কলকাতা/সল্টলেক/চুঁচুড়া, 7 জুন: পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যজুড়ে সিবিআই হানা । রাজ্যের একাধিক পৌরসভা-সহ চুঁচুড়ার জগুদাস পাড়ায় অয়ন শীলের বাড়ি ও অফিসেও তল্লাশি চালায় সিবিআই । আজ সকাল দশটা নাগাদ 10 জনের সিবিআই তদন্তকারী দল চুঁচুড়ায় আসে । দুটি দলে ভাগ হয়ে তল্লাশি শুরু করে তারা । অয়ন শীলের আবাসন এবিএস টাওয়ারে রয়েছে তাঁর অফিস । সেখানেও চলে তল্লাশি । চার ঘণ্টা পর সিবিআই কিছু নথি নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় । সিবিআইয়ের অপর দলটি অয়নের বাড়িতে তল্লাশি চালায় । জিজ্ঞাসাবাদ করে অয়নের বাবা মাকে । সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর সেখান থেকেও বেরিয়ে যায় সিবিআই দল ।
এ বার পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে তৎপর সিবিআই ৷ আজ সকালে সল্টলেকের এফডি ব্লকের 388 নম্বরে অয়ন শীলের ফ্ল্যাটেও হানা দেয় সিবিআই-এর দল । তল্লাশির পাশাপাশি অয়ন শীলের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । আজ সকাল থেকে অয়নের বাড়ি ছাড়াও শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে হানা দিয়েছেন সিবিআই-এর আধিকারিকরা ৷ নগরোন্নয়ন ভবন, দমদম পৌরসভা, দক্ষিণ দমদম পৌরসভা-সহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হয় ৷
গত 18 মার্চ অয়ন শীলকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর ফ্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা । টানা 11 ঘণ্টা জেরার পর অবশেষে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যান ইডি আধিকারিকরা । পরদিনই অয়নকে গ্রেফতার করা হয় । বেশ কিছু নথিও উদ্ধার করে নিয়ে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অয়ন শীলের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়েও পৌরসভায় নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত নথি পায় ইডি।
অয়ন শীলের বাড়িতে ও অফিসে হানা দিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল জানতে পারে যে, অয়ন শীল শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতিতেই যুক্ত নন, তাঁর হাত ধরে পৌরসভায় নিয়োগের ক্ষেত্রেও দেদার দুর্নীতি হয়েছে ৷ 2011 থেকে 2017 সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পৌরসভায় অর্থের বিনিময়ে অনেককেই চাকরিতে নিয়োগ করেছেন তিনি ৷ তবে সে ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরাও তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা ৷ কত টাকার বিনিময়ে অয়ন শীল চাকরির লেনদেন করতেন, সেই তথ্যও তদন্তকারীদের হাতে এসেছে ৷ 2012 সালের টেটের একটি ওএমআর শিটও পাওয়া গিয়েছিল অয়নের বাড়ি থেকে ৷
আরও পড়ুন: অয়নকে সংশোধনাগরে গিয়ে জেরা করবে সিবিআই
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এই বক্তব্য তুলে ধরার পর কলকাতা হাইকোর্ট জানায় যে, প্রয়োজন মনে করলে সিবিআই বা ইডি পৃথক মামলা রুজু করে পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে পারে ৷ সেই নির্দেশ মেনেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা পৃথক মামলা রুজু করে পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেন ৷ সেই মতোই বুধবার উত্তর 24 পরগনার সল্টলেট ছাড়াও উত্তর দমদম পৌরসভা ও হুগলির বিস্তীর্ণ জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ৷
কিছুদিন আগেই সিবিআই রাজ্য সরকারের দুটি দফতরকে চিঠি দিয়ে জানতে চায় যে, 2011 সাল থেকে 2017 সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোন আধিকারিকরা যুক্ত ছিলেন ৷ তাঁদের নাম ও ঠিকানা-সহ বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিল সিবিআই ৷ এমনকী সেই সময় নিয়োগে যুক্ত থাকা যে আধিকারিকরা অবসর নিয়েছেন, তাঁদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয় ৷ এরই মধ্যে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর সঞ্জয় মিশ্র দিল্লি থেকে কলকাতায় পা রাখেন ৷ বিভিন্ন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্ত কোন পথে এগোচ্ছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর নেন তিনি ৷ তাঁর তত্ত্বাবধানে টিম গঠন করে দুর্নীতির তদন্তের পরবর্তী স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা হয় ৷ এরপরেই আজ সকালে দেখা গেল শহরের বিভিন্ন জায়গায় হানা দেয় সিবিআই ৷