কলকাতা, 23 ডিসেম্বর: সাধারণ মানুষকে ব্যাংকে (Bank) গিয়ে কেওয়াইসি (KYC) নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে । শুক্রবার নবান্নে স্টেট লেভেল ব্যাংকার্স কমিটির (State Level Bankers Committee) সঙ্গে বৈঠকের পর এর বিরুদ্ধে সরব হলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya) ।
এদিন নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র (Amit Mitra) এবং রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য । সেখানেই এই নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা ।
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ‘‘কেওয়াইসি নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে ভয়ংকর ভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে । বিষয়টি এদিন ব্যাংকিং সেক্টরের কর্তাদের সামনে তুলে ধরলাম । একজন মানুষকে কেন এভাবে হয়রানি শিকার হতে হবে, তা আমরা জানতে চাই ।’’
তাঁর অভিযোগ, ‘‘রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) বিজ্ঞপ্তি করে জানিয়ে দিয়েছে, কোনও গ্রাহক একটি ব্যাংকে কেওয়াইসি ফরম ফিলাপ করলে অন্যান্য যে ক’টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকবে ওই গ্রাহকের, সেখান থেকেই গোটা বিষয়টি বণ্টন হয়ে যাবে । তাকে অন্যান্য ব্যাংকে গিয়ে আর নতুন করে কেওয়াইসি ফরম ফিলাপ করতে হবে না । কিন্তু এই নিয়ম মানা হচ্ছে না ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা ব্যাংকের আধিকারিকদের অনুরোধ করছি, রিজার্ভ ব্যাংকের এই নিয়মকে মান্যতা দেওয়ার জন্য । যেহেতু বৈঠকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আঞ্চলিক অধিকর্তা উপস্থিত ছিলেন, তাই ব্যাংকের কর্তারা এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কেওয়াইসি নিয়ে জটিলতা কাটানোর জন্য যাবতীয় নির্দেশ এবং আবেদন মানবেন বলে জানিয়েছেন ।’’
প্রসঙ্গত, এ দিনের বৈঠকে 100টি সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন । ছিলেন রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার আঞ্চলিক অধিকর্তা । দিল্লি থেকেও বিভিন্ন ব্যাংকিং সেক্টরের কর্তারা উপস্থিত ছিলেন । সেখানে এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা তুলে ধরল রাজ্য ।
এর পাশাপাশি এদিন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানিয়ে দিয়েছেন, এবার থেকে পেনশন প্রাপকের দরজায় লাইফ সার্টিফিকেটের জন্য পৌঁছে যাবে ব্যাংক । কারণ হিসেবে তাঁর দাবি, বহু প্রবীণ ব্যক্তি বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন, যাঁরা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যাংকে যেতে পারেন না । ফলে তাঁরা জীবিত রয়েছেন কি না, সেই বিষয়ে সঠিক তথ্য পান না ব্যাংকের কর্মী বা আধিকারিকরা । ফলে চরম সমস্যায় পড়েন ওই মানুষগুলি । আর সে কারণেই এদিন রাজ্য সরকারের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়, পেনশন প্রাপকদের লাইফ সার্টিফিকেটের জন্য ব্যাংকের আধিকারিক বা কর্মীরা সরাসরি মানুষের দরজায় পৌঁছে গেলে, আর জটিলতা থাকবে না । সমস্যায় পড়বেন না ওই মানুষগুলি । ব্যাংকের কর্তারা রাজ্য সরকারের এই আর্জি মেনে নিয়েছেন । ফলে এইবার থেকে লাইফ সার্টিফিকেটের জন্য পেনশন প্রাপকদের দুয়ারে পৌঁছে যাবে ব্যাংকের কর্মী বা আধিকারিকরা ।
এদিন এই বৈঠকের শেষে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরির প্রক্রিয়াতে যেভাবে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংক এগিয়ে এসেছে, তার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রশংসাও করেছেন অর্থমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকার শিবিরগুলিতে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । এ ব্যাপারে ব্যাংকের তরফেও যথেষ্ট সাহায্য মিলেছে । যে কারণে 25 হাজার 502 আবেদনপত্র জমা পড়ার মধ্যে 24 হাজার 462 জনের নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব হয়েছে ।’’
একই সঙ্গে এদিন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগী নারী পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক সাহায্য না করা নিয়েও সরব হয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য । নিয়মের গেরোয় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে বলে তিনি এই নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠিও লিখবেন জানিয়েছেন ।
এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে এক বছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিলাম, 1 লক্ষ 10 হাজার 178 কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে । কিন্তু এখনও পর্যন্ত 6 মাসে ঋণ দেওয়া গিয়েছে 70 হাজার 668 কোটি টাকা । আমাদের রাজ্যে 2 লক্ষ 80 হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে । সেখানে এত কর্মসংস্থান হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পদ্যোগীরা ঋণ পাচ্ছেন না । কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঋণ পেতে গেলে প্যান কার্ড থাকা আবশ্যিক । কিন্তু অনেকেই রয়েছেন যাঁদের প্যান কার্ড নেই, তাঁরা ঋণ পাচ্ছেন না । তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেন্দ্রকে চিঠি লিখব, এই প্যান কার্ড রাখার বিষয়টি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য ।’’
আরও পড়ুন: বিধানসভায় গণতন্ত্রের সুন্দর ফুল ফুটুক, আর্জি রাজ্যপালের