কলকাতা, 1 অক্টোবর: বাঙালির পুজো মানে একবছরের অপেক্ষা । কীভাবে পুজোর পাঁচ দিন কাটানো যায়, তা নিয়েই এক বছরের আগে থেকে চলতে থাকে প্লানিং । বৃষ্টি কিংবা ভ্যাপসা গরম, প্যান্ডেল হপিং থেকে বাঙালিদের সরাতে পারেনি কেউই । তবে দুর্গাপুজো যতই বাঙালির প্রাণের পুজো হোক না কেন, তাদের কাছে সবার আগে পেট পুজো । দুর্গাপুজোর এই ক'দিন বাঙালি শরীরচর্চা ভুলে মজে থাকেন মেনুকার্ডে । তবে এবার শরীরের দিকে নজর দিতেই মহানগরের বুকে খুলল চিকিৎসক ক্যাফে ৷ এটির নাম একলিজিয়াস্টিজ ক্যাফে (Ecclesiastes cafe)।
বাইপাস ধারে এই ক্যাফেতে মিলবে পুষ্টিকর সব খাওয়ার । বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা মিলে কলকাতার বুকে এই ক্যাফে খুলেছেন । চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায় বলেন," আমাদের এমন অনেক জিনিস রয়েছে যা খেতে ইচ্ছা করে কিন্তু সেটা খেলে কী হবে তা নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবি না । আমি নিজে চিকিৎসক হয়েও অনেকগুলো ওষুধ খাই । তাই আমার মনে হয় পুষ্টিকর খাওয়ার মানে সব সময় শাক-সবজি হতে হবে তা নয় । তাই আমাদের এখানে এমন খাওয়ার রাখা হয়েছে, যা মূলত শরীরের জন্য ভালো । তাই সব খাওয়ার পাশে লেখা রয়েছে ওই খাওয়ার গুণাবলী। "
এই ক্যাফের টেবিলেও রয়েছে বিশেষত । ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্ট্রলের কথা ভেবে রাখা হয়নি নুনের ব্যবস্থা । সেখানে সুন্দরবন থেকে আসা মধু ও তাদের তৈরি আচার এখানে আসা মানুষদের পরিবেশন করা হয় । এছাড়াও রান্নার জন্য ব্যবহার করা হয় সন্ধক লবণ । এর পাশাপাশি এই ক্যাফেতে যদি কোন ব্যক্তি ডায়েটিশিয়ান দেখাতে বা ব্লাড প্রেসার মাপতে চান, সেই ব্যবস্থাও করা রয়েছে । এমনকী পুরো ক্যাফে সাজিয়ে তোলা হয়েছে সবুজ রং, গাছপালা ও অ্যাকুরিয়ামের সাহায্যে (Doctors Cafe) ।
এই ক্যাফের মালিক অলিভিয়া ডানলপ বলেন, "প্রথমে আমরা একটা সার্ভে করেছি ৷ সেখানে রোগীকে কী ধরনের খাবার দেওয়া যেতে পারে তা জানতে পারি । তারপর সেই খাবার আমরা রোগী ও তার পরিবারের জন্য ব্যবস্থা করি । পরবর্তীকালে এই হেলদি খাবারের বিষয়টি শুধু রোগী বা তার পরিবারের জন্য কেন সর্বসাধারণের কাছেও আমরা তুলে ধরতে পারি সে নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করি । সেখান থেকেই এই ক্যাফের ভাবনা । আর অ্যাকুরিয়াম রাখা হয়েছে কারণ আমরা সার্ভেতে দেখতে পেয়েছি এর মাধ্যমে মানুষ চাপমুক্ত হতে পারে । খুব কম সময়ে এটা মানুষের মধ্যে কাজ করে সেই জন্যই আমাদের এই ভাবনা ।"
আরও পড়ুন: পুজোয় এক ফোনেই দুয়ারে স্পেশাল মেনু ! সৌজন্যে ডাব্লিউবিসিএডিসি
তবে এসবের পাশাপাশিই আরও একটি ব্যবস্থা রয়েছে এই হাসপাতাল ও ক্যাফের । চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায় বলেন, "আমি অত্যন্ত ছোট বয়সে বাবাকে হারিয়েছি । তখন থেকে আমার মনে জেদ ছিল ৷ যারা আমার মতন ছোট্ট বেলায় বাবাকে হারিয়েছে তাদের সেই পিতৃশোক মুছে দেওয়ার জন্য কিছু একটা করা দরকার । তাই সুন্দরবনের যে সমস্ত পরিবার বাঘের দ্বারা আক্রান্ত হন, যাদের বাবা গভীর জঙ্গলে জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে বাঘের জন্য মারা যান, তাদেরকে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি ।"