কলকাতা, 2 ফেব্রুয়ারি: এ বছর স্বাস্থ্যখাতের জন্য যে বাজেট পেশ করা হয়েছে, তার জেরে চালু কেন্দ্রীয় বিভিন্ন প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। করোনাখাতে অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল । এমনই জানিয়েছে এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। স্বাস্থ্যখাতের এই বাজেটকে জনবিরোধী হিসাবে উল্লেখ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির কমপক্ষে 10 শতাংশ ব্যয় বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে সংগঠনগুলির তরফে ।
সোমবার, 1 ফেব্রুয়ারি পেশ হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেট । এই বাজেটের বিষয়ে এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "এই বছর স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাড়ানো হয়েছে । তবে তা ছয় বছরের জন্য। এর মধ্যে ভ্যাকসিনের জন্য দেওয়া হবে 35 হাজার কোটি টাকা। এর ফলে, কেন্দ্রীয় যে সব প্রকল্প চলছে, সে সবের জন্য বাজেট কমে যাবে ।" তিনি আরও বলেন, "বাজেটের বড় একটি অংশ যদি ভ্যাকসিনের জন্য দেওয়া হয়, তা হলে যে প্রকল্পগুলি চলছে, সেগুলি মার খাবে। গত বছরের বাজেটে যা ছিল, তার থেকে এ বছরের বাজেট আরও বাড়ানো প্রয়োজন ছিল বরাদ্দ। বাজেটে এ বছর যে বৃদ্ধি হয়েছে, সেই 60-65 হাজার কোটি টাকা ছয় বছরের জন্য । এই ছয় বছরে, প্রতি বছরের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে তার সঙ্গে গত বছরের বাজেটের টাকা যোগ করে যদি 35 হাজার কোটি টাকা ভ্যাকসিনের জন্য দেওয়া হয়, তা হলে কিছু থাকবে না। "
আরও পড়ুন:রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের গ্রাফ নিম্নমুখী, একদিনে আক্রান্ত 179
মানস গুমটা বলেন, "এর ফলে, করোনা নয়, এমন বিভিন্ন চিকিৎসার পাশাপাশি অন্য যে সব কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু রয়েছে, দেখা যাবে সেগুলি চূড়ান্ত ভাবে মার খাচ্ছে । করোনার ভ্যাকসিনের জন্য বাজেটে আরও বেশি অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল ।"
সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে যে টাকা বাড়ানো হয়েছে, তার বেশিরভাগ ভ্যাকসিনেশনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এ ভাবে সার্বিক অর্থে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় উন্নয়ন কিছু হবে না ।" তিনি বলেন, "ভ্যাকসিনেশনের উপরে যে জোর দেওয়া হচ্ছে, তার পিছনে পরিকল্পনা রয়েছে বলে আমরা মনে করি। কারণ যে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল এখনও পর্যন্ত শেষ হয়নি, সেই ভ্যাকসিনকে তড়িঘড়ি চালু করে দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিনের জন্য বাজেটে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির মুনাফার জন্য এ সব করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।"
আরও পড়ুন:কোরোনা পরিস্থিতির পর কেন্দ্রীয় বাজেট : তাকিয়ে ছোটো শিল্প থেকে সাধারণ মানুষ
সজল বিশ্বাস বলেন, "যে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে, তাকে তড়িঘড়ি প্রমোট করার জন্য জনগণের তহবিলের এই বিপুল অঙ্কের টাকা ও সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ঢালাও ব্যবহার কি উদ্দেশ্যে এবং কেন, এই বিষয়টি যেমন প্রশ্নের মুখে, তেমনই বাকি সামান্য টাকা দিয়ে সমগ্র স্বাস্থ্য পরিষেবা কীভাবে চলবে, তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে । আমরা এই জনবিরোধী স্বাস্থ্য বাজেটের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি । স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির কমপক্ষে 10 শতাংশ ব্যয় বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি ।"
সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন যে, এ বছর স্বাস্থ্য বাজেট 64,180 কোটি টাকা বাড়ল। অথচ, গত বছরের বাজেট ছিল 67,112 কোটি টাকা। এদিকে, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এই 63,180 কোটি টাকা দেওয়া হবে আগামী ছয় বছরে। অর্থাৎ, এই 64,180 কোটি টাকাকে ছয় দিয়ে ভাগ করে যে টাকা হবে, সেই টাকা অর্থাৎ 10,696.6 কোটি টাকা বাড়বে প্রতি বছর । সুতরাং এই বছর স্বাস্থ্যখাতে আসল বাজেট 67,112+10,696 = 77.808 কোটি টাকা । এই টাকা থেকে 35 হাজার কোটি খরচ হবে করোনার ভ্যাকসিনের জন্য। অর্থাৎ, বাকি থাকল 77,808-35000= 42,808 কোটি টাকা। অথচ, গত বছরের বাজেটে ছিল 67,112 কোটি টাকা।