কলকাতা, 19 মে: খাদিকুল গ্রামের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের তদন্তভার রয়েছে সিআইডির হাতে ৷ মঙ্গলবার দুপুরে বিস্ফোরণ হয় ৷ রাতের মধ্যেই তদন্ত চলে যায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দাদের কাছে ৷ কিন্তু সেই তদন্ত শুরু হতে না হতেই বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছে পুলিশ মহলের একাংশ ৷
কেন তারা এমন মনে করছে ? প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সেই প্রশ্ন ৷ এক্ষেত্রে পুলিশ মহলের একাংশের মত, ওই বাজি কারখানার মালিক কৃষ্ণপদ ওরফে ভানু বাগের মৃত্যু তদন্তের গতিকে কিছুটা হলেও থমকে দিল ৷ কিন্তু এর কারণ কী ?
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির তদন্তকারী ওই বিশেষ দলে থাকা একজন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, তদন্তের ক্ষেত্রে ভানু বাগের গোপন জবানবন্দি নেওয়া জরুরি ছিল ৷ তাঁর মৃত্যুর আগে সেই গোপন জবানবন্দি নেওয়া যায়নি ৷ তা নেওয়া গেলে তদন্তের গতি এভাবে থমকে যেত না ৷
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার খাদিকুল গ্রামে অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয় ৷ প্রাথমিকভাবে পুলিশ তদন্ত শুরু করে ৷ উদ্ধার হয় ন’জনের মৃতদেহ ৷ পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিআইডি তদন্তের ঘোষণা করেন ৷ কিন্তু ততক্ষণে কারখানার মালিক ভানু বাগ পালিয়ে যান ৷ বৃহস্পতিবার তাঁর হদিশ মেলে ওড়িশার কটকের একটি হাসপাতালে ৷ তখন তিনি সেখানে 70 শতাংশ অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন ৷
সিআইডি সূত্রে খবর, ভানুর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল ৷ তাই চিকিৎসকরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে দেননি ৷ ফলে গোপন জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হয়নি ৷ বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটে নাগাদ ওই হাসপাতালেই মৃত্যু হয় ভানুর ৷ ভোরে সিআইডির কাছে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে ৷
পুলিশ মহলের মতে, যেহেতু ভানু বাগ কারখানার মালিক ছিলেন, তাই তাঁর কাছে সব তথ্যই ছিল৷ কারখানায় শুধু বাজি তৈরি হত, নাকি অন্য কিছু তৈরি করা হত ? সেখানে কি শুধু বারুদ ছিল, নাকি অন্য কোনও বিস্ফোরক ছিল ? এই প্রশ্নের উত্তর ভানুর কাছ থেকে অবশ্যই পাওয়া যেত ৷ তাছাড়া এই কারখানার পিছনে প্রভাবশালী কেউ জড়িত ছিল কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরও সহজেই পাওয়া যেত ৷
এই প্রশ্নের উত্তরগুলিই এখন পাওয়া কিছুটা হলেও সমস্যার হয়ে গেল ৷ তবে ভানু বাগের বেশ কয়েকজন আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছে সিআইডি ৷ সেই তালিকায় তাঁর ছেলে ও ভাইপো রয়েছেন ৷ তাঁরাও বাজি কারখানার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ৷ তাই তাঁদের কাছ থেকেও অনেক তথ্য মিলতে পারে ৷ তাই তাঁদের জেরা করেই পরবর্তী তথ্য তুলে আনতে চান গোয়েন্দারা ৷
এদিকে তদন্তভার নেওয়ার পর পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশের কাছ থেকে কেস ডায়েরি নিয়েছে সিআইডি ৷ পুলিশ প্রাথমিক অভিযোগে বিস্ফোরক আইনের ধারা যোগ করেনি ৷ পরে তা যোগ করা হয় ৷ কলকাতা হাইকোর্টও এনআইএ অ্যাক্ট বা বিস্ফোরক আইনের ধারা যোগ করতে নির্দেশ দিয়েছে ৷ অন্যদিকে সিআইডির তরফে কৃষ্ণপদ বাগ ও তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে খুন ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজুও করা হয়েছে ৷
এখন দেখার সিআইডি তদন্তে এই খাদিকুল বিস্ফোরণ নিয়ে কী কী তথ্য উঠে আসে !
আরও পড়ুন: খাদিকুল থেকে কয়েক কিমি দূরে হদিশ আরও একটি বাজি কারখানার