কলকাতা, 17 অগস্ট: চব্বিশ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অন্তঃসত্ত্বা 11 বছরের নাবালিকা ৷ তার গর্ভপাত করানো সম্ভব কি না, তা জানতে দ্রুত মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বৃহস্পতিবার বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য নির্দেশ দেন, 24 ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে হবে ৷ বোর্ড নাবালিকার গর্ভপাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং তা আদালতকে জানাবে ৷
পূর্ব মেদিনীপুরের সিএমওএইচ এবং তমলুক মেডিক্যাল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্টকে সেই মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ 21 অগস্ট এই বিষয়ে আদালতের রিপোর্ট পেশ করবে বোর্ড ৷ বুধবার ওই নাবালিকার পরিবার গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ৷
গতকাল সকালে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত শুনানির আর্জি জানান আইনজীবীরা ৷ বিচারপতি তা মঞ্জুর করেন এবং দুপুর দু'টোয় শুনানি শুরু হয় ৷ বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য জানান, মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইনের (1971) 3 নম্বর ধারা অনুযায়ী 24 সপ্তাহ পরে গর্ভপাতের বিষয়ে বাধা রয়েছে ৷ তার পরেও নাবালিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আদালত চিন্তিত ৷ মেয়েটির বয়স মাত্র 11 বছর ৷ পাশাপাশি তার পারিবারিক আর্থিক পরিস্থিতিও তেমন ভালো নয় ৷ এদিন শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারপতি ভট্টাচার্য ৷
আরও পড়ুন: 11 বছরের মেয়ে 24 সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা, গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে পরিবার
ওই নাবালিকা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ৷ পরিবারের দাবি, বাবা-মায়ের অজান্তে এই ঘটনা ঘটেছে ৷ কয়েক মাস ধরে ওই নাবালিকার উপর শারীরিক নির্যাতন চলার ফলে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে ৷ মেয়ে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে শক্ত নয় ৷ ওই নাবালিকা শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ নয় ৷ মেডিক্যাল রিপোর্ট বলছে, অন্তঃসত্ত্বার বয়স কম হওয়ায় গর্ভস্থ সন্তানের ওজনও কম ৷ সঙ্গে আরও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে ৷
মেয়েটির অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে চিকিৎসকরা জানতে পারেন, মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা ৷ নাবালিকার বাড়ির লোকজন এই ঘটনা জানতে পেরে গর্ভপাত করাতে চায় ৷ তখন হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা ৷ তাই মেয়েটির গর্ভপাত করানোর জন্য হাইকোর্টের অনুমতি প্রয়োজন ৷ তখন বাধ্য হয়ে পরিবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ৷
দেশের আইন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কোনও মহিলা, নাবালিকা বা নাবালিকার পরিবার 20 সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করাতে পারে ৷ বিশেষ কোনও রোগ বা জটিল শারীরিক পরিস্থিতিতে তা 24 সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। সেক্ষেত্রে গর্ভপাত করাতে হলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন ৷
বুধবার এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য একাধারে অস্বস্তি এবং অন্যদিকে বিস্ময় প্রকাশ করেন ৷ মেয়েটির পরিবারের তরফে আইনজীবী আদালতে জানান, মেয়েটি শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৷ সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় ৷ এই বয়সে সন্তানের জন্ম দেওয়ার মতো মানসিক পরিস্থিতি তার নেই ৷ 24 সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অন্তঃসত্ত্বার গর্ভপাতের নজির কম ৷ এই অবস্থায় নাবালিকার পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আদালত যদি অনুমতি দেয়, ভালো হয় ৷
আরও পড়ুন: 'মা হতে রাজি নই', অন্তঃসত্ত্বা কুমারীর গর্ভপাতে সম্মতি সুপ্রিম কোর্টের
তিনি আরও জানান, নাবালিকার পরিবারটি আর্থিক ভাবে অত্যন্ত দুর্বল ৷ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও খুব একটা নেই ৷ আইন সম্পর্কে তাঁরা একেবারেই ওয়াকিবহাল নন ৷ সেই কারণে এই শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ জানাতেও দেরি করেছেন নাবালিকার পরিবার ৷ জুলাই মাসে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের সাহায্যে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থানায় এফআইআর দায়ের করা হয় ৷ ওই নাবালিকা এখন একটি হোমে রয়েছে ৷ সে মা হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই ৷