কলকাতা, 21 জুন: ট্রাম বাঁচাতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বুধবার প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম নির্দেশ দেন, কলকাতার ঐতিহ্য ট্রাম বাঁচাতে একটি বিশেষ কমিটি তৈরি হবে ৷ তাতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য, হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরাও থাকবেন ৷ উল্লেখ্য কলকাতার ট্রাম সংরক্ষণের দাবিতে আইনজীবী সুলগ্না মুখোপাধ্যায় কলকাতা হাইোকর্টে মামলা করেছিলেন ৷ সেই মামলার শুনানিতে আজ এই নির্দেশ দেয় আদালত ৷
এদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, "রাজ্য সরকারের হেরিটেজ সংরক্ষণ করা উচিত ৷" প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানায়, তিন সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে কমিটি গঠন করে সদস্যদের নাম আদালতকে জানাতে হবে ৷ শুধু তাই নয়, পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত ট্রামের কোনও সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না ৷ প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম মন্তব্য করেন, "দুর্গাপুজোকে যে ভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে সম্মান লাভ করছে রাজ্য, ট্রাম বাঁচাতেও সরকারের একইভাবে এগিয়ে আসা উচিত ৷"
মামলাকারীর বক্তব্য, 1873 সালে প্রথম ট্রাম চালু হয় ৷ ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কলকাতার একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল ৷ ট্রাম দূষণমুক্ত পরিবেশবান্ধব যান ৷ এদিকে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম ট্রাম না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ এদিকে ট্রামকে হেরিটেজ হিসাবে সংরক্ষণ করা উচিত বলে দাবি জানান মামলাকারী ৷
আরও পড়ুন: পরিবেশবান্ধব ট্রাম বাঁচাও, নাগরিক মঞ্চে সামিল বুদ্ধিজীবীরা
রাজ্য সরকারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ নাথ মুখোপাধ্যায় জানান, রাজ্য ট্রাম সংরক্ষণ করতে চায় ৷ কীভাবে তা করা যায়, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার ৷ তিনি ব্যক্তিগত মত হিসেবে আদালতে জানান, ট্রামগুলি আয়রন ও স্টিল দিয়ে তৈরি করা গেলে ভালো হয় ৷
প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কলকাতার বাসিন্দাদের ট্রাম নিয়ে উৎসাহ আছে ৷ তবে ট্রাম বাঁচাতে নতুন প্রযুক্তি আনা দরকার ৷ ট্রাম পরিবহণ ব্যবস্থা নষ্ট করে ফেলাটা কাজের কথা নয় ৷ ট্রাম সংরক্ষণ ও তাকে নতুন করে ব্যবহারের বিষয়ে ভাবা উচিত ৷ মামলাকারী আরটিআই করলে রাজ্য একটি রিপোর্ট দিয়েছে ৷ তাতে জানানো হয়েছে, কলকাতায় 116.62 কিলোমিটার ট্রাম লাইন রয়েছে ৷ এর মধ্যে 33 কিলোমিটার লাইনে ট্রাম চলে ৷ এখন মাত্র তিনটি রুটে ট্রাম চলাচল করছে ৷ 6টি ট্রাম ডিপো আছে ৷ সবগুলি শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ৷
এই ট্রামডিপোগুলির মধ্যে এখন মাত্র দু'টি ডিপো কার্যকর রয়েছে ৷ বেলগাছিয়া আর টালিগঞ্জ ডিপোর জায়গা বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে ৷ সেই জায়গাগুলিতে একন প্রোমোটিং হচ্ছে ৷ আর এই বিক্রির কারণ, ভিআরএস (VRS) নেওয়া কর্মচারীদের বকেয়া মেটানোর টাকা জোগাড়, ঋণের টাকা শোধ করা, ইলেকট্রিক বাস কেনা ৷ মামলাকারী আদালতে দাবি করে, ট্রামের জায়গাগুলি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত ৷ সরকারি জায়গা সরকারি কোনও অফিসেরই কাজে লাগানো উচিত ৷
আরও পড়ুন: ঘোড়ায় টানা থেকে এসি কামরা, তিলোত্তমায় ট্রামের সার্ধশতবর্ষ
কলকাতার ট্রাম বাঁচানো প্রসঙ্গে আজ প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম আরও বলেন, "টয় ট্রেন যে ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে (দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে) সেই ভাবে কলকাতার ট্রাম সংরক্ষণ করা যায় ৷ পর্যটনকে প্রধান্য দিলে কলকাতার হেরিটেজও বাঁচানো যাবে এবং সরকারের রোজগারও হবে ৷ তাই এর জন্য একটা কমিটি গঠন করা যেতে পারে ৷" তিনি জানান, এই কমিটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ সদস্যরা থাকবেন । তাঁরা ট্রাম পরিবহণ ব্যবস্থার বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আদালতকে জানাবেন ৷