কলকাতা, 12 অক্টোবর : অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জওয়ানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে BSF ৷ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগে ধৃত কর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে জানাল বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স ৷ প্রয়োজনে কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে এই বিষয়ে তথ্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা ৷ এই অপহরণের ঘটনায় সার্ভিস রাইফেল অভিযুক্ত BSF কর্মী আমির হোসেন ব্যবহার করেছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে ৷ কলকাতা পুলিশের কমব্যাট ফোর্সের কনস্টেবলের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় তদন্ত হবে ৷ রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর অভিযুক্ত কর্মীর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে সূত্রের খবর ৷
বাহিনীর কোনও সদস্য যদি কোনও অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ে কিংবা গ্রেপ্তার হয়, সেক্ষেত্রে বিভাগীয় তদন্ত হওয়াটাই নিয়ম ৷ অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ গুরুতর ৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে কোনওভাবেই জওয়ানকে ছাড়া হবে না ৷ অন্যদিকে, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা সাম্প্রতিক এক ক্রাইম মিটিংয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়া পুলিশকর্মীদের রেওয়াত করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন ৷ মুচিপাড়া থানা এলাকায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও ডাকাতির ঘটনায় কলকাতা পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর ও এক কনস্টেবলের নাম জড়িয়েছিল ৷ ইতিমধ্যেই তাদের গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ৷ সেই মামলায় চার্জশিটও জমা পড়েছে ৷
প্রকাশ্যে কলকাতার ই-মলের সামনে থেকে বৃহস্পতিবার একজনকে অপহরণ করা হয় । একটি বোলেরো গাড়িতে জোর করে একজনকে তুলে নিয়ে যেতে দেখে 100 নম্বরে পুলিশকে ফোন করেন এক ব্যক্তি । সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয় পুলিশ । ই-মলের সামনেই রয়েছে ট্রাফিক বিভাগের CCTV ক্যামেরা । দ্রুত সেই ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে চিহ্নিত করা হয় গাড়িটি । আর সেই সূত্র ধরেই বেরিয়ে আসে পুরো গল্প । ঘটনায় তিন পুলিশকর্মী, এক BSF জওয়ান সহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । অভিযোগ, এই অপহরণে নিজেদের সরকারি পরিচয় এবং সার্ভিস আর্মসের অপব্যবহার করেছে ওই চারজন ।
আরও পড়ুন : ই-মলের সামনে অপহরণ, পুলিশ ও BSF কর্মী সহ গ্রেপ্তার 7
লালবাজার সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটে অপহরণের ঘটনা । জানা গেছে, সৌমেন বসু নামে এক ব্যক্তি সরকারি চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েক কোটি টাকা তুলেছিল বেকার যুবকদের কাছ থেকে । বারবার বলা সত্ত্বেও সৌমেন টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছিল না । প্রতারিতদের মধ্যে একজন অভিজিৎ ঘোষ । তার দাবি, চাকরির জন্য সৌমেনকে এক কোটি টাকা দিয়েছিল সে । বারবার বলা সত্ত্বেও টাকা ফেরায়নি সৌমেন । তখন অভিজিৎ অপহরণের ছক কষে । উদ্ধার হওয়া টাকার ৪০ শতাংশ দেওয়ার কথা বলে অভিজিৎ দলে নেয় তিন পুলিশকর্মী এবং এক BSF জওয়ানকে । ওই তিন পুলিশকর্মীর মধ্যে দু'জন কলকাতা পুলিশের কমব্যাট ফোর্সের সদস্য । তাদের নাম শ্যামল মণ্ডল এবং জাকির খান । অন্যজন মহম্মদ হানিফ । তিনি রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য । এই দলে যোগ দেয় BSF জওয়ান আমির হোসেন । দলে ছিল মনজারুল হক নামে আরও একজন । এই দলটি অভিজিতের নেতৃত্বে ই-মলের সামনে থেকে অপহরণ করে সৌমেনকে ।
কলকাতা পুলিশ ওই বোলেরো গাড়ির নম্বর প্লেট দেখে বুঝতে পারে সেটি বীরভূমের । সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় বীরভূম জেলা পুলিশকে । বীরভূমের জেলা পুলিশ এই সূত্র ধরে গতরাতে নাকা চেকিং চালায় । আর তাতেই উদ্ধার করা হয় অপহৃত সৌমেনকে । ঘটনায় গাড়ির চালকসহ 7 অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে লাভপুর থানার পুলিশ । তাদের আনা হয় বউবাজার থানায় । ঘটনায় সৌমেনের বিরুদ্ধেও একটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ । মূলত চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা চক্র চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ।
ধৃতদের জেরা করে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ । জানা গেছে, এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল দুর্গাপুজোর আগেই । দুর্গাপুজোর সময় পুলিশের নজরদারি অনেক বেশি থাকে বলে, ঠিক হয় অপহরণ করা হবে দুর্গাপুজো মিটে গেলেই । সেই মতোই অপহরণ করা হয় দ্বাদশীর দিন ।