CPIM: রাজ্যপালকে আচার্য পদ থেকে সরানো বাংলায় বেঠিক আর কেরালায় সঠিক মনে করছে সিপিএম - মহম্মদ সেলিম
পশ্চিমবঙ্গ আগেই রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালগুলির আচার্য পদ থেকে সরাতে বিল পাস করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার ৷ এবার সেই পথেই হাঁটল কেরালার সরকার ৷ কিন্তু বঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করলেও কেরালার পাশে দাঁড়িয়েছে বঙ্গ সিপিএম (CPIM) ৷ তাঁদের এই অবস্থান আসলে দ্বিচারিতা বলে কটাক্ষ তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) ৷
কলকাতা, 11 নভেম্বর : পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপালকে (Governor) আচার্য পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছিল সিপিএমের (CPIM) বঙ্গ ব্রিগেডকে । তারাই আবার কেরালার রাজ্যপালকে আচার্য (Chancellor) পদ থেকে সরানো নিয়ে সমর্থন করছে । প্রশ্ন উঠছে, এটা কি রাজনৈতিক দ্বিচারিতা নয় ?
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীকে এই পদে বসানো হবে । সেই মতো বিল আনা হবে রাজ্য বিধানসভায় এবং এক্ষেত্রে পুঞ্জি কমিশনের সুপারিশকে হাতিয়ার করে সরকার পক্ষ । কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া বিরোধিতা করতে দেখা যায় এ রাজ্যের সিপিএমকে ।
সেই সময় ইটিভি ভারতকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর থেকে বেশি শিক্ষিত আর কে আছে, নিরলস সাহিত্য-সাধনার জন্য পুরস্কৃত করা হয় । মুখ্যমন্ত্রীর সময় বেশি ৷ তবে কাজ কম পড়ে গিয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমি দফতরের মন্ত্রী, উদ্বাস্তু দফতরের মন্ত্রী, সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী । শিক্ষা দফতরের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতেই মানুষ বুঝে গিয়েছে সেখানে 1500 কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে । এই অবস্থায় এত কিছুর পাশাপাশি তিনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির (University) আচার্য হয়ে বসেন তাহলে তো সোনায় সোহাগা । এই সিদ্ধান্তে বাংলার সামাজিক জীবন ও শিক্ষা ক্ষেত্র কলুষিত করা ছাড়া অন্যকিছু হবে বলে আমি মনে করি না ।’’
অথচ এখন সিপিএম নেতাদের গলাতেই অন্য সুর । এখন সিপিএম বলছে, তারা প্রথম থেকেই রাজ্যপাল পদটা তুলে দেওয়ার পক্ষে । অতএব রাজ্যপাল পদ হল, সাদা হাতি পোষার সমান। কাজেই কেরালা যে পথে হাঁটছে, তা সঠিক ।
কিন্তু রাজনৈতিক মহল প্রশ্ন তুলছে, যা কেরালার জন্য সঠিক, তা বাংলার জন্য বেঠিক হয় কী করে ? তাহলে কি এর পেছনে রয়েছে রাজনীতি ? বিরোধিতার জন্যই কি তবে বিরোধিতা ? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফোন করা হয় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে (Sitaram Yechuri) ৷ একাধিকবার তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে । হোয়াটসঅ্যাপেও দেননি কোনও উত্তর । বহু কষ্টে যদিও বা এক একবার পাওয়া যায়, প্রশ্ন মাত্রই ফোন রেখে দেন তিনি একটি শব্দ খরচ করেননি । সিপিএমের নেত্রী বৃন্দা কারাত এখন হিমাচল প্রদেশে ভোটের প্রচারে ৷ তিনি ফোন ধরে প্রশ্ন শুনেছেন ৷ কিন্তু ভোটের কাজের ব্যস্ততার কথা বলে উত্তর দেননি ৷
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Salim) প্রথমে ফোনে কোচবিহারে সফররত বলে জানালেও, পরে সাংবাদিক সম্মেলনে কার্যত ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ৷ কেরলের সঙ্গে বাংলাকে জুড়ে দেওয়ায় তিনি অখুশি । এতে আবার সংবাদমাধ্যমের মালিকদের মমতা ভজনাও খুঁজে পেয়েছেন তিনি ।
পরে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে আচার্য পদ থেকে সরানো কী, সিপিএম স্বাধীনতার পর থেকেই বলে আসছে রাজ্যপাল পদটাকেই তুলে দেওয়া হোক । রাজভবন তো বাড়তি । এখন কি রাজা আছে নাকি ! ব্রিটিশ জামানায় লন্ডন থেকে শাসন চালানো হতো তার প্রতিনিধিরা থাকতেন রাজভবনে । এখনও কেন্দ্রে যে সরকারই থাকুক, তার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন রাজ্যপাল । আর বাংলার রাজ্য সরকার কি আচার্য পদ তুলে দিয়েছেন ! বরং জগদীপ ধনকরকে উপরাষ্ট্রপতি করার জন্য হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে নিয়ে দার্জিলিঙে মিটিং করেছেন । কেরলে রাজ্যপাল নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে । রাজ্যপাল অমিত শাহ বা মোদির এজেন্ট হতে পারেন । তবে তিনি চলেন জনগণের টাকায় । তিনি মানুষের এজেন্ট নন । তা তিনি যে রাজ্যের রাজ্যপালই হোন না কেন !’’
এদিন এই নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি তিনি । সেলিম বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কি গভর্নরের বিরুদ্ধে ! তিনি তো তামিলনাড়ু গিয়েছিলেন রাজ্যপালের ভাইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ।’’
এদিকে সিপিএমের এই বক্তব্যকে চরম দ্বিচারিতা বলছেন রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) নেতা তথা শাসকদলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ । তিনি বলেন, ‘‘এই দ্বিচারিতার জন্যই রাজ্যের মানুষ সিপিএমকে প্রত্যাখ্যান করেছে । আজ সিপিএম কেরল নিয়ে যে কথাগুলি বলছে, গত জুন মাসে সে কথাগুলোই তো বলেছিলাম আমরা । কিন্তু তখন তার বিরোধিতা করেছিল বামেরা । আর এখন কেরালা বাংলাকে অনুসরণ করছে, তাতে পূর্ণ সমর্থন আছে এ রাজ্যের নেতাদের । তাহলে এর চেয়ে বড় দ্বিচারিতা আর কি হতে পারে !’’
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করতে সংশোধনী আনছে সরকার, বিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়