কলকাতা,27 ফেব্রুয়ারি: দু'দিন আগেই আক্রান্ত হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক। এই ঘটনায় এবার রাজ্যের রিপোর্ট তলব করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Governor C V Ananda Bose Sought Report Over Attack on Central Minister)। পাশাপাশি সুকৌশলে 355 ধারা নিয়েও নিজের বক্তব্য তুলে ধরলেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে নতুন করে রাজ্যে 355 ধারা জারির দাবি তুলছে গেরুয়া শিবির। দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে সুকান্ত মজুমদার এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ঠিক এমনই আবহে রাজ্যপালের রবিবারের বিবৃতি তাৎপর্যপূর্ণ। তবে জবাব দিতে দেরি করেনি তৃণমূলও। দলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, "বেল পাকলে কাকের কী? ওরা যতই 356, 357 ধারা জারির দাবি করুক, ওদের (বিজেপি) জন্য তো হারই শিরোধার্য।"
রাজ্যপালের প্রাক্তন প্রধান সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীর অপসারন রাজ্য ও রাজ্যপালের সম্পর্কে কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল। এবার নিশীথের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় কড়া মনোভাব নিল রাজভবন। রিপোর্ট চাওয়ার পাশাপাশি বিবৃতিতে রাজ্যপাল উল্লেখ করেছেন, বহু মহল থেকে তাঁর কাছে 355 ধারা জারি করার দাবী এসেছে। পাশাপাশি এও জানান রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে রাজ্যপাল নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারেন না। এর আগে জগদীপ ধনকর পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীন রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সম্পর্ক প্রায় তলানিতে ঠেকেছিল। কিন্তু তাঁর সময়েও রাজভবন থেকে জারি বিবৃতি বা বক্তব্যে এভাবে 355 ধারার প্রসঙ্গ উঠে আসেনি। এবার সেটাই হল।
বিবৃতিতে রাজ্যপাল আরও বলেছেন, নিশীথ প্রামাণিকের উপরে আক্রমণের ঘটনা নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করতে হবে। আক্রমণকারীদের প্রতি নরম অবস্থান নেওয়া যাবে না। যে ভূমি সভ্যতা এবং সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত, সেই রাজ্যে এই ধরনের ঘটনায় আমি মর্মাহত। প্রতিবাদ নিশ্চিতভাবে গণতন্ত্রের এক জরুরি শর্ত। কিন্তু হিংসা কোনও সভ্য সমাজের নিদর্শন নয়। আন্দোলন করার অধিকার আছে কিন্তু গণতন্ত্র এভাবে হিংসা ছড়ানোর অধিকার সমাজ কাউকে দেয়নি। এই ধরনের ঘটনা ঘটায় আমি আশঙ্কিত এবং অবাক। একইসঙ্গে হিংসাকে নির্মম ভাবে হিংসাকে উপড়ে ফেলার কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। আরও বলা হয়েছে, সমাজবিরোধী আইন হাতে নেওয়ার চেষ্টা করলে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে নিতে হবে। কোনভাবেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় শিথিলতা বরদাস্ত করা যাবে না। প্রশাসনের বজ্রমুষ্ঠিতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "বেল পাকলে কাকের কী? ওরা (বিজেপি) যতই 356, 357 ধারা জারির দাবি করুক। ওদের জন্য তো হারই শিরোধার্য। তৃণমূলের মতো জনসমর্থন তো নেই ওদের। রাজভবনের উঠোন, সিবিআই, ইডি - এইসব হাতিয়ার ওদের। ওতে আর যাই হোক, ভোটে জেতা যায় না। রাজ্যপালের বিবৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিস্থিতি, বাস্তব বিচার করে এই বিবৃতি কাম্য ছিল। আপনি রাজ্যপাল। আপনার একটা বিবৃতি এল না কেন যে বিএসএফকে সতর্ক হতে হবে। বাংলার এক যুবককে 180টা গুলি দিয়ে ঝাঁঝরা করে মেরে ফেলা হয়েছে। কেন বিবৃতি দেননি রাজ্যপাল! সিবিআইয়ের এফআইআর নাম আছে এমন একজনের সঙ্গে আপনি কথা বলছেন। তাঁকে সময় দিচ্ছেন। রাজ্যপালের পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে জ্ঞান দেওয়ার আগে বিএসএফ আর সিবিআইকে জ্ঞান দেওয়া উচিত। তারপর আপনার এইসব চাকরি বাঁচানোর ট্রিটমেন্ট আপনি করবেন। রাজ্যপাল সম্মানীয়। তিনি তাঁর কথা বলতে পারেন। তবে রাজ্যপালের বক্তব্য কেন্দ্রের মনোভাবের যদি প্রতিফলন হয় তাহলে তার যুক্তিযুক্ত জবাবও আমরা দেব।
কুণালের কটাক্ষ, রাজ্যপালের সোর্স পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি ঠিকঠাক তদন্ত করুন। আশা করব রাজ্যপাল বিজেপি দূতে পরিবর্তন হবেন না, রাষ্ট্রপতির দূতেই থাকবেন। শুধু কুণাল ঘোষ নয় এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন দলের অন্যতম মুখপাত্র তথা সাংসদ শান্তনু সেনও। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য বিজেপি নেতাদের দিকেই আঙ্গুল তুলেছেন তিনি। তিনি বলেন,"বিজেপি নেতারাই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে-ঘুরে উসকানিমূলক মন্তব্য দিচ্ছেন। তাঁরাই রাজ্যের শান্তির বাতাবারণ নষ্ট করে অশান্তির বাতাবরণ ছড়াচ্ছেন।"
আরও পড়ুন:নবান্নকে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ, নন্দিনীর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ রাজ্যপালের