কলকাতা, 5 মে : কোরোনার জেরে আপাতত বন্ধ রাখতে হল কলকাতার আরও একটি হাসপাতাল। পার্কসার্কাসে অবস্থিত বেসরকারি এই হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা হয়। ইতিমধ্যেই এখানকার 12 জন নার্স এবং তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী কোরোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে এখানকারই এক নার্স কোরোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। এভাবে কোরোনা সংক্রমণের জেরে আপাতত এই হাসপাতালে নতুন কোনও রোগীকে ভরতি নেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে ।
গতকালই পঞ্চসায়রের একটি বেসরকারি হাসপাতালকে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ওই হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী COVID-19-এ আক্রান্ত হওয়ার জেরে আপাতত হাসপাতালের আউটডোরের পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। হাসপাতালে নতুন কোনও রোগীকে ভরতি নেওয়াও বন্ধ রাখা হয়েছে। এবার কোরোনার জেরে বন্ধ রাখতে হল পার্কসার্কাসের বেসরকারি ওই শিশু হাসপাতাল । শুক্রবার ওই হাসপাতালে এক নাবালকের শরীরে কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর হাসপাতালের অসুস্থ নবজাতকের চিকিৎসার জন্য NICU (নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট)-এ কর্তব্যরত এক নার্স কোরোনায় আক্রান্ত হন।
কোরোনা আক্রান্ত ওই নার্সের বাড়ি কলকাতার বাইরে। তবে, কর্মসূত্রে হাসপাতালের নার্সদের হস্টেলে থাকেন তিনি। সম্প্রতি বাড়ি থেকে ফিরেছিলেন। হাসপাতালে যোগ দিয়ে একদিন ডিউটিও করেন। এরপরে জ্বর হয় তাঁর । পরে সোয়াব নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায়, রিপোর্ট পজ়িটিভ । এদিকে আজ আবার নতুন করে 12 জন নার্স এবং তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীর শরীরে COVID-19-র সন্ধান মেলে ।
এভাবে একের পর এক কোরোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। আপাতত এই হাসপাতালে রোগী ভরতি বন্ধ রাখা হয়েছে। সংক্রমণ রুখতে হাসপাতালকে জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে । আক্রান্তদের সংস্পর্শে অন্য যাঁরা এসেছেন, তাঁদের তালিকা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । পাশাপাশি কতজনকে কোয়ারানটিনে রাখতে হবে, কতজনের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে । এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদেরও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে । আক্রান্ত 15 জনকে জোকায় অবস্থিত একটি কোরোনা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে । এবিষয়ে হাসপাতালের অধিকর্তা চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের বক্তব্য জানতে চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তা সম্ভব হয়নি ।
কোরোনার প্রকোপে একের পর এক হাসপাতালকে আপাতত বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে । এবিষয়ে চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক কৌশিক চাকি বলেন, "এধরনের ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী সকলের জন্য PPE এবং কোরোনা নির্ণয়ের জন্য আরও বেশি টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। COVID এবং নন COVID হাসপাতালের পাশাপাশি কোরোনা আক্রান্ত রোগীদের পৃথকীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া আর অন্য উপায় নেই। কোরোনা কিন্তু কালকেই চলে যাবে না। এখনও কয়েক মাস হয়তো বছর খানেকের উপর থাকবে। এটাকে নিয়ে আমাদের বাঁচতে শিখতে হবে। আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে ।"