কলকাতা, 5 জানুয়ারি: অঙ্কিতা অধিকারীকে (Ankita Adhikary) বরখাস্ত করে সেই জায়গায় স্কুল শিক্ষিকার চাকরি ববিতা সরকারকে (Babita Sarkar) দিয়েছিল আদালত ৷ কিন্তু ববিতা কি ওই চাকরি পাওয়ার যোগ্য ? অনামিকা রায় নামে এক চাকরিপ্রার্থীর মামলার জেরে সেই প্রশ্ন উঠেছে ৷ উত্তর এখনও মেলেনি ৷ তবে তার আগেই আদালতের তরফে ববিতাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে অঙ্কিতার কাছ থেকে তিনি যে 16 লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন, তা আলাদা করে অন্য অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে ৷
তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর (Paresh Adhikary) মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী ৷ তাঁর চাকরি পাওয়া নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ববিতা সরকার ৷ অভিযোগ ছিল, ববিতাকে বঞ্চিত করে চাকরি দেওয়া হয়েছে অঙ্কিতাকে ৷ আদালতের নির্দেশে চাকরি গিয়েছিল অঙ্কিতার ৷ বেতনের সব টাকা তাঁকে ফেরতও দিতে হয় ৷ পরে আদালতের নির্দেশেই ওই স্কুলে চাকরিতে বহাল হন ববিতা ৷ অঙ্কিতার জমা দেওয়া সেই টাকা পান তিনি ৷ যার পরিমাণ প্রায় 16 লক্ষ ৷
এবার ববিতার চাকরি নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ৷ এই নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন অনামিকা রায় ৷ তাঁর দাবি, ববিতা নন, চাকরির প্রকৃত দাবিদার তিনিই । বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ৷
সেখানে ববিতাকে বিচারপতির নির্দেশ, ওই টাকা তিনি যেন আলাদা করে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখেন ৷ কারণ, যদি মামলার রায় বিপক্ষে যায়, তবে পুরো টাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা করতে হবে ববিতাকে ৷ আগামী সোমবার এই মামলার এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৷ সেখানে এই নিয়ে আরও অনেক কিছু স্পষ্ট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
কিন্তু কেন ববিতার চাকরি নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ করলেন অনামিকা ? কী তাঁর দাবি ? অনামিকার দাবি, ফর্ম পূরণের সময় ববিতা লিখেছিলেন যে তিনি স্নাতক স্তরে 800-র মধ্যে 440 পেয়েছেন ৷ শতাংশের হিসাবে 60 শতাংশ নম্বর পেয়েছেন । যদিও হিসাব করে দেখা যাচ্ছে যে শতাংশের হিসাবে এটি 60 শতাংশের কম ।
অনামিকার আরও দাবি, কেউ যদি 60 শতাংশ বা তার বেশি পান, তাহলে তিনি 8 নম্বর পাবেন, আর কেউ যদি 45 শতাংশ থেকে 60 শতাংশ নম্বর পান, তাহলে তিনি 6 নম্বর পাবেন । ববিতাকে 60 শতাংশ হিসেবে নম্বর দেওয়া হয়েছে ৷ তাই শিক্ষাগত যোগ্যতার হিসেবে তিনি 33 নম্বর পেয়েছেন ৷ তার ভিত্তিতে তাঁর মোট নম্বর 77 ৷
অনামিকার আরও দাবি, কিন্তু 60 শতাংশের কম নম্বর পাওয়ায় শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে ববিতার নম্বর হওয়া উচিত 31 ৷ কারণ, তিনি পেয়েছেন 8 ৷ পাওয়া উচিত 6 ৷ সেই হিসেবে ববিতার মোট নম্বর হওয়া উচিত 75 ৷ তাহলে ওই চাকরির যোগ্য দাবিদার ববিতা নন, তাঁর ওই চাকরি পাওয়া উচিত বলে দাবি অনামিকার ৷
ববিতা সরকারের আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘‘অঙ্কিতা অধিকারীর জায়গায় চাকরি পেয়েছেন ববিতা সরকার । সেই মামলা এখনও বিচারাধীন । কারণ, সিবিআই তদন্ত চলছে । এই পরিস্থিতিতে এই মামলায় অনুপ্রবেশ করেছেন অনামিকা রায় ।’’ ববিতার বক্তব্য, যখন এই বিষয়ে তদন্ত চলছে । এখনও তদন্ত সম্পূর্ণ হয়নি, সেই সময় অনামিকার মামলা গ্রহণযোগ্য নয় ।
অন্যদিকে অনামিকার আইনজীবীর বক্তব্য, হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্যে কেন ববিতা সরকারকে সুবিধা দেওয়া হল ? তার আবেদনই বাতিল করা উচিত ছিল । পাশাপাশি তাঁর স্নাতকের নম্বরে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে । তথ্য লুকোনো হয়েছে ৷ 2022 এর মে মাসে যখন মামলা গ্রহণ করা হয়, তখনই বলা উচিত ছিল নম্বর হিসাবে কোথাও ভুল হয়েছে । যখন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হয়, তারপর তিনি স্বীকার করেন যে হ্যাঁ তথ্য লুকোনো হয়েছে ।
আরও পড়ুন: মামলা করে চাকরি পেয়েছিলেন ! এসএসসি'র ভুলে এবার নয়া বিতর্কে ববিতা