কলকাতা, 18 সেপ্টেম্বর : লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্ম পূরণ করতে জেলায় জেলায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো ৷ তার পরও রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ অনেকের মনেই এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।
এ প্রসঙ্গে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "সাধারণ মানুষের জন্য কোনও উন্নয়ন প্রকল্পে আমাদের আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে মানুষকে খুশি করার রাজনীতি করছেন তাতেই আপত্তি বামেদের । এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। রাজ্য সরকার এই প্রকল্প সফল ভাবে চালাতে গিয়ে রাস্তা তথা পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বরাদ্দ করা অর্থে কাটছাঁট করছে । আর এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের দেউলিয়া রাজনীতি প্রকাশ্যে চলে আসছে ৷"
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে উন্নয়নের থেকে অনুদান বেশি প্রিয় । তাঁর কথায়, "যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকার সাধারণ মানুষকে হাত খরচ দিতে গিয়ে খরচ করছে এই অর্থ যদি পরিকাঠামো ক্ষেত্রে খরচ করা হত তাতে রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ত ৷"
কংগ্রেস নেতা অমিতাভ মজুমদার বলেন যে তাঁরা সাধারণ পিছিয়ে পড়া মানুষকে অর্থ সাহায্যের বিরোধী নন । কিন্তু যেভাবে রাজ্য সরকার পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বরাদ্দ কাটছাঁট করে সেই টাকা দিয়ে মহিলাদের হাতখরচ দেওয়ার চেষ্টা করছে তা সমর্থনযোগ্য নয় । তিনি আরো বলেন, সরকার যেকোনও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নিলে কংগ্রেস সব সময় তার পাশে থেকেছে । এবং আগামীতেও থাকবে । কিন্তু এই ডোল পলিটিক্স আদৌও কতটা মহিলাদের অগ্রগতিতে সহায়ক হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে । সে কারণেই তাঁদের বিরোধিতা ।
যদিও রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধীদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় । তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তাপস রায় বলেন যে গণতন্ত্রে জনগণ শেষ কথা বলে । তাঁর কথায়, "এই প্রকল্প আদৌও মহিলাদের অগ্রগতির জন্য কতটা সহায়ক হবে তার প্রমাণ এর প্রতি সাধারণ নিম্নবিত্ত মহিলাদের আগ্রহ । মুখ্যমন্ত্রী যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা প্রমাণ করেছে বাংলা মেয়েরাই । যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, তাঁরা কি এই জনমতকে অস্বীকার করতে চাইছেন?"
এই প্রকল্প প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার, রাজা গোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন যে ডোল পলিটিক্স কখনওই উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না । তাঁর মতে, গত কয়েক দশকে প্রায় প্রত্যেক রাজনৈতিক দল কমবেশি এই রাস্তায় হেঁটেছে । "এই কাজের জন্য শুধু তৃণমূল কংগ্রেসকে দোষ দিলে চলবে না। সমস্ত রাজনৈতিক দলকে এই বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে। তবেই পরিবর্তন আসবে। দেখুন রাজনৈতিক দল একদিকে সমালোচনা করে অন্যদিকে নিজেরাও একই কাজ করে। কাজেই সে দিক থেকে সকলেই একই দোষে দোষী," তিনি বলেন ।
এদিকে এ প্রসঙ্গে অর্থনীতির বিশিষ্ট শিক্ষক, প্রবীর কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন যে ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় যে কোনও দান প্রকল্পের শিবিরে মানুষের ভিড় হবেই । "তাই লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো শিবিরে যে ভিড় হবে সেটা নতুন কিছু নয় । এটাও ঠিক, যে কোনও সরকারকে কিছু কল্যাণমূলক প্রকল্প হাতে নিতেই হবে । কিন্তু যখন সরকারি নীতি এবং রাজনীতি যখন শুধুমাত্র দান প্রকল্প নির্ভর হয়ে যায় তখনই হয় অর্থনীতির সর্বনাশ । পশ্চিমবঙ্গের হয়েছে ঠিক একই অবস্থা । শুধুমাত্র দানপ্রকল্প নির্ভর হতে গিয়ে অর্থনীতি এবং শিল্পায়নের দিকটা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে । ফলে শিল্প আসছে না এবং চাকরি বা বিকল্প কর্মসংস্থানের পথও খুলছে না," তিনি বলেন ।
এই সংক্রান্ত খবর : লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা নিতে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে মহিলাদের ভিড়
বিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সুচিস্মিতা বাগচী সেন মনে করেন যে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পে চলতে থাকুক । তিনি বলেন, "কিছু দরিদ্র শ্রেণির মহিলাদের হাতে অন্তত কিছু টাকা তো আসবে । কিন্তু একই সঙ্গে সরকারের উচিত রাজ্যের মেয়েদের রোজগারের পথ সুগম করার জন্য প্রথমে তাঁদের বিভিন্ন কাজের ট্রেনিং দিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে কাজে লাগানো । একই সঙ্গে এই মেয়েদের তৈরি বিভিন্ন জিনিস যাতে তাঁরা সঠিকভাবে এবং সঠিক জায়গায় মার্কেটিং করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা ৷"