কলকাতা, 15 এপ্রিল: রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগের জন্য যে সার্চ কাম সিলেকশন কমিটি রয়েছে সেই কমিটির গঠনশৈলীতে রদবদল করা হয়েছে । সোমবার এই মর্মে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে রাজ্য সরকার । এর বিস্তারিত গেজেট নোটিফিকেশনও সামনে এসেছে । সার্চ কমিটিতে সরকারের এহেন পরিবর্তন সামনে আসার পরেই শিক্ষা মহলে উঠেছে বিতর্কের ঝড় ।
গেজেট নোটিফিকেশন অনুসারে, এবার থেকে এই সার্চ কমিটিতে থাকবেন আচার্যের প্রতিনিধি, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি ও উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রতিনিধি । লক্ষণীয় যে, এই নতুন তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বা সেনেটের মনোনীত কোনও প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি । আরও বলা হয়েছে, এই নয়া সার্চ কাম সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান হবেন আচার্যের প্রতিনিধি ।
এমনকি নতুন নিয়ম অনুসারে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কমিটিতে থাকবেন তিনজন প্রতিনিধি । উচ্চশিক্ষা দফতরের একজন প্রতিনিধি থাকবেন । তাই পাঁচ জনের কমিটিতে যদি তিনজনই রাজ্য সরকারির প্রতিনিধি হন সেক্ষেত্রে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে সরকারের মত, এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগ প্রক্রিয়া অথচ কমিটিতে থাকবে না সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রতিনিধি, বিষয়টি অনেককেই অবাক করেছে ৷
শিক্ষাবিদদের একাংশের মতে, উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ থাকবে রাজ্য সরকারেরই । বর্তমানে রাজভবনে পড়ে রয়েছে বিধানসভায় পাশ হওয়া আচার্য বিল ৷ যেখানে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্য পদে রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলা হয়েছে ৷ আগের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের মতো বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এখনও এই বিলে সাক্ষর করেননি ৷ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজভবনের কিছুটা দূরত্বও তৈরি হয়েছে ৷
তারই মাঝে, এবার রাজ্য সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে উপাচার্য নিয়োগের নিয়ম কানুন বদলে ফেলল । এই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন,"উপাচার্যের সার্চ কমিটি সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছে৷ আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে এই সার্চ কমিটি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইউজিসির প্রস্তাবিত সার্চ কমিটিকে অগ্রাহ্য করে । এটি একেবারে যে বেআইনি, শুধু তাই নয়, সার্চ কমিটি যাতে রাজনৈতিকভাবে রাজ্য সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে । আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।"
আরও পড়ুন: সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিই হোন আচার্য যিনি থাকবেন রাজনীতির ঊর্ধ্বে, দাবি কুটার
অন্যদিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মহারাজ চট্টোপাধ্যায় জানান, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি ও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রতিনিধি এই তিনটেই তো একই জিনিস । অর্থাৎ চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি এবং ইউজিসি এর প্রতিনিধি ছাড়া বাকি তিনজন একই জায়গা থেকে আসছে । এর ফলে অধ্যাপক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পড়ুয়াদের উপরে কিছুটা হলেও অনাচার হবেই ।