কলকাতা, 22 মার্চ: বুধবার রাজ্য বিধানসভায় (West Bengal Assembly) শপথ নিলেন সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস (Bayron Biswas Takes Oath)। ভোটে জেতার কুড়ি দিনের মাথায় এ দিন তিনি শপথ নিলেন । তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । তবে শপথ বাক্য পাঠ করার পরই তৃণমূলে যোগদানের জল্পনা উড়িয়ে দেন তিনি ৷
গত 2 মার্চ সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছিল । তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত সাহার মৃত্যুতে এই আসন খালি হয় । সেখানেই উপনির্বাচনে 22 হাজারের কিছু বেশি ভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পান বাইরন । এ দিন শপথ নেওয়ার পর বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কংগ্রেস বিধায়ক । বিধায়ক হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই তাঁর তৃণমূলে যাওয়া নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছিল । এই বিতর্কে যুক্ত হয়েছিল স্বয়ং অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ।
বুধবার শপথ গ্রহণের পরই সেই বিতর্কে জল ঢেলে দিলেন কংগ্রেস বিধায়ক । সরাসরি তিনি জানিয়ে দিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের কোনও প্রশ্নই ওঠে না । পারলে, তৃণমূল থেকে লোক কংগ্রেসে নিয়ে আসব । তিনি এও জানিয়েছেন, রাজ্যের অনেক মন্ত্রীর সঙ্গেই তাঁর কথা হয় । শুভেন্দুর সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ রয়েছে । কার সঙ্গে কার আঁতাত রাজ্যের মানুষ তা বোঝে ।
এ দিন বিধানসভায় বাইরনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে তাঁকে গ্রেফতারির দাবি তোলা হয়েছিল । তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ নিজেই তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে সরব হন । বুধবার শপথ গ্রহণের পর বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে বাইরন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, কুণাল ঘোষ নিজে জেলে ছিলেন । কাকে জেলে ভরবে, কাকে জেলের বাইরে রাখবে সেটা দেখার দায়িত্ব কি তিনি নিয়েছেন ? রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব কি তাঁর ? যদি তাই হয় তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দরকার কী রয়েছে । আদালতের দরকার কী ! তাহলে আদালত বন্ধ করে দেওয়া হোক ।
তিনি এও বলেন, "আমার বিষয়ে যা রটনা হচ্ছে এই বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না । এ বিষয়ে যা বলার আদালত বলবে । এ ক্ষেত্রে আদালতের যা সিদ্ধান্ত হবে আমি তা মেনে নেব ।"
এ দিন তাঁর কাছে প্রশ্ন করা হয় তিনি কি বিজেপির সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় করবেন ? আজ বিজেপির তরফ থেকে তাঁকে শুভেচ্ছাও জানানো হয়েছে । জবাবে বাইরন বলেন, "ওদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে । রাজনৈতিক কোনও জোট করার ভাবনা নেই । সেটা আমরা করব না । বাম-কংগ্রেসের যে জোট ছিল সেটাতেই ভালো আছি আমরা, তা নিয়েই এগোব ।"
আরও পড়ুন: কাটল জট, আজ দুপুরে বিধায়ক পদে বাইরনের শপথ
এ দিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, নওশাদ সিদ্দিকী বাম-কংগ্রেসের জোটে জয়ী প্রার্থী ৷ তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে এগোবেন কি না জিজ্ঞেস করা হয় বাইরনকে । যদিও এই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি । তাঁর কথায়, "দিদি বলেন সেটা পরে দেখা যাবে, এ বিষয়ে সিচুয়েশন কথা বলবে ।"
এ দিন বাইরন বিশ্বাসের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ৷ ছিলেন না তৃণমূল কংগ্রেসের উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায়ও ৷ এঁদের অনুপস্থিতি নিয়ে বাইরন বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া চাইলে তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস এখনও তাঁর জয়কে ভালোভাবে মেনে নিতে পারছে না । সেই জন্য শপথ গ্রহণে এত দেরি হল । না হলে বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন তাঁর শপথ হয়ে যেত ।
অধীর চৌধুরীকে আরএসএস-এর লোক বলা নিয়েও এ দিন প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বাইরন । তিনি বলেন, বাংলার মানুষ সব বোঝে । কে কার লোক ! কার সঙ্গে কার আঁতাত ! জনগণ আর এখন বোকা নেই । তাঁরা অনেক সজাগ হয়েছেন । জনগণ জবাব দিচ্ছেন । আগামীতে আরও ভালো করে জবাব দেবেন ৷
এ দিন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করবেন ? বলা হয় যে, "আপনি ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে গিয়েছিলেন, আগামীতে কি তাহলে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কোনও অভিপ্রায় রয়েছে ।" জবাবে বাইরন বলেন, "আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি, তৃণমূলে যোগদানের কোনও প্রশ্নই আসে না । আমি পারলে তৃণমূলের কিছু লোক কিছু বিধায়ককে কংগ্রেসে টেনে নেব ।" এ ক্ষেত্রে তিনি কাদের কথা বলছেন তা জানতে চাওয়া হয়েছিল । বাইরনের জবাব, সঠিক সময়ে সব দেখতে পারবেন ।
এ দিন অবশ্য তিনি নিজে মুখেই স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর কথা হয় । কিন্তু তাঁর এই কথোপকথন একজন ব্যবসায়ী হিসাবে । এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই । একইভাবে তৃণমূলের অনেক নেতা মন্ত্রীর সঙ্গেই তাঁর কথা হত । সে কথাও জানিয়েছেন বাইরন বিশ্বাস ।