কলকাতা, 9 জুলাই: ভোট মিটে গিয়েছে, তারপরও কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে নেই রাজ্যে কতগুলি স্পর্শকাতর বুথ ছিল ! একের পর এক চিঠি চালাচালি এবং একাধিক বৈঠক করা সত্ত্বেও রবিবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল অফিসার এবং বিএসএফ জানেনই না রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে মোট কতগুলি সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর বুথ ছিল ৷ রাজ্য়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সেই বুথের তালিকা তাদের হাতে এসে পৌঁছয়নি। এমনটাই এদিন জানালেন ডিআইজি বিএসএফ এস এস গুলেরিয়া ৷
রাজ্য়ে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী কো-অর্ডিনেটর এবং নোডাল অফিসার হিসাবে বুধকোটিকে নিয়োগ করা হয়েছিল। আর ভোটের পরই তিনিই একের পর এক তির ছুড়ে দিয়েছেন কমিশনের উদ্দেশে ৷ ভোট শেষ হতেই কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলেন বুধকোটি ৷ আর এদিন সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএসএফ-এর ডিআইজি গুলেরিয়া জানান, শনিবার ভোটের দিন বিএসএফ, সিআরপিএফ ছাড়াও রাজ্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছিল, সেইসব জায়গা থেকে কোনওরকম দুর্ঘটনা বা 'ক্যাজুয়ালটির' খবর আসেনি। যেখানে বাহিনী ছিল, সেইসব জায়গায় নির্বিঘ্নে নির্বাচন হয়েছে বলেও জানান তিনি। তা সত্ত্বেও দু-একটি জায়গায় যেখানে প্ররোচনা দিয়ে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হয়েছিল, সেখানে তা খুব সুচারুভাবে বাহিনী সামাল দেয়। বিএসএফ-এর ডিআইজি জানান, অশান্তি সামাল দেওয়ার জন্য একটি জায়গায় শূন্যে দু'বার গুলিও চালাতে হয়েছে বাহিনীকে। অন্য় আরও এক জায়গায় ভিড় হঠাতেও গুলি চালাতে হয়েছে বাহিনীকে। এক জায়গায় যেখানে বুথ ক্যাপচারিং-এর ঘটনা ঘটে, সেখানে বিএসএফের বাহিনীরা পাঁচ জনকে আটকে দেন এবং পরে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
অর্থাৎ, এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে যেসব জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল সেখানে কোনওরকম হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শনিবার অর্থাৎ ভোটের দিন সকাল 11 টা পর্যন্ত রাজ্যে এসে পৌঁছেছিল 649 কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। এমনটাই জানান এদিন বিএসএফের ডিআইজি। তিনি বলেন, "মোট বুথের মধ্যে চার হাজার 834টি সংবেদনশীল বুথ ছিল। তবে এই তথ্য আমরা সংবাদ মাধ্যমের থেকে জানতে পারি। বুথের সংখ্যা যখন 61 হাজারের কিছু বেশি ছিল, তখন কেন্দ্রীয় বাহিনী সব বুথে মোতায়েন করা সম্ভব নয় ৷ সেক্ষেত্রে সংবেদনশীল বুথগুলিকে আগে প্রাধান্য দেওয়া হয়। গতকাল নির্বাচনে জেলাশসক এবং পুলিশ সুপারের মাধ্যমে আমরা যেসব বুথ সংবেদনশীল বলে জানতে পারি, সেই সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হয়েছিল।"
আরও পড়ুন: বৈষ্ণবনগরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মৃত তৃণমূল কর্মী, মালদায় ভোটের হিংসার বলি বেড়ে 2
তাঁর কথায়, "সংবেদনশীল বুথগুলিতে দেওয়ার পরে হাতে যে বাড়তি বাহিনী ছিল তাদের অন্যান্য বুথেও দেওয়া হয়েছিল। তাই যে অভিযোগটি উঠছে যে বহু জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী চোখে পড়েনি সেই সব জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেওয়া সম্ভবই হয়নি। কারণ আমাদের যেই বুথগুলিতে প্রাধান্য দিয়ে মোট বাহিনী মোতায়েন করার কথা বলা হয়েছিল সেই সব জায়গায় মোতায়েন করার জন্য আগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।" এরপরই তিনি অভিযোগ করেন, "আমাদের কাছে এখনও রাজ্যে কতগুলি সংবেদনশীল বুথ রয়েছে তার কোনও তথ্য নেই। আমরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বারে বারে সংবেদনশীল বুথগুলির তালিকা চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই তালিকা আমরা আজ পর্যন্ত পেলাম না। যেখানেই নির্বাচন হোক না কেন অনেক আগেই সংবেদনশীল বোধগুলির যে ক্যাটাগরাইজেশন হয় তা চিহ্নিত করে তার একটি লিস্ট তৈরি করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল অফিসারকে দেওয়া হয়। যাতে তারা নিজেদের মতো করে ডিপ্লয়মেন্ট প্ল্যান সাজিয়ে সেই সব জায়গায় ভালো করে কাজ করতে পারে।"