কলকাতা, 21 এপ্রিল : করোনা আক্রান্ত হয়ে কোনও চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হলে গত বছর কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল । অথচ গত বছর এ রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে 106 জন চিকিৎসক মারা গেলেও , তাঁদের মধ্যে মাত্র চারজনের পরিবার রাজ্য সরকারের দেওয়া আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে করোনায় মৃত কোনও চিকিৎসকের পরিবার কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া আর্থিক ক্ষতিপূরণ পায়নি ।
করোনা আক্রান্ত কোনও চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসাবে 50 লাখ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার । এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার 10 লাখ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল।
এই বিষয় নিয়ে রাজ্যের চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম-এর যুগ্ম সম্পাদক চিকিৎসক রাজীব পাণ্ডে বলেন , "গত বছর করোনায় এ রাজ্যে শুধুমাত্র চিকিৎসকই মারা গিয়েছেন 106 জন । তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র চারজন চিকিৎসকের পরিবার পেয়েছে রাজ্য সরকারের দেওয়া 10 লাখ টাকা । কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া 50 লাখ টাকা করোনায় মৃত কোনও চিকিৎসকের পরিবার এখনও পর্যন্ত পায়নি ।" গত বছর রাজ্যে কতজন নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের এই সংগঠন ।
এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে এ বছর কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া 50 লাখ টাকা আর দেওয়া হবে না বলে জানা গিয়েছে । এই বিষয়ে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসক সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন , "করোনায় মৃত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বাবদ 50 লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, এ বছর মার্চ মাস থেকে তা তুলে নেওয়া হল । কেন্দ্রীয় সরকারের এই অমানবিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।"
আরও পড়ুন : টিকা নিয়েও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজ্যে প্রথম চিকিৎসকের মৃত্যু
এই বিষয়ে সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের তরফে জানানো হয়েছে , করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমিত হয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে । করোনা আক্রান্ত রোগীকে বহুক্ষণ ধরে কাছ থেকে চিকিৎসা করার জন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে । ফলে তাঁদের মৃত্যুর হারও অনেক বেশি । গত বছর যা 20 শতাংশের উপরে ছিল । আর করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা করতে গিয়ে সংক্রমিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেলে তাঁর পরিবার ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে থাকার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষতিপূরণ বাবদ পরিবারপিছু 50 লাখ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল , যা ছিল সত্যিই উৎসাহজনক ।
যদিও প্রাপ্য ওই টাকা থেকে অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন , "গত বছরের করোনা সংক্রমণের তুলনায় এ বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি মারাত্মক ও ধংসাত্মক। করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের সংক্রমণ ক্ষমতা আরও বহুগুণ বেশি । এর ফলে কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হয়ে পড়ার ভয়ও আগের বছরের তুলনায় অনেকগুণ বেশি । তাই এ ক্ষেত্রে বিমা কভারেজের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি । এ বছর আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার বিমার দায়িত্ব পুরোপুরি ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে দিল ।"
তিনি আরও বলেন, "সরকারের এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কোভিড যোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে দেবে । করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে তাঁরা দুর্বল হয়ে পড়বে । এর ফলে মানবসমাজ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে । সার্বিকভাবে করোনা পরিস্থিতি রুখতে সরকার যেমন ঘাড় থেকে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছে , এই বিমা তুলে দেওয়াটাও সরকারের আরও বেশি দায়িত্বজ্ঞানহীনতারই পরিচয় । আমরা সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছি এবং চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল বাড়াতে বিমার সুযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি ।"