কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর : কোনও নার্স অথবা তাঁর পরিবারের কেউ কোরোনায় আক্রান্ত হলে, ওই নার্সের টেস্ট, কোয়ারানটিন নিয়ে চূড়ান্ত টালবাহানা চলছে । এমনকী, COVID-19-এর চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই । চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে । এমনই অভিযোগ তুলল এ রাজ্যের নার্সদের সংগঠন, নার্সেস ইউনিটি । তবে শুধুমাত্র COVID-19 সংক্রান্ত অভিযোগই নয়, চাকরি এবং বেতন সংক্রান্ত বিষয়েও অভিযোগ তোলে তারা ।
সেই অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, নার্সদের উপর "অমানবিক এবং অনৈতিক অত্যাচারে"র অভিযোগ। এই সংগঠনের আরও অভিযোগ, এই ঘটনাগুলির সিকি ভাগও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে না পারার কারণে তাঁদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে । এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলেই ধমক, বদলি এমনকী চাকরি কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে।
ভাইরাসের মোকাবিলায় নার্সদের, বিশেষ করে গ্রেড-2 নার্সদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । একথা জানিয়ে নার্সেস ইউনিটির সেক্রেটারি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, " অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে রাজ্যজুড়ে এই গ্রেড-2 নার্সদের উপর চলছে অমানবিক এবং অনৈতিক অত্যাচার । এই ঘটনাগুলির সিকি ভাগও আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারছি না । এর ফলে দুর্ভোগ ক্রমাগত বাড়ছে । রাজ্যের প্রায় সর্বত্র নার্সিংয়ের নির্দিষ্ট কাজ ছাড়াও সব ধরনের কাজ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে । অথচ সেগুলির জন্য নির্দিষ্ট কর্মচারী আছেন । এটা নিয়ে কথা বলতে গেলেই ধমক, বদলি এমনকী চাকরি নাও থাকতে পারে, এমন হুমকির শিকার হতে হচ্ছে । তার উপর ডিউটি সংক্রান্ত বিষয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, নিয়মবহির্ভূত নির্দেশ, যা অন্য কোনও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে একেবারেই ঘটে না ।"
COVID-19-এ আক্রান্ত নার্সদের বিষয়ে নার্সেস ইউনিটির সেক্রেটারি বলেন, "নার্স বা তাঁদের পরিবারের কেউ কোরোনা পজ়িটিভ হলে, সংশ্লিষ্ট নার্সদের COVID-19 টেস্ট, কোয়ারানটিন এসব নিয়েও রয়েছে চূড়ান্ত টালবাহানা । এমনকী চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই । চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ।"
নার্সেস ইউনিটির দাবি, সরকারি কর্মচারীদের জন্য যে সরকারি নির্দেশিকা স্বাস্থ্যভবন থেকে ইশু করা হচ্ছে, সেটাই নার্সদের ক্ষেত্রেও আবশ্যিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে । সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সাধারণ মানুষকে যে বৈজ্ঞানিক গাইডলাইন দেওয়া হচ্ছে, সেই গাইডলাইন নার্সদের জন্যেও প্রযোজ্য করতে হবে । তেহট্ট স্টেট জেনেরাল হাসপাতালের এক নার্সের শ্লীলতাহানির ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে । এই অশালীন ও অনৈতিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে ।
নার্সেস ইউনিটির সেক্রেটারি জানিয়েছেন, পে-স্কেল নিয়ে নার্সেস ইউনিটির দীর্ঘ আন্দোলনের জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নার্সদের এই সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের তৎকালীন সচিব বিবেক কুমার ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে সদর্থক একটি আলোচনা হয়েছিল । ওই আলোচনায় নার্সদের দাবি পূরণের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল । এই কোরোনা পর্ব শুরু হওয়ার আগে স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে নার্সেস ইউনিটি জানতে পারে ফাইল ওপেন হয়েছে । ওই ফাইল অর্থ দপ্তরে পাঠানো হবে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছিলেন, ডিপ্লোমা নার্সদের থেকে শুরু করে স্তরে স্তরে সবকটি গ্রেডে দু'টি করে ধাপ প্রতি স্কেলে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এটা জানার পরে প্রতিবাদ করে নার্সেস ইউনিটি । সঠিক, ন্যায়সংগত পে-স্কেলের চার্ট তখন স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে দেওয়া হয় । অথচ, এখনও পর্যন্ত বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে । দীর্ঘদিনের ন্যায্য পে-স্কেল নার্সদের জন্য ধার্য করা হোক, এটি নার্সেস ইউনিটির অন্যতম দাবি ।
দাবিগুলি ইতিমধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে স্মারকলিপি পেশ করে অবগত করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নার্সেস ইউনিটির সেক্রেটারি ।