কলকাতা, 17 অগস্ট: ছাত্রমৃত্যুর পরেও যাদবপুরে জারি সিসিটিভি তরজা ৷ কর্তৃপক্ষ যখন হস্টেল ও ক্যাম্পাসে সিসিটিভি লাগানোর সিদ্ধান্তে অনড়, তখন সেই সিদ্ধান্তের ফের বিরোধিতায় ছাত্র সংগঠন এসএফআই ৷ অন্যদিকে, সিসিটিভি লাগানোর সমর্থনে সোচ্চার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ৷ সবমিলিয়ে সিসিটিভ তরজায় নতুন করে উত্তাপ বাড়ল যাদবপুরে ৷
প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুর পর এতদিনে টনক নড়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ৷ বৃহস্পতিবার একাধিক নয়া পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার সিসিটিভি লাগানোর বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ। বেশ কিছু জায়গায় সিসিটিভি লাগানো হবে বলেই জানান রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু।
তিনি বলেন," সিসিটিভি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের। তবে এখন সেটা সম্ভব নয় ৷ এমনকী, এখন উপাচার্য নেই। তাই আমরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গেটে সিসিটিভি বসবে ৷ ইতিমধ্যেই সিসিটিভির জন্য বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এসে পরিদর্শন করবে এবং কোথায় সিসিটিভি লাগানো যায় সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন । ক'টা সিসিটিভি লাগানো যায়, তা জানার পরেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ করবো।"
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে এসএফআইয়ের এক সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন ৷ সিসিটিভি লাগালেও কোনও লাভ হবে না বলেই, মনে করছে এই ছাত্র সংগঠন ৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআইয়ের পক্ষ থেকে রুদ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, " ঘটনা ঘটার পাঁচদিন পর্যন্ত রেজিস্ট্রারের দেখা মেলেনি ৷ একইভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ এরপর দুজনে মিটিং করে এসে একজন সংবাদমাধ্যমকে বাইট দেবেন, অপরজন নোটিফিকেশন জারি করবেন, তাও আবার ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা না করে ৷ সেটা তো যাদবপুরে চলবে না ৷ এছাড়া এই যে সিদ্ধান্তগুলো রেজিস্ট্রার নিয়েছেন, তিনি কি অন্য কোনও ছাত্রইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলেছেন ? প্রথমে অল স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে মিটিং করতে হবে ৷ তারপর নোটিফিকেশন জারি করতে হবে ৷ সিসিটিভি তো জেইউ বা হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে ৷ সেখানে কেন তাহলে একাধিক দুর্ঘটনার খবর সামনে এসেছে ৷"
যাদবপুরের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা সঞ্জীব প্রামানিক বলেন, " আমার এক ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর সময় থেকে বলে আসছি, ক্যাম্পাসে সিসিটিভি লাগবে ৷ আমরা যে ডেপুটেশন দিয়েছিলাম, তাতে প্রথমেই বলা হয়েছে, সিসিটিভির কথা ৷ তবে আমি যতটুকু জানি, আজকে সিসিটিভির কথা নোটিশ আকারে জানানো হয়নি ৷ গেটের ভিতর প্রবেশের ক্ষেত্রে আই কার্ড, গাড়ির নিয়ন্ত্রণ এবং ক্যাম্পাসে অ্যালকোহল বা ড্রাগ সেবনে কড়া পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে ৷ সিসিটিভি লাগানো নিয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন ৷ তবে দেখার কতদিনে সিসিটিভি বসে। যারা এই কাজে ব্যাঘাত দেবে, বুঝতে হবে তারাই আমার ভাইকে হত্যা করেছে।"
আরও পড়ুন: সেই রাতে রক্তাক্ত ছেলেটিকে নিয়ে কয়েকজন তাঁর ট্যাক্সিতে ওঠেন, তদন্তকারীদের জানালেন চালক
সিসিটিভি বসানোর পাশাপাশি, বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে কেউ প্রবেশ করলে, তাঁকে যথাযথ আইডি কার্ড দেখাতে হবে এবং কার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে সমস্ত নথি জানাতে হবে নিরাপত্তা রক্ষীদেরকে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে গাড়ি নিয়ে কেউ প্রবেশ করে তাহলে তাঁকে অবশ্যই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত স্টিকার দেখাতে হবে। এছাড়াও যদি কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নেশা করতে দেখা যায়, তাহলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷