কলকাতা, 5 ডিসেম্বর : কোরোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ হল গোরুপাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের । তাকে আজই নিজাম প্যালেসে জেরা করতে পারে সিবিআই । এনামুলের বিষয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না সিবিআই তদন্তকারীরা । কারণ গোরু পাচারকারী এনামুলের সাহায্যকারী কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালা এখনও পলাতক । সুযোগ দিলে এনামুল গা ঢাকা দিতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা । এদিকে আজ শুল্ক দপ্তরের কয়েকজন আধিকারিককেও ডেকেছে সিবিআই । টাকা লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যের জন্য তাঁদের ডাকা হয়েছে বলে খবর ।
গোরু পাচার কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এনামুলকে দিল্লিতে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। সেখানে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে যায় সে । পরে তাকে ফের জেরার জন্য ডেকে পাঠানো হয় নিজাম প্যালেসে । কিন্তু তখন তার কোরোনা টেস্টের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । তাকে ভরতি করা হয় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে । প্রসঙ্গত এই মামলায় আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে সতীশ কুমারকে । বিএসএফ-এর ওই কমান্ড্যান্ট গোরু পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ । গোরু পাচারের শিকড়ের সন্ধানে নেমে নিত্য নতুন তথ্য পাচ্ছে সিবিআই। নিজেদের হেপাজতে পাওয়ার পর বিএসএফ কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমারকে ম্যারাথন জেরা করছেন তদন্তকারীরা । সূত্র জানাচ্ছে, তাঁর কাছে তদন্তকারীরা জানতে চাইছেন, এই রাজ্য গোরু পাচারের টাকার ভাগ কারা পায়? তদন্তকারীরা মনে করছেন প্রশাসনের একাংশের যোগসাজশ ছাড়া ব্যাপকহারে গোরু পাচার সম্ভব নয় । পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কোনও প্রভাবশালী এই চক্রে জড়িত আছে কি না । সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন বড় মাপের গোরু পাচারের আগে বিএসএফ এর একশ্রেণির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হত পাচারকারীদের । তা রফা হত 35 থেকে 40 লাখ টাকায় । পাচারের আগে গোরুর গায়ে বিশেষ ধরনের রং লাগিয়ে দেওয়া হত । সেটাই ছিল সংকেত । চক্রে জড়িত থাকা বিএসএফ কর্মীদের ওই রং দেখিয়েই পাচারকারীরা অবলীলায় পাচার করত গোরু । তদন্তে এই ধরনের তথ্যই উঠে আসছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
গোরু পাচারের তদন্তে বিএসএফ সিবিআইকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করছে । তাদের ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে সিবিআই জানতে পেরেছে শুধুমাত্র এই রাজ্য নয়, গোরু পাচারের এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, অসম, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যের একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। মূলত এই রাজ্যগুলি থেকে আসে গোরু এবং মোষ । গোরু পাচারের মূল কেন্দ্র বীরভূম । সেখানেই ভিন রাজ্য থেকে গোরু এবং মোষ এনে রাখা হয়। বীরভূম পর্যন্ত সেগুলি আনা হয় বড় লরিতে । তারপর ছোটো গাড়িতে সেগুলি ছড়িয়ে দেওয়া হয় মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর 24 পরগনায়। তদন্তকারীদের প্রশ্ন এরাজ্য সহ ভিন রাজ্যের প্রশাসনের মদত ছাড়া এই জিনিস কীভাবে চলতে পারে ? দীর্ঘদিন ধরেই এই কারবার চলছে অথচ ওই রাজ্যগুলির পুলিশ বিষয়টি জানে না এটাও কি সম্ভব? তাছাড়া এরাজ্যে যেভাবে বীরভূম থেকে বিভিন্ন সীমান্ত লাগোয়া জেলায় গোরু নিয়ে যাওয়া হয়, তাতে সবটা প্রশাসনের নজরে আসা উচিত।