কলকাতা, 27 সেপ্টেম্বর: হাতেগোনা আর মাত্র কটা দিন, তারপরেই পিতৃপক্ষের অবসানে সূচনা হতে চলেছে দেবীপক্ষের । বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো আসন্ন । আগমনীর বার্তা বইছে আকাশে বাতাসে । শাস্ত্র মতে দেবীর আগমন এবং গমন ইঙ্গিতবাহী । এর ওপরে নির্ভর করে আগামী দিনে কি কি ধরনের প্রভাব পড়বে মানবজীবনে । দেবী দুর্গা কোন বাহনে আসছেন এবং কোন বাহনে ফিরে যাচ্ছেন তার প্রভাব পড়ে সমাজ জীবনে । শাস্ত্রমতে দেবী মোট চারটি বাহনে মর্তে আসেন । নৌকা, ঘোটক, গজ ও দোলা । প্রতি বছরই দেবী একটি বাহনে আসেন এবং আরেকটি বাহনে ফিরে যান । প্রত্যেকটি বাহনের পৃথক পৃথক অর্থ রয়েছে ।
এবছর দেবীর আগমন ঘোটকে এবং গমন দোলায় , যা শাস্ত্রমতে বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ । বর্তমান সময়ে যে পরিস্থিতি রয়েছে তাতে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এই বিষয়টি । গোটা বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের দেশও লড়াই করছে করোনা মহামারির সঙ্গে । তার উপর নেমে আসছে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় । একের পর এক ঘূর্ণিঝড় তছনছ করে দিচ্ছে মানব জীবনকে । শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত অরিত্র ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ঘোড়ায় আগমন শুভ নয় । দেবীর ঘোড়ায় আগমন হলে ছত্রভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । যে যেখানে রয়েছেন, সেখান থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে অন্য স্থানে চলে যেতে হবে । ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । রয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা । যুদ্ধ পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে । খরা বা বন্যার মত দুর্যোগের সম্ভাবনাও রয়েছে । এবছর দেবী গমন করবেন দোলায় । দোলায় গমন খুবই উদ্বেগের বলে জানিয়েছেন তিনি । কারণ দেবীর দোলায় গমন হলে দেশে মড়কের আশঙ্কা থাকে । একেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে অগুনতি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে । এরপর করোনার তৃতীয় ঢেউ আসন্ন । সেই পরিস্থিতিতে দেবীর দোলায় গমন উদ্বেগের । শাস্ত্রমতে দেবী কোন বাহনে এলে এবং কোন বাহনে গেলে কি কি হতে পারে তা বলা হয়েছে । যেমন দেবী গজে আগমন ও গমন হলে ধরিত্রী শস্য-শ্যামলা অর্থাৎ ফুলে-ফলে ভরে ওঠে । ঘোটকে আগমন ও গমন হলে ছত্রভঙ্গ পরিস্থিতি তৈরি হয় । দেশের যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয় । সঙ্গেই রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ে । নৌকায় আগমন ও গমন হলে চাষবাসের বৃদ্ধি হয় তবে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে । দেবীর আগমন বা গমন দোলায় হলে দেশে মহামারী ভূমিকম্প খরা বা মহামারীর আশঙ্কা তৈরি হয় । বহু মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে ।
আরও পড়ুন : chandrakona dhaki : মায়ের কৃপায় শেষ মুহূর্তে হয়তো আসবে ডাক, আশায় চন্দ্রকোণার ঢাকিরা
শাস্ত্রমতে দেবী সপ্তাহের কোন বারে আসছেন ও কোন বারে ফিরে যাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে দেবীর বাহন । সপ্তমী ও দশমী যদি রবিবার হয় তাহলে দেবী গজে অর্থাৎ হাতিতে আসবেন । যদি সপ্তমী শনিবার বা মঙ্গলবার হয় তাহলে দেবী ঘোটক অর্থাৎ ঘোড়ায় আসবেন । আবার যদি বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার সপ্তমী হয় তাহলে দেবী আসবেন দোলায় । আর বুধবার সপ্তমী বা দশমী হলে দেবী আসবেন নৌকায় । এই ছক অনুযায়ী দেবীর আগমন এবং গমনের বাহন নির্বাচন করা হয় ।
শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত অরিত্র ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে একমাত্র দেবীকে সন্তুষ্ট করেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব । নিয়মিতভাবে দেবীর পুজো-অর্চনা করতে হবে । নিজেদের জীবনধারায় বদল আনতে হবে । ছল-চাতুরি, কপটতা ছেড়ে সৎ চরিত্রবান ও নিষ্ঠাবান হয়ে উঠতে হবে । সৎভাবে জীবনযাপন করতে হবে ৷ তবেই এই বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ।