কলকাতা, 31 মার্চ: কলকাতা হাইকোর্টে আবারও ধাক্কা খেল রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বা সিআইডি ৷ আগ বাড়িয়ে কয়লাপাচার কাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে শুনতে হল বিচারপতির ভর্ৎসনা ৷ সংশ্লিষ্ট একটি মামলায় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা তাদের উদ্দেশে বললেন, কয়লাপাচার তদন্তে জোর করে থাবা বসাচ্ছে সিআইডি ! এই মামলার প্রেক্ষিতেই কয়লাপাচারে (মতান্তরে কয়লার গুঁড়োপাচারে) সিআইডি তদন্তের উপর চার সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দিলেন বিচারপতি মান্থা ৷ প্রসঙ্গত, এই মামলাটিতে আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে হেফাজতে নিতে চায় সিআইডি ৷ কিন্তু, আদালতের শুক্রবারের নির্দেশের পর আপাতত সেটি সম্ভব নয় ৷
ঘটনার সূত্রপাত হয় 2020 সালে ৷ পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জ থানায় একটি এফআইআর করে ইসিএল ৷ সেই এফআইআরে তিনজন অভিযুক্তের নাম ছিল ৷ কিন্তু, সেই তালিকায় জিতেন্দ্র ছিলেন না ৷ তা সত্ত্বেও পুলিশ ও সিআইডি সেই মামলায় জিতেন্দ্রর যোগসূত্র খুঁজে পায় এবং তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চায় ৷ এর বিরোধিতায় আগেই একবার হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা রুজু করেছিলেন জিতেন্দ্র ৷ সেই মামলায় বিচারপতি মান্থা বলেছিলেন, কয়লাপাচার কাণ্ডে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করছে ৷ তাই আলাদা করে এখানে আর সিআইডি তদন্তের প্রয়োজন নেই ৷ সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়ের বিরোধিতায় সেই সময়েই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলা রুজু করে রাজ্য সরকার ৷ কিন্তু, ডিভিশন বেঞ্চও সিঙ্গল বেঞ্চের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে ৷
এই ঘটনার পর জিতেন্দ্র তিওয়ারি সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা করেন ৷ কয়লাপাচার নিয়ে চলা তদন্ত প্রক্রিয়ায় সিআইডি যাতে কোনওভাবেই হস্তক্ষেপ করতে না পারে, এবং তাঁর বিরুদ্ধেও যাতে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ কোনও পদক্ষেপ করতে না পারে, শীর্ষ আদালতে সেই আবেদন করেন তিনি ৷ কিন্তু, সেই মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি ৷
এই অবস্থায় গত 28 মার্চ নিম্ন আদালতে অন্য একটি মামলা রুজু করে রাজ্য পুলিশ ৷ তাতে বলা হয়েছে, কয়লাপাচার নয়, কয়লার গুঁড়োপাচারের ঘটনায় জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা দরকার ! বিষয়টি নজরে আসতেই আবারও কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন জিতেন্দ্র ৷ বৃহস্পতিবার তাঁর আইনজীবী বিচারপতি মান্থার এজলাসে মামলা রুজু করেন ৷ সেই মামলার শুনানি হয় শুক্রবার ৷ তাতে বিচারপতি ফের একবার জানিয়ে দেন, কয়লা হোক বা কয়লার গুঁড়ো, একই বিষয়ে চলা মামলার তদন্ত আলাদা-আলাদাভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংস্থা করবে, তার কোনও প্রয়োজন নেই ৷
আরও পড়ুন: বিকাশ মিশ্রের চিকিৎসায় আদালত অবমাননা, প্রেসিডেন্সি জেল সুপারের জরিমানা
এর প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মামলায় সিআইডি তদন্তের উপর চার সপ্তাহের স্থগিতাদেশ কার্যকর করেন বিচারপতি মান্থা ৷ একইসঙ্গে, সিআইডিকেও চার সপ্তাহ সময় দেন তিনি ৷ সিআইডি কেন এই তদন্তটি করতে চাইছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও যুক্তি-সহ হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দেন ৷ আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সিআইডিকে এই হলফনামা আদালতে পেশ করতে হবে ৷