কলকাতা, 24 নভেম্বর: ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে 29 নভেম্বর (আগামী বুধবার) বিজেপির সভায় অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট । শুক্রবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে যে ওই স্থানেই সভা করার জন্য বিজেপিকে অনুমতি দিতে হবে ৷ উল্লেখ্য, ওই সভার মূলবক্তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির হেভিওয়েট নেতা অমিত শাহ ৷
এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ ওই সভার অনুমতি দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল ৷ সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার ৷ শুনানিতে রাজ্য সরকার জানায় যে এই ধরনের কর্মসূচির ক্ষেত্রে 23 দিন আগে আবেদন করতে হয় ৷ কিন্তু শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশই বহাল রাখল ৷ একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, যেহেতু এই ধরনের সভা, জনসমাবেশে ট্রাফিক ব্যবস্থার অবনতি হয়, তাই পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাথায় রেখে যুক্তিসংগত কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে ৷
এ দিন শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত বলেন, ‘‘ভিক্টোরিয়া হাউজ হচ্ছে ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশনের (সিইএসসি) অফিস । তিন রাস্তার সংযোগস্থল । শাসক দল তৃণমূল ওই স্থানেই সভা করে কারণ, 1993 সালের 21 জুলাই তৎকালীন কংগ্রেস দল ভোটারদের পরিচয় পত্র প্রদানের দাবিতে আন্দোলন করেছিল । সেই আন্দোলনে প্রায় 13 জন যুব কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয় । পরে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর সেই দিনটি উদযাপন করে । এ ছাড়া আলাদা কোনও বিষয় নেই ওই স্থানে শাসক দলের সভা করার । বিজেপি চাইলে একটু সরে গিয়ে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল অথবা রানি রাসমনি অ্যাভেনিউতে সভা করতে পারে ।’’
প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, "আমি বিগত দু’বছর ধরে দেখছি কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় মিটিং-মিছিল করা হয় । একটা রাস্তায় অনুমতি না পেলে অন্য রাস্তায় করা হয় । এতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হয় । কিন্তু এটাই এই রাজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । শুধু রাজনৈতিক দল নয় । বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনও করে ।" তিনি আরও বলেন, ‘‘সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া উচিত । সবকিছুতেই এখন রাজনীতি । এই ধরনের ঘটনা নতুন নয় । কেউ সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না । আজ থেকে তাহলে একুশে জুলাই-এর সভা বাতিল করে দিন ।’’
রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত তখন বলেন, "বিজেপি যে আবেদন করেছিল, সেখানে জানানো হয় প্রায় 10 হাজার সমর্থক ও দু’শোর মতো গাড়ি আসতে পারে ৷ সভা করার জন্য নির্দিষ্ট দিনে আবেদন করা হয়নি ।" এর পর প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে । নানা রকম অজুহাত দিয়ে সভা আটকানোর চেষ্টা । রাজনীতির তাস না খেলে কিছু যুক্তিগ্রাহ্য শর্ত দিয়ে মিছিলের অনুমতি দিয়ে দিলেই তো মিটে যেত ।’’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘হনুমান জয়ন্তীর পর মিটিং-মিছিল নিয়ে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, সেগুলো কার্যকর করা হয়নি এখনও । একই সঙ্গে এই ধরনের মিটিং-মিছিলে সরকারি বাসগুলো তুলে নেওয়া হয় সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা না ভেবেই । সেদিকগুলো খেয়াল রাখলে সাধারণ মানুষের এবং স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা হবে ।’’
আরও পড়ুন: