কলকাতা, 19 জুলাই : দেশে COVID-19-এর গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা বলছে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (IMA)। এই রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন-ও বলছে, গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে। সরকারকে জানানো সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তথ্য চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এভাবে মানুষকে ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বড়সড় বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "আমরা তো বার বার একটা কথাই বলছি, বিভিন্ন ভাবে তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু, সংগঠনগত ভাবে আমরা মনে করি, গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়ে গেছে। দেশের সব জায়গায় না হলেও, পকেটে পকেটে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় প্রচুর সংখ্যক টেস্ট এবং নজরদারি দরকার। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। বরং, তথ্য কমিয়ে দেখিয়ে হয়তো এটা দেখানোর চেষ্টা চলছে যে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। এটা কোনও ভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এভাবে লড়াই করা যাবে না।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের ধারণা, গোষ্ঠী সংক্রমণ বোধ হয় হয়ে রয়েছে। একাধিকবার আমরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছি। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে এই আশঙ্কার কথা আমরা বার বার বলেছি। এর জন্য কী করণীয়, সেই বিষয়ে আমরা গঠনমূলক প্রস্তাবও দিয়েছি। গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে কি না বুঝতে হলে পাড়ায় পাড়ায় র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে হবে। এবং, এরজন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে কারণ হাতে আর সময় নেই। যদি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা না হয়, তাহলে দেশের যা জনসংখ্যা এবং জনঘনত্ব তাতে বড়সড় বিপর্যয় হয়ে যাবে।"
রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "এক মাস আগেই আমরা বলেছি গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। বরাবরের মতো সরকার এটাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের এই চাপা দেওয়ার মাধ্যমে জনগণকে ভয়াবহ বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। শুরু থেকে যেভাবে প্রকৃত সত্য চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে, তার মাধ্যমে যে ক্রমশ জনগণের বিপদ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল সেটা গোষ্ঠী সংক্রমণের পরে স্বীকার না করে জনগণকে আরও ভয়াবহ বিপদের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে সরকার। একমাস আগেই এই গোষ্ঠী সংক্রমণের বিষয়ে বিচার বিবেচনা করা উচিত ছিল।"
তিনি আরও বলেন, "এক মাস আগে আমরা সরকারকে জানিয়েছিলাম, গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে বিচার বিবেচনা করা হোক। এই অবস্থায় যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হোক। সরকার এখনও অস্বীকার করছে। অস্বীকার করার মাধ্যমে এদেশের 130 কোটি মানুষকে ভয়াবহ বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার একই কাজ করছে।"
বিদেশ থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের মাধ্যমে যখন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন সেটা ছিল এ দেশে স্টেজ ওয়ান । স্টেজ ওয়ানে যাঁরা সংক্রমিত হয়েছিলেন, তাঁদের থেকে যখন অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল তখন সেটা ছিল স্টেজ টু। গোষ্ঠী সংক্রমণ অর্থাৎ, কমিউনিটি স্প্রেড রয়েছে স্টেজ থ্রি-তে। সংক্রমিত হওয়ার কারণ হিসাবে যখন কন্ট্যাক্ট হিস্ট্রি খুঁজে পাওয়া যায় না, বোঝা যায় না কোথা থেকে সংক্রমণ ঘটল। এখানে প্রচুর কেস রয়েছে, যে সব ক্ষেত্রে বোঝা যায়নি কীভাবে সংক্রমণ ঘটেছে। এ কথা জানিয়ে সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "এই জন্য এখন আর আগের মতো কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা হচ্ছে না। গোষ্ঠী সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর হার ভয়াবহভাবে বেড়ে যাবে।"