পাত্তা দিইনি ৷" জনৈক স্থানীয় সুতপা বসাক বলেন, "কিউআর কোড স্ক্যান করতেই গাছের চারা, ফুলের নাম আর তার দাম আসছে । বুঝতে পারলাম বিষয়টা মিথ্যে । তবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে'র জন্যই এই পরিকল্পনা, সেটা মনে হয়েছিল ৷" এলাকারই আর এক ব্যক্তি দিব্যতনু রায়ের কথায়, "ধুর ! এসব বুজরুকি । না-হলে এইভাবে পোস্টার লাগিয়ে কেউ আবার ফুল বিক্রি করে নাকি । আগে কিউআর কোড স্ক্যান করো ! তারপর অর্ডার করো ! তবে সবই মার্কেটিংয়ের জন্য সেটা বুঝলাম ।"
এমন পোস্টারে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, একথা মেনে নিয়েছেন অনেকেই ৷ তবে অল্পবয়সি কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া আবার এই পোস্টার থেকেই প্রেম দিবসে ভালোবাসার মানুষকে উপহার দেওয়ার অভিনব আইডিয়া খুঁজে পেয়েছেন ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর কথায়, "ভ্যালেন্টাইনস ডে-র প্রাক্কালে এই পোস্টার দেখে দারুণ আইডিয়া পেলাম ৷ এমন কিউআর কোড দিয়ে ফুলের তোড়া, চকোলেট বা নিজেদের কোনও সুন্দর ছবি পাঠানো হলে, তাক লেগে যাবে প্রেমিকের ৷ ব্যাপারটা বেশ ইউনিক হবে ৷"