কলকাতা, 22 জুন: রাজ্যপালের রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের জয়নিং রিপোর্ট গ্রহণ না-করা নিয়ে নানা মুনির নানা মত ৷ পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে একরকম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে রাজ্যে। রাজ্যপাল নির্বাচন কমিশনারের যোগদান রিপোর্ট ফের নবান্নে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়াতেই এই অনিশ্চয়তা। আর এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন সমাজের বিশিষ্টরা ৷ প্রসঙ্গত, বিষয়টি নিয়ে সমাজের একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছিল ইডিভি ভারতের প্রতিনিধি। কিন্তু এই নিয়ে একাধিক দিক উঠে আসছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে বলছেন, এই ঘটনায় রাজ্যপাল যেহেতু নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেন সে ক্ষেত্রে বর্তমান পদক্ষেপের ফলে তার নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই সম্পূর্ণ হল না। প্রশ্নচিহ্নের মুখে এসে দাঁড়াল রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ। তিনি এও জানিয়েছেন রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তের ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে একটা সাংবিধানিক সংকট তৈরি হল। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আদেও কোন সাংবিধানিক সংকট রয়েছে বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায়। তিনি ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, গতকাল রাজ্যপাল রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের জয়েনিং রিপোর্ট ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করছেন, রাজ্যপাল যা করেছেন অত্যন্ত ন্যায্যভাবেই করেছেন। কেন না বেশ কিছুদিন আগে তিনি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনার দেখা করেননি। তিনি বলেন, "নির্বাচনের কাজে আমি ব্যস্ত ফোনে কথা বলতে পারি তবে যেতে পারব না। কারণ টেকনিক্যালি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগকর্তা রাজ্যপাল। সে কারণেই তিনি রাজ্যপাল তাঁর জয়েনিং রিপোর্ট ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন।"
একই সঙ্গে, তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাজ্যপালের এই পদক্ষেপের ফলে কি রাজ্যে কোনও সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারে? জবাবে অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, "এর ফলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হওয়ার তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই।" অমল মুখোপাধ্যায়ের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে আসলে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে রাজ্যপালের রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপর আর কোনও ভরসা নেই। যেটা বাংলার সাধারণ মানুষেরও নেই। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "এই সিদ্ধান্তের ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কোনও সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।" পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কোনও সংকটের সম্ভাবনা নেই বলছেন রাজ্যের এক প্রাক্তন মুখ্যসচিবও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের এক প্রাক্তন মুখ্য সচিবের কথায়, "রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ নিয়ে কোনও সংবিধানিক সংকট তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি না। কারণ রাজ্যপালের অনুমোদনের পর সরকারি নির্দেশ হয়। তারপরই নিযুক্ত হন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। সরকারি অর্ডার হয়ে যাওয়ার অর্থই তিনি নিযুক্ত হয়ে যাওয়া। এরপরে আলাদা করে রাজ্যপালকে বিষয়টি জানাতে হবে বা তিনি সেই চিঠি গ্রহণ করবেন বা তা ফিরিয়ে দেবেন তার উপর কিছু নির্ভর করে না।" তিনি স্পষ্ট ভাষায় এও জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ কোনও রাজ্যের আইনের ভিত্তিতে হয় না। হয় সংবিধান অনুযায়ী।
এক্ষেত্রে চাইলে রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার অথবা রাজ্যপাল কেউই তাঁকে এই পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে না। তাঁকে সরানোর একমাত্র পদ্ধতি রাজ্যসভা এবং লোকসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে ইমপিচমেন্ট করে। ফলে এই নিয়ে কোনও সংকট তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, "রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে একমাত্র ছুটি নেওয়ার সময় রাজ্যপালের অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়া কোনও কিছুতেই তিনি রাজ্যপালের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন ৷ এমনকী যে একথা বলা হচ্ছে রাজ্যপাল ডেকেছিলেন, যাননি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। একটা কথা বলে দেওয়া দরকার এক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজ্যপালের ডাকে যেতেই হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কাজেই এই নিয়ে অমূলক আশঙ্কা করা হচ্ছে।"
আরও পড়ুন: মানুষের একফোঁটাও রক্ত ঝরলে দায় কমিশনের, কড়াবার্তা রাজ্যপালের
রাজ্যের বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিস মৈত্রকেও এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি বলেন, "সাংবাদিক হিসাবে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এই ঘটনা সম্ভবত এবার প্রথম ঘটল। তাঁকে এই পদ থেকে সরাতে গেলে বিচারপতিদের অপসারণের প্রক্রিয়া যেমন একইভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকেও অপসারণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়াকে বাদ দিয়ে এমনটা করা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার গোটা বিষয়টা মেনে নিয়ে ছেড়ে দিলেন তাহলে এ নিয়ে কোন সমস্যা নেই। তবে উনি যদি আদালতে যান তাহলে এই নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে।"