কলকাতা, 24 অগস্ট: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সভা আটকানোর চেষ্টা করায় বেজায় ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি । "এটা কোনও পুলিশ স্টেট নয় বা জরুরি অবস্থা জারি হয়নি, যে এইভাবে 144 ধারা জারি করা হবে ৷ বিরোধীদের আটকাতে এমন বাচ্চাদের মত যুদ্ধ করা যায় না ।" এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত । কাঁথির এসডিও'র জারি করা 144 ধারার নির্দেশ খারিজ করে রাজ্যকে তুলোধনা করল হাইকোর্ট । একইসঙ্গে 26 অগস্ট নতুন করে শুভেন্দু অধিকারীর সভার অনুমতি দিলেন বিচারপতি ।
শুভেন্দু অধিকারীর তরফে আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার আদালতে বলেন, "19 অগস্ট খেজুরিতে শুভেন্দুর সভা ছিল । কিন্তু সেদিন থেকে সেখানে 144 ধারা জারি করা হয়েছে । এসডিও'র সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে মামলা । খেজুরিতে 19 আগস্ট সভা করার কথা ছিল শুভেন্দুর । কিন্তু তার আগে 18 তারিখ 144 ধারা জারি হয় । পরে 26 অগস্ট সভার দিন স্থির হয় । তালপট্টি ঘাট উপকূল থানা আর অনুমতি দেয়নি ।"
ক্ষুব্ধ বিচারপতি সেনগুপ্ত রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, "বাচ্চাদের মত আচরণ করবেন না । এটা বাচ্চাদের মতো ঝগড়া হয়ে যাচ্ছে । যেহেতু সেখানে সভার কথা জেনেছেন, তাই মনে হচ্ছে তড়িঘড়ি 144 ধারা প্রয়োগ করে দিই? খেজুরি ভাঙড় নয়, সেখান থেকে 144 ধারা প্রত্যাহার হয়েছে । একটা সবপক্ষের বোঝাপড়ার জায়গা থাকা দরকার । এমন হলে খারাপ উদাহরণ তৈরি হবে । আপনাদের এত ইগোর লড়াই কিসের? অশান্তির কথা যদি বলেন, তাহলে আপনারা যাদবপুরে 144 ধারা জারি করেছেন? এটা কী হচ্ছে ! এইভাবে আটকানো যায় না ৷"
বিচারপতি নির্দেশে জানিয়েছেন, 144 ধারা জারির ক্ষেত্রে কোনও পূর্ব কারণ দেখানো হয়নি । আর ঠিক সভার আগের দিন জারি করা হয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এই ভাবে 144 ধারা জারি করা যায় না । এমন নির্দেশ খারাপ ধারণা তৈরি করে । কাউকে আটকানোর জন্য এটা করা হচ্ছে বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক । 10 দিনে চারটে এফআইআর হয়েছে সেখানে । এর প্রেক্ষিতে 144 ধারা জারি । আদালত মনে করছে, 144 ধারা জারির ক্ষেত্রে আইনে যেসব অবস্থার কথা বলা আছে তার কোনওটাই নেই এই ক্ষেত্রে । আশঙ্কার কথা বলা হলেও নির্দিষ্টভাবে কোনও ঘটনার কথা পুলিশ বলছে না । কোর্ট একেবারেই এই 144 ধারা জারির পক্ষে পরিস্থিতি আছে বলে মনে করেছে না ।
আরও পড়ুন: খেজুরিতে সভা বাতিল শুভেন্দুর, আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি বিরোধী দলনেতার
তিনি আরও জানান, মনে রাখা দরকার, এটা পুলিশ স্টেট নয় বা জরুরি অবস্থাও জারি হয়নি । আরও ভালোভাবে বিবেচনা করে এটা করা উচিত । এসডিওর জারি করা নির্দেশ খারিজ করে সভার অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যে রাজ্যের, তাও জানিয়ে দিয়েছে আদালত। 26 অগস্ট দুপুর 2টো থেকে সন্ধে 6টা পর্যন্ত সভা করতে পারবেন বিরোধী দলনেতা। উদ্যোক্তাদের তরফে তিনজনের নাম দেওয়া হবে, যাদের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ রাখবে বলে নির্দেশে জানিয়েছেন বিচারপতি। সভা থেকে যাতে উস্কানিমূলক মন্তব্য না-করা হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে ৷ পূর্ব মেদিনীপুর এসপিকে সভায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।