কলকাতা, 26 মে : আমফানে বিধ্বস্ত বেশ কয়েকটি এলাকায় পানীয় জল ও বিদ্যুত পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে । নবান্ন ও কলকাতা পৌরনিগম সূত্র খবর এমনই । আজ কলকাতা পৌরনিগমের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি মোকবিলায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে । আশা করা হচ্ছে, আজ রাত বা আগামীকাল সকালের মধ্যেই সমস্ত উপড়ে পড়া গাছ সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে দেওয়া হবে । জল নিয়ে যে সমস্য়া দেখা দিয়েছিল, তাও দ্রুত মিটে যাবে ।
এবিষয়ে কলকাতা পৌর নিগমের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, "আমাদের কাজ প্রায় শেষ । বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার বিষয়টি দেখছে CESC। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছে, যে এলাকাগুলিতে এখনও বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে সমস্যা রয়েছে, আগামীকাল সকালের মধ্য়েই তা সমাধান হয়ে যাবে ।"
বুধবার ঘূর্ণিঝড় আমফানের জেরে কলকাতা সহ রাজ্যের বেশ কয়েকি জেলা ব্য়াপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । কলকাতার একাধিক জায়গায় গাছ উপড়ে রাস্তার মাঝে পড়ে । বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায় । লাইট পোস্ট ভেঙে পড়ে । এর জেরে শহরের নানা এলাকায় জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে সমস্য়া দেখা দেয় । কলকাতার নানা এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাঁচ-ছ'দিন হয়ে গেছে । কিন্তু এখনও অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি । ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ ও জল পরিষেবা স্বাভাবিক করার দাবিতে শহরের নানা প্রান্তে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মানুষজন । দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া ও বেহালায় উপড়ে পড়া গাছের ডাল দিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন এলাকাবাসী । গড়িয়ার এক বাসিন্দা বলেন, "ছ'দিন হয়ে গেছে । কিন্তু এখনও আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই । জানি না কখন আসবে । খুব সমস্য়ায় রয়েছি ।" গড়িয়া, বেহালা ছাড়াও নানা এলাকায় CESC-র ভূমিকা নিয়ে সরব হয় মানুষজন । তাঁদের অভিযোগ এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরাতে কার্যত ব্যর্থ CESC ।এমনকি CESC-র কোনও কর্মকর্তা এখনও পর্যন্ত এলাকাগুলিতে গিয়ে খোঁজ খবর নেননি । বেহালার এক বাসিন্দার বক্তব্য, "আমাদের সমস্যা সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে জানিয়েছি । কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও সাহায্য় করেননি । শুধু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে । কাজ এগোয়নি ।" যাদবপুর, সন্তোষপুর এলাকায়ও একই অবস্থা । সবচেয়ে বেশি সমস্য়ায় পড়েছেন মহিলা, বয়স্ক ও শিশুরা । ভুগছেন রোগীরাও ।
কলকাতা ছাড়াও নানা জেলায় বিক্ষোভ শুরু করেছেন মানুষজন । হুগলির শেওড়াফুলিতে রাজ্য়ের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে GT রোড অবরোধ করে স্থানীয়রা । CESC-র ব্যর্থতার বিরুদ্ধে সরব হন সাধারণ মানুষ । পরে ঘটনাস্থানে পৌঁছায় পুলিশ । কংগ্রেস নেতাকে অবরোধ ওঠানোর জন্য আবেদন জানায় তারা । বোঝানোর চেষ্টা করে । কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন আবদুল মান্নান । তিনি বলেন, "যতক্ষণ না পর্যন্ত CESC-র কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি খতিয়ে না দেখেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এলাকা ছেড়ে যাব না । " এলাকার এক বিক্ষোভকারী বলেন, "ডায়াবেটিস রোগীরা ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল । তাঁদের প্রতিদিনের ডোজ় নিতে হয় । ইনসুলিন ফ্রিজে রাখতে হয় । কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজ কাজ করছে না । আর এর জেরে সমস্য়ায় পড়েছেন ডায়াবেটিস রোগীরা । " শুধু ডায়াবেটিস নয় অন্যান্য রোগে আক্রান্তরাও সমস্যায় রয়েছেন ।
শনিবারই রাজ্য়ের আবেদনে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে পরিস্থিতির মোকাবিলায় কাজ শুরু করে সেনা । গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবার প্রায় 80 শতাংশই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরেছে । পাশাপাশি তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত রাজ্য়কে ফের ছন্দে ফেরাতে জনগণের সহযোগিতার কথাও বলেন তিনি । তবে, জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি জায়গায় মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে । আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তা চালু হয়ে যাবে ।