কলকাতা, 12 এপ্রিল: কয়লা চুরি, গরু চুরি, চাকরি চুরি-সহ একাধিক দুর্নীতি ইস্যুতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে কৌশলে ফাটল ধরাতে চাইছে বিজেপি ৷ মঙ্গলবার রাজ্য কমিটির বৈঠক থেকে এমনই বার্তা দিল সিপিএম নেতৃত্ব ৷ পাশাপাশি বিজেপির টোপ যাতে কেউ না গেলে সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে বৈঠক থেকে ৷
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে বলে দাবি বিরোধীদের। কিন্তু সেই ঐক্যবদ্ধতায় ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে আরএসএস এবং বিজেপি। সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠকে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। 'নো ভোট টু তৃণমূল'-এর কথা বলে বাম-সহ অন্যান্য বিরোধীদের টোপ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। যা নিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের শীর্ষ নেতৃত্ব মুজাফ্ফর আহমেদ ভবনে বসেই উপস্থিত জেলা নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। সিপিএম নেতাদের সাফ বার্তা, 'কোনভাবেই ওই টোপ' গেলা চলবে না।"
শাসক দলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধতার লড়াই জোরদার করার পাশাপাশি বিজেপি-আরএসএসের কৌশলকে দুরমুষ করে দেওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়েছে বৈঠক থেকে। আলিমুদ্দিন সূত্রে দাবি, মঙ্গলবারের ওই বৈঠকে বহু জেলার নেতা দাবি করেছে মূলত আদিবাসী জনজাতি এবং প্রান্তিক মানুষদের কাছে টানার চেষ্টা করছে আরএসএস। মন্দির বা অন্য কোন ধর্মীয় বিষয়কে উসকে দিয়ে গ্রামীণ এলাকার মানুষকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। অত্যন্ত সতর্কভাবে আরএসএসের এই কৌশল মোকাবিলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বৈঠকের শুরুতেই রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ব্লক এবং পঞ্চায়েত স্তরে আন্দোলন জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। একইভাবে ভোটের সময় বুথ আগলে রাখতে মজবুত বাহিনী প্রস্তুত রাখতেও বলেছেন। বৈঠকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক দাবি করেছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ দেখে এটা নিশ্চিত আগামী কিছু দিনের মধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলিও জোর কদমে তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সিপিএমের দাবি, ইতিমধ্যেই রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের 70 শতাংশ আসনেই প্রার্থী ঠিক করা হয়ে গিয়েছে তাদের। এক কথায় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের প্রায় সবকটি আসনেই প্রার্থী বাছাই করা হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের লেখা চিঠি দেখতে চাইলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়
সূত্রের খবর, এদিন সিপিআইএম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠকে জেলা নেতারা রাজ্য সম্পাদক সেলিম ও পার্টির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কাছে পেশ করা রিপোর্টে স্পষ্ট জানিয়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য জেলা স্তরে দল সম্পূর্ণ প্রস্তুত ৷ আঞ্চলিক, স্থানীয় বা বুথ স্তরে যাঁদের ভাবমূর্তী স্বচ্ছ এবং এলাকায় সুনাম আছে এমন ব্যক্তিদেরই প্রার্থী হিসাবে ঠিক করা হয়েছে বলেও খবর। পার্টির সদস্য পদ নেই এমন মানুষদেরও বেছে নেওয়া হয়েছে এবার। বিশেষ করে, যাঁরা তৃণমূল বিজেপি বিরোধী এবং এলাকার মানুষের কাছে যাঁদের গ্রহণ যোগ্যতা আছে তেমন ব্য়ক্তিদেরও বাছা হয়েছে দলের তরফে। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা জানান, বিজেপির কারও সঙ্গে জোট বাঁধার কোনওরকম আকাঙ্খা নেই। তিনি বলেন, "সিপিএমের সঙ্গে জোট বাঁধার কোনও প্রশ্নই ওঠেনা। আসল কথা হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা থেকে সরানো দরকার। আর 'নো ভোট টু মমতা', মানে হচ্ছে আখেরে সেই ভোটগুলো বিজেপির কাছেই আসবে ৷