কলকাতা, 22 জুন: ফের কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷ বিচারপতি অমৃতা সিনহার প্রশ্নের মুখে বৃহস্পতিবার পড়তে হয় কমিশনকে ৷ কমিশনের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, "পঞ্চায়েত ভোট কি হচ্ছে ? নির্বাচন কমিশনার পদে কি তিনি (রাজীবা সিনহা) এখনও বহাল আছেন ? আমি বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে !"
এ দিন 81 জন আইএসএফ প্রার্থী মনোনয়ন বাতিল সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গল বেঞ্চে ৷ সেই মামলার শুনানিতেই বিচারপতির কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হল কমিশনকে । কীভাবে এত প্রার্থীর নাম একসঙ্গে বাতিল হল, সেই প্রশ্নই তোলে আদালত ৷ আগামিকাল শুক্রবার দুপুর 2টোয় এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৷
যে 81 জন আইএসএফ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল নিয়ে এই মামলা, তাঁরা সকলেই দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড় এলাকার বাসিন্দা ৷ তাঁদের মনোনয়নত্র বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ৷ সেই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয় ৷ সেই মামলায় বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ওই প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিয়ে মনোনয়নের ব্যবস্থা করতে ৷ সেই মতো গত 15 জুন ভাঙড়-2 ব্লকের 81 জন আইএসএফ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন ৷
তার পর ওই প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায় ৷ অভিযোগ, 20 জুন থেকে আইএসএফ প্রার্থীরা দেখতে পান কমিশনের ওয়েবসাইটে তাঁদের নাম নেই । ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের মনোনয়ন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয় । শুনানিতে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম দাবি করেন, স্ক্রুটিনিতেও পাস করে গিয়েছিলেন ওই প্রার্থীরা ৷ এদিকে আদালতে আবার তৃণমূলের দাবি, তাঁরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে । এই সওয়াল-জবাবের পর দুপুর 2টোর মধ্যে কমিশনের জবাব তলব করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ৷
আরও পড়ুন: এত হিংসা হলে পঞ্চায়েত ভোট বন্ধ করে দেওয়া উচিত, মন্তব্য বিচারপতি সিনহার
দ্বিতীয়ার্ধে যখন এই মামলার শুনানি শুরু হয়, তখন বিচারপতি অমৃতা সিনহা কমিশনের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘‘নির্বাচন কী চলছে ? নির্বাচন কমিশনার কী আছেন ? রাজ্যপাল তাঁর নিয়োগপত্র ফিরিয়ে নিয়েছেন শুনলাম ?’’ কমিশনের আইনজীবী সোনাল সিনহা বলেন, ‘‘নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে । কমিশনার আছেন। যেটা শুনছেন, ওটা স্পেকুলেশন ।’’
এর পর বিচারপতি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের প্রসঙ্গ তোলেন ৷ জানতে চান, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাচ্ছে ? এটা একটা নির্বাচন । সবাইকে প্রতিযোগিতা করতে দিতে হবে তো ?’’ তখন বিজয়ী প্রার্থীদের তরফে সপ্তাংশু বসু বলেন, ‘‘আইনে সেই প্রভিশন আছে তো ?’’
এই মামলায় আইএসএফ-এর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ৷ তিনি বলেন, ‘‘স্ক্রুটিনিতে আমাদের মনোনয়ন পাস হয় । ফাইনাল লিস্টে নামও ছিল । পরের দিন দেখা যায় লিস্ট থেকে নাম উধাও । যে শংসাপত্র দেখানো হচ্ছে ওটা ভুয়ো ।’’ তখন বিজয়ীদের পক্ষে সপ্তাংশু বসু বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচিত । আমাদের তার শংসাপত্র আছে । আইএসএফ প্রার্থীরা যদি মনোনয়ন জমা করতে না পারেন, আমি কী করতে পারি ?’’ তখন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আবার বলেন, ‘‘82টি মনোনয়ন জমা পড়ে ৷ 20 তারিখ সকালে নাম ছিল৷ বিকেলে নাম উধাও ।’’
সওয়াল জবাব শেষে বিচারপতি সিনহা আগামিকাল দুপুর 2টোয় এই মামলার পরবর্তী শুনানি করবেন বলে জানিয়েছেন ৷ নিজেদের বিজয়ী বলে যাঁরা দাবি করছেন, এই রকম অন্তত 10 জনের নাম মামলায় যুক্ত করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।
আরও পড়ুন: বিদেশে বসে থাকা প্রার্থীর নামে জমা মনোনয়নও গ্রাহ্য, তাজ্জব বিচারপতি অমৃতা সিনহা