কলকাতা, 14 সেপ্টেম্বর: আলিপুর নিম্ন আদালতের বিচারক কলকাতা পুলিশকে কুন্তল ঘোষের চিঠির বিষয়ে যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল, সেই নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বৃহস্পতিবার আদালত জানিয়েছে, ওই নির্দেশ আপাতত কার্যকর করা যাবে না । একই সঙ্গে সিবিআই আধিকারিকদের হেনস্তা না করতে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ সিবিআই ও ইডির যে আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তাঁকে হেনস্তা করার অভিযোগ এনেছিলেন চিঠির মাধ্যমে, সেই বিষয়ে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন নিম্ন আদালতের বিচারক । গত 21 অগস্ট নিম্ন আদালত এই নির্দেশ দিয়েছিল ৷ তার উপর বৃহস্পতিবার স্থগিতাদেশ দিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা । আগামী 21 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে বলে নির্দেশে তিনি জানিয়েছেন ।
এ দিন শুনানিতে সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে । কুন্তল ঘোষ নিম্ন আদালতের বিচারকের কাছে একটা আবেদন জানান যে তিনি কিছু বলতে চান । তারপর যথারীতি নিম্ন আদালতের বিচারকের কাছে সেনভির নামে অভিযোগ করেন । আদালতের নির্দেশেই
ডিআইজি সিবিআই সেনভির নেতৃত্বে তদন্ত হচ্ছিল । পাশাপাশি চিঠি লিখে থানায় অভিযোগ করেন ।’’
আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘‘বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই সিবিআই আধিকারিকদের নিযুক্ত করে তদন্ত হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির । কিন্তু নির্দেশ সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করা হয়েছে । রাজ্যের পুলিশ অফিসাররা সিবিআই আধিকারিকদের একাধিকবার বিভিন্ন অছিলায় ডেকে হেনস্তা করছেন । কুন্তল ঘোষ অভিযোগ করে, তাঁর প্রাইভেট পার্টসে আঘাত করা হয়েছে । এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও টাকা তাঁর থেকে নিয়েছেন কি না, জানতে চাওয়া হয়েছে । যা সম্পূর্ণ বোধগম্যহীন মিথ্যা অভিযোগ ।’’
আরও পড়ুন: কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলার তদন্তে কেন কলকাতা পুলিশ? প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে সিবিআই
তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বিচারাধীন একজন বন্দির (কুন্তল) প্রভূত যোগসাজশ রয়েছে, তা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ঘটনা থেকে স্পষ্ট ।’’
ইডি আইনজীবী আদালতে জানান, কুন্তল ঘোষের চিঠির প্রসঙ্গে এখন রাজ্য পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে । নিম্ন আদালত এইভাবে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে তদন্তের বিষয়ে রাজ্য পুলিশের অনুপ্রবেশের রাস্তা করে দিতে পারে না । এই ধরনের নির্দেশকে অবিলম্বে খারিজ করা উচিত । নিম্ন আদালত বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু নির্দেশ দিয়েছে, যার জন্য ইডির আধিকারিকদের হেনস্তার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ।
আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই ধরনের পাবলিক স্ক্যামের তদন্তে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না ।হাইকোর্টের প্রভূত ক্ষমতা রয়েছে৷ অবিলম্বে এই ধরনের নির্দেশ খারিজ করে দেওয়া উচিত ।’’ অন্যদিকে রাজ্যের আইনজীবী শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তাদের নোটিশ পাঠালে তারা নাও উত্তর দিতে পারে ৷’’ তিনি কলকাতা পুলিশের তদন্তে স্থগিতাদেশ না দেওয়ার আর্জি জানান ৷ শেষপর্যন্ত আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা পুলিশের তদন্তের উপর ৷
আগামী বৃহস্পতিবার শুনানি । ইতিমধ্যে অফিসারদের কোনোরকম হেনস্তা করা যাবে না মৌখিক ভাবে জানালেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।
এদিকে এদিন আদালতে ফের সিবিআইয়ের তরফে উল্লেখ করা হয়েছে, "একদিকে টুইন টাওয়ার আর অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ৷"
আরও পড়ুন: লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে ডাউনলোড হওয়া 16টি ফাইল দেখতে চাইল হাইকোর্ট
অন্যদিকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোম্পানি লিপ্স ও বাউন্ডস কোম্পানির আদৌ কোনও যোগ আছে কি না, সেই বিষয়ে পরের শুনানিতে সিবিআই-ইডিকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি এই কোম্পানির ডিরেক্টর ও সিইওদের সম্পত্তির পরিমাণ জানাতে হবে আদালতকে । এবং সিনেমা জগতের কোনও ব্যক্তি যুক্ত থাকলে, তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণও জানাতে হবে বলে আদালতে নির্দেশ বিচারপতির ।
এছাড়া এ দিন রক্ষাকবচ চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি । তাঁদের অভিযোগ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিস থেকে 16টি ফাইল ডাউনলোডকে কেন্দ্র করে তাদের তদন্তকারী আধিকারিকদের হেনস্তা করছে কলকাতা পুলিশ । ফোন করে তথ্য চাওয়া হচ্ছে৷ ই-মেল পাঠানো হচ্ছে । সেই কারণে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তকারী অফিসারদের রক্ষাকবচ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে তারা ।
এ দিন বিষয়টি নিয়ে বিচারপতি সিনহার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইডির আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী । তিনি বলেন, ‘‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিস থেকে ডাউনলোড করা ওই 16টি ফাইলকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ । সেই নির্দেশে বলা হয়েছে ওই 16টি ফাইলকে কোনোভাবে প্রামাণ্য নথি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না । তা সত্ত্বেও ওই 16টি ফাইলকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া একটি জেনারেল ডায়েরির ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ ।’’
আরও পড়ুন: 'এটুকুই মোটে রিপোর্ট ! আর কতদিন লাগাবেন ?' কুন্তলের চিঠি নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্তে অখুশি বিচারপতি
ইডির আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী আরও বলেন, ‘‘সেই তদন্তের নামে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধানে যুক্ত ইডি অফিসারদের অকারণ হেনস্তা করছে কলকাতা পুলিশ । বিভিন্ন সময়ে তাদের ফোনও করা হচ্ছে ৷ ই-মেল করে তথ্য চেয়ে পাঠানো হচ্ছে । যার জেরে মূল তদন্তের গতিপ্রকৃতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে । সে কারণেই ইডি অফিসারদের রক্ষাকবচ দিক হাইকোর্ট ।’’