কলকাতা, 29 জুন : 1 জুলাই ডক্টরস ডে ৷ তাই কোরোনা যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে ওই দিন সরকারি ছুটির ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ আজ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘোষণা করেন তিনি ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, প্যারামেডিকেল কর্মী-সহ কোরোনা যোদ্ধাদের জন্য 1 জুলাই সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হল ৷ তাঁদের সম্মান জানিয়ে, তাঁদের কাজকে মনে রাখার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ কারণ এই কাজ করতে গিয়ে অনেকে মারাও গেছেন ৷ তাঁদের কাছে আমরা ঋণী ৷ যেহেতু 1 জুলাই জাতীয় চিকিৎসক দিবস, তাই আমরা কেন্দ্রকেও অনুরোধ করব কোরোনা যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে এই দিনটাকে যেন জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয় ৷"
রাজ্যে টেলি মেডিসিন পরিষেবা চালু করার কথাও আজ জানান মমতা ৷ তিনি বলেন, "আমরা আর একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷ আমরা 1 জুলাই থেকেই সেটা চালু করতে পারি ৷ সেটা হল টেলিমিডিসিন চালু করা ৷ টেলিমেডিসিন আমাদের আছে ৷ কিন্তু, এবার কোরোনার ক্ষেত্রে এই টেলিমেডিসিন চালু করা হবে ৷ যাঁরা অন্য রোগে আক্রান্ত তাঁরা অনেকেই বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যেতে পারছেন না ৷ চিকিৎসকরাও তাঁদের চিকিৎসা করতে পারছেন না ৷ তাই তাঁরা যদি টেলিফোনেই চিকিৎসককে নিজেদের সমস্যার কথা জানান তাহলে সাহায্য পেতে পারেন ৷" 1 জুলাই বেলা 12 টা থেকে এই পরিষেবা চালু করা হবে ৷ এই পরিষেবার জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফে ৷ ফোন নম্বর পরে জানিয়ে দেওয়া হবে ৷ প্রতিটি জেলাতেই এই টেলিমেডিসিনের সুবিধা থাকবে বলে সাংবাদিক বৈঠকে জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷
বর্তমানে রাজ্যে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা 17 হাজার 283 ৷ যার মধ্যে কলকাতায় সংক্রমণের সংখ্যা 5 হাজার 573 ৷ রাজ্যের মধ্যে কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা সবথেকে বেশি ৷ এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মত, ''কলকাতার হাসপাতালে জেলার মানুষও চিকিৎসার জন্য ভরতি হয় ৷ কলকাতার হাসপাতালে শুধু এখানকার কোরোনা আক্রান্তরাই ভরতি নেই ৷ জেলার কোরোনা আক্রান্তরাও ভরতি হয়েছে ৷ মমতা বলেন, "মেডিকেল কলেজ শুধু কলকাতার রোগী ভরতি করে না ৷ সমস্ত রাজ্যের রোগী ভরতি করেন ৷ কিন্তু, যখন এই সংক্রমণের রিপোর্ট রেকর্ড হয় তখন জেলার রোগীরাও কলকাতার হিসেবেই গণ্য হন ৷ তাই কলকাতায় সংক্রমণের সংখ্যাটা বাড়িয়ে দেখানো হয় ৷ কারণ এই রেকর্ডটা কলকাতার সীমানা অনুযায়ী তৈরি হয় না ৷ "
দেশের কোরোনা পরিস্থিতি নিয়েও আজ সাংবাদিক বৈঠকে কথা বলেন মমতা ৷ তিনি বলেন, "এই সময়ে সারা দেশেই সংক্রমণ বাড়ছে ৷ আপাতত 15 জুলাই পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমান বন্ধ রাখা হয়েছে ৷ কিন্তু, তার মধ্যেও ট্রেন, বিমান সব চলেছে ৷ এখনও স্পেশাল ট্রেন, দূরপাল্লার ট্রেন, অন্তর্দেশীয় বিমান চলছে ৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসছে ৷ তাই আমরা কেন্দ্রকে একটা অনুরোধ করেছি ৷ যে রাজ্যগুলিতে সংক্রমণের সংখ্যা বেশি সেই জায়গা থেকে কিছুদিনের জন্য স্পেশাল ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছি ৷ আমরা সব রাজ্যকেই ভালোবাসি ৷ এই রোগের জন্য কাউকে আমরা দায়ি করছি না ৷ কিন্তু, রোগ তো রোগ ৷ তাই এই অনুরোধ করেছি ৷ কারণ আমরা চাই না, এই স্পেশাল ও দূরপাল্লার ট্রেনগুলির মাধ্যমে রোগ ছড়াক ৷"
দেশের সবথেকে বেশি সংক্রমণের রেকর্ড রয়েছে এমন পাঁচটি রাজ্যের নাম উল্লেখ করে ইতিমধ্যে কেন্দ্রকে একটি চিঠি লিখেছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই রাজ্যগুলি থেকেই স্পেশাল ও দূরপাল্লার ট্রেন পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে ৷ একইসঙ্গে বিমান পরিষেবার ক্ষেত্রেও একই অনুরোধ করা হয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের অভ্যন্তরে অর্থাৎ কলকাতা থেকে বাগডোগরা বা অন্ডাল পর্যন্ত বিমান পরিষেবায় কোনও আপত্তি নেই ৷ কিন্তু, যে পাঁচটি রাজ্যে সংক্রমণ বেশি সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিমান পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখা হোক ৷ আর বাকি রাজ্যগুলির বিমান পরিষেবা সপ্তাহে 1 দিন করা হোক ৷ কারণ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, "ট্রেন ও বিমানের জন্য সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি ৷ তাই সবটাই আমাদের কাছে বাড়তি বোঝা হিসেবে আসছে ৷"
অন্যদিকে মেট্রো পরিষেবার চালু করার জন্য রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে সাংবাদিক বৈঠকে জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "মেট্রোর তরফে আমাদের বলা হয়েছে যে, এখনই সবার জন্য পরিষেবা চালু করা যাবে না ৷ তবে, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের জন্য সীমিত মেট্রো চালাতে পারবেন ৷ আমার মনে হয়, এটা হলেও অনেকটা সুবিধা হবে ৷ তাই আমরা এই পরিষেবা তাড়াতাড়ি চালু করার জন্য অনুরোধ করেছি ৷ স্বরাষ্ট্রসচিবও রেলবোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন ৷ "
আজ একই সঙ্গে রাজ্যে কোরোনা ওয়ারিয়ার্স ক্লাব খোলার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ যাঁরা একসময় কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং পরে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন তাঁরা এই ক্লাবের সদস্য হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর মতে, এই ক্লাবের সদস্যদের মাধ্যমেই অন্যরা মনে সাহস পাবেন ৷ প্রথম বহরমপুরে এই ক্লাব খোলা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে ৷ পরে প্রতিটি জেলায় এই ক্লাব খোলা হবে ৷