কলকাতা, 13 মে: গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এই কর্ণাটকে এসে মোদি পদবি নিয়ে তাঁর মন্তব্যের জন্য সাংসদ পদ খোয়াতে হয়েছে রাহুল গান্ধিকে । শনিবার এই কর্ণাটকই তাঁকে জাতীয় রাজনীতিতে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলল । কংগ্রেস জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে বলে দাবি ছিল বিজেপি নেতৃত্বের ৷ একের পর এক নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয় আলাদা করে নেতা হিসাবে রাহুল গান্ধির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল । শনিবার কর্ণাটকের মতো দক্ষিণ ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে কংগ্রেসের জয় ও বিজেপিকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল তাই কংগ্রেস ও রাহুলের পালে নয়া হাওয়া এনে দিল বলা যায় ৷
ম্যাজিক ফিগারের থেকে অনেক বেশি আসন পেয়ে একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দল হিসেবে কর্ণাটক বিধানসভায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করল কংগ্রেস ৷ আর এই সুদিনে কর্ণাটকের প্রদেশ কংগ্রেস তাদের এই জয়কে রাহুল গান্ধির সাফল্য হিসাবেই তুলে ধরছে । প্রায় 140 টির কাছে আসন পেতে চলেছে শতাব্দী প্রাচীন এই দল ৷ পদ্ম শিবির আটকে গিয়েছে 60 এর গণ্ডিতে ৷ এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা তথা এআইসিসি'র সদস্য শুভঙ্কর সরকার বলছেন,"এই জয় আসলে নেতা রাহুল গান্ধির জয় । আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরাজয় ।"
কেন এমনটা বলছেন তিনি ? শুভঙ্কর জানান, বিজেপির টার্গেট যে গান্ধি পরিবার একথা এই মুহূর্তে তা সবার কাছেই পরিষ্কার । কখনও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে রাহুল গান্ধিকে আটকানোর চেষ্টা হয়েছে । আবার কখনও তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে আদালতে বিষয়টি নিয়ে যাওয়া হয়েছে । তাঁর লোকসভার সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে । তাঁর কথায়, "আমরা আইনের উপর এবং আদালতের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেই বলছি । এদিনের জনমত প্রমাণ করল রাহুল গান্ধির সঙ্গে যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি । তাই এই রায় তার উপর আস্থার বহিঃপ্রকাশ ।" তিনি এও জানান, আজকে বিজেপির চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিয়েছে মানুষ । আগামী দিনে শীর্ষ আদালত মানুষের এই রায়ের উপর আস্থা রাখবে বলে আমরা আশা প্রকাশ করছি ।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী তথা বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলতও মনে করছেন, কর্ণাটকের এই জয়ের মূল ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি । ভারত জোড়ো যাত্রায় কর্নাটকে আট দিন কাটিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি । আজ গেহলত জানান, কর্ণাটকের এই ফলাফল যে হতে চলেছে তা ভারত জোড়ো যাত্রার সময় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল । তিনি এও বলেছেন যে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে উন্নয়নের রাজনীতিকে বেছে নিয়েছে কর্ণাটকের মানুষ । আসন্ন রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং তেলেঙ্গানা বিধানসভার নির্বাচনেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে ।
একইভাবে এই জয়ের অন্যতম প্রধান কারিগর রাহুল গান্ধি বলেই মনে করছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও । তিনি বলেন, "এই জয় কর্ণাটকের মানুষের কংগ্রেসের প্রতি ভালবাসার জয় । এই জয় রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো যাত্রার জয় । মানুষ ধর্মীয় বিভাজনকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং উন্নয়নের রাজনীতিকে গ্রহণ করেছে । রাহুল গান্ধি এটাই দেখিয়েছিলেন ঘৃণার রাজনীতি না করেও কীভাবে মানুষের মন জয় করা যায় । এই জয়ের প্রধান হোতা তো তিনিই ।" অধীরের কথায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলা তুলছিলেন বলে রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ করে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি । এখন কী হল, একটা গোটা রাজ্য থেকেই তাঁকে তাড়িয়ে দিলেন মানুষ । এতে আবার প্রমাণিত হল, ক্ষমতাধারী নয়, আম জনতাই ঠিক করে, ক্ষমতা কার হাতে যাবে ।
আরও পড়ুন: 'কর্ণাটকে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে গরিবের শক্তির জয়', বিজেপি 'সাফ' করে প্রতিক্রিয়া রাহুলের
এদিকে শনিবার কর্ণাটকে কংগ্রেসের জয় সুনিশ্চিত হতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাহুল গান্ধি ৷ সেখানে তিনি জানান, কর্ণাটকের নির্বাচনে একদিকে পুঁজিবাদী শক্তির সঙ্গে গরিব মানুষের লড়াই ছিল । এখানে ক্ষমতার বিরুদ্ধে গরিব মানুষের শক্তির জয় হয়েছে । কংগ্রেস গরিব মানুষের সঙ্গেই ছিল । এই ফল আগামী দিনে সব জায়গায় হবে । রাহুলের কথায়,"আমাদের একটাই অস্ত্র ভালোবাসা ৷ ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসা জিতেছে ৷ কর্ণাটকে ঘৃণার রাজনীতির বাজার বন্ধ হয়েছে । আগামিতে দেশের সর্বত্রই তাই হবে । এটা সবার জয়, এটা কর্ণাটকের মানুষের জয় । কর্ণাটকে আমরা পাঁচটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম । সেই প্রতিশ্রুতি আমরা প্রথম ক্যাবিনেটেই পূরণ করব ।"
আরও পড়ুন: কংগ্রেসের সরকার গঠন সময়ের অপেক্ষা, জিতলেন প্রিয়াঙ্ক খাড়গে