কলকাতা, 28 ফেব্রুয়ারি: রাজ্যপাল পদে বসার পর থেকেই সিভি আনন্দ বোসের (Governor CV Ananda Bose) সঙ্গে নবান্নের সখ্যতা ছিল চোখে পড়ার মতো ৷ কিন্তু নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরানোর ইস্যু থেকে নিশীথ প্রামাণিকের (Nisith Pramanik) কনভয়ে হামলার পর রাজভবনের কড়া বিবৃতির পর সেই সুসম্পর্কে ফাটল ক্রমশ চওড়া হচ্ছিল ৷ ফলে প্রশ্ন উঠছিল, রাজভবনের আনন্দ জমানায় কি আবার ধনকড় পর্ব ফিরে আসতে চলছে ! তবে মঙ্গলবার সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Education Minister Bratya Basu) ৷
এদিন রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বৈঠক হয় ৷ সেই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি ৷ ব্রাত্য় বসুর কথায়, "আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি যে অতীতের পুনরাবৃত্তির কোনও সুযোগ নেই ।" রাজ্যপালও এদিন সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতার পক্ষেই সওয়াল করেছেন ৷
মাস কয়েক হল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের দায়িত্বে এসেছেন আনন্দ বোস ৷ কেরালার এই আমলার আগে কয়েক মাস অস্থায়ী রাজ্যপালের দায়িত্বে ছিলেন লা গণেশন ৷ তার আগে প্রায় তিন বছর বারবার রাজভবন ও নবান্নের সংঘাতের ছবি সামনে এসেছে ৷ সেই সময় রাজ্যপাল ছিলেন এখনকার উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড় (Vice President Jagdeep Dhankhar) ৷ বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি রাজ্য সরকারের সমালোচনা করতেন ৷ বিধানসভায় পাস হওয়া বিলও তাঁকে ফেরত পাঠাতেও দেখা গিয়েছে ৷
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Mamata Banerjee) তাঁর সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্যে ৷ ধনকড়ের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও (PM Narendra Modi) দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি ৷ এমনকী, টুইটারেও রাজ্যপালকে ব্লক করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) তরফে রোজই ধনকড়ের বিরুদ্ধে বিজেপির (BJP) হয়ে কাজ করার অভিযোগ তোলা হত ৷
সেই অভিযোগ রাজভবনের আনন্দ পর্বে একেবারেই চলে গিয়েছিল ৷ বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা শোনা গিয়েছে রাজ্যপালের মুখে ৷ রীতি মেনে তিনি বাজেট বক্তৃতাও করেছেন বিধানসভায় ৷ যা নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে একাধিক বিজেপি নেতাকে ৷
ওই পরিস্থিতিতে আচমকাই সক্রিয় হন রাজ্যপাল ৷ প্রধান সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে অপসারিত করেন ৷ দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিবৃতি দেন ৷ ইতিমধ্যে গত শনিবার কোচবিহারের দিনহাটায় আক্রান্ত হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ৷ তার পর রাজ্যপাল কড়া বিবৃতি দেন ৷ ফলে রাজভবনের সঙ্গে নতুন করে তৃণমূলের সংঘাত বাঁধে ৷ তৃণমূলের নেতারা রাজ্যপালকে বিজেপির ক্যাডারও বলেন ৷
ফলে কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছিল যে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত সেই ধনকড় জমানার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে ৷ তবে তা একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ৷ অন্যদিকে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, প্রশাসন অবিরাম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায় ৷ সংশোধন ও ভারসাম্য বজায় রাখতে হয় ৷ চলার পথেই কখনও সংশোধন করতে হয় ৷ তবেই উন্নতি হয় ৷
আরও পড়ুন: বিতর্কের মাঝেই সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতার বার্তা রাজ্যপালের