ETV Bharat / state

কাজে এল না সিদ্দিকি টনিক, এই প্রথম বিধানসভা বাম-কংগ্রেসহীন - প্রথম বিধানসভা বাম-কংগ্রেসহীন

সংসদীয়-রাজনীতিতে এই প্রথম রাজ্যে খাতা খুলতে ব্যর্থ হল বাম-কংগ্রেস ৷ আইএসএফ-এর সঙ্গে জোটই তাদের রাজ্য থেকে নিশ্চিহ্ন করল বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ৷ এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে তারা কী ভাবে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখবে, সেটাই প্রশ্ন ৷ আলোচনায় সুমিত গুহ ৷

West Bengal Assembly Election Result 2021
ছবি
author img

By

Published : May 2, 2021, 10:34 PM IST

কলকাতা, 2 মে: জোট গড়েও স্বাধীনতার পর এই প্রথম খালি হাতে ফিরতে হল বাম এবং কংগ্রেসকে ৷ এবারের বিধানসভায় কংগ্রেস-সিপিএমের কোনও প্রতিনিধি থাকবে না ৷ 1972 সালে সিপিএম-এর ভরাডুবিতেও খাতা বন্ধ হয়নি বামেদের ৷ তেমনি 1977 সালে কংগ্রেসের চরম বিপর্যয়ের সময়েও শূন্য হাতে ফিরতে হয়নি তাদের ৷ কিন্তু 2021 সালের বিধানসভা ভোটে জোট গড়েও এই দুই দল খাতা খুলতে ব্যর্থ হল ৷ অথচ এই কংগ্রেস-সিপিএমের সঙ্গে জোট গড়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ কিন্তু বিধানসভার অন্দরে প্রবেশের ছাড়পত্র জোগাড় করে নিল ৷

বাম-কংগ্রেসের এই নিশ্চিহ্ন হওয়ার পিছনে প্রাথমিক ভাবে একাধিক কারণ উঠে আসছে ৷ 2011 সালে ক্ষমতা হারানোর সময় থেকে বামেদের রক্তক্ষরণ শুরু হয় ৷ সময় যত গড়িয়েছে এই রক্তক্ষরণের পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ তৃণমূলের সঙ্গে জোট ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর কংগ্রেসও গোটা রাজ্যে আড়াই খানা জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে ৷ 2016-তে কোণঠাসা দুই দল এত বছরের বৈরিতা ভুলে হাত মেলায় ৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে তৃতীয় স্থানে ফেলে দিয়ে বাম-কংগ্রেস জোটই কিন্তু তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে ৷ যদিও প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক ছিল ৷ 211টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আর বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে লাভের গুড় খেয়ে যায় কংগ্রেস ৷ সিপিএমকে পিছনে ফেলে তারাই বিধানসভায় প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে ৷ তখনই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, বামেদের ভোট যে ভাবে কংগ্রেসের বাক্সে গিয়েছে, কংগ্রেসের ভোট সে ভাবে সিপিএম-এর বাক্সে যায়নি ৷ এর পর দুই দলের জোট সাময়িক ছিন্ন হলেও 2019-এর লোকসভায় ফের পরিস্থিতির চাপে দুই দল হাত মেলায় এবং 2016-র পুনরাবৃত্তি করে 2019-এর লোকসভাতেও লাভের গুড় খেয়ে নেয় কংগ্রেস ৷ সিপিএম-এর হাত শূন্য থাকলেও কংগ্রেস দু'টি আসন দখল করে নেয় ৷

আরও পড়ুন: শীর্ষে মহিলা : বাংলার রায়ে মমতাকে কুর্নিশ স্বস্তিকার, টুইট আবির-পরমের

এই বার এই দুই দলের জোটে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ সামিল হয় ৷ সিদ্দিকিদের জোটে সামিল করা নিয়ে কংগ্রেস-সিপিএমের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয় ৷ সিপিএম আইএসএফকে খোলা মনে মেনে নিলেও কংগ্রেস কিন্তু চট করে আইএসএফ-কে মেনে নিতে পারেনি ৷ যার জেরে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরেও বেশ কিছুদিন সংযুক্ত মোর্চার অন্দরে টানাপড়েন চলে ৷ ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে এই জোটকে মানুষ একেবারে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ৷ কংগ্রেস-সিপিএমের সঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকিকে মেলাতে পারেননি রাজ্যের মানুষ ৷

মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও আইএসএফ মূলত সংখ্যালঘুদের নিয়েই মাঠে ময়দানে দাপিয়ে বেড়ায় ৷ সেই সংখ্যালঘু ভোটকে নিজেদের কব্জায় আনতেই সিদ্দিকির সঙ্গে জোট বাঁধতে অতি উৎসাহী হয়ে পড়েছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা ৷ কিন্তু দেখা গেল, সংখ্যালঘু ভোটের প্রায় সবটাই চলে গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে ৷ বরং আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট করায় বাম-কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতার ইমেজে কালির ছোপ পড়ে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ৷ যে অঙ্কে আইএসএফকে কার্যত জামাই আদর করে জোটে টানা হল, তা কোনও কাজে এস না ৷ বিজেপি-কে রুখতে তৃণমূলের উপরই ভরসা রাখলেন সংখ্যালঘুরা ৷

ভোটের আগে ব্রিগেডে সংযুক্ত মোর্চার সভায় উপচে পড়েছিল ভিড় ৷ যা দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলেন জোটের নেতারা ৷ ব্রিগেড নিয়ে টুম্পার প্যারডি সোশ্যাল মিডিয়ায় সুপারহিট ৷ পাশাপাশি এবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিট তরুণ মুখের উপর ভরসা রেখেছিল ৷ বামেদের প্রচারেও প্রচুর অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের দেখা গিয়েছে ৷ তাই এই নির্বাচনে জোট একটা নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছিলেন অনেকেই ৷ যদিও প্রতিটি বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই জোটের ভরাডুবিরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু এ ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র আঁচ পাওয়া যায়নি ৷ বহু বছরের অধীর গড় এবার ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছে ৷ ঠিক তেমনই এই প্রথম মালদহে গনি-মিথ কাজে এল না ৷ যার জেরে এই দুই জেলা থেকে মুছে গেল কংগ্রেস ৷ তৃণমূল-বিজেপির জোড়া ফলায় কংগ্রেস ও বাম নিজেদের খাস তালুকে একেবারে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল ৷ সংখ্যালঘু ভোট গিয়েছে তৃণমূলের বাক্সে আর সংখ্যাগুরুর ভোটের একটা অংশ টেনেছে গেরুয়া বাহিনী ৷

আগামী দিনে এই কঠিনতম পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ কী ভাবে সংগ্রহ করে বাম-কংগ্রেস জোট, সেটা রাজ্য রাজনীতিতে একটা কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠল ৷

কলকাতা, 2 মে: জোট গড়েও স্বাধীনতার পর এই প্রথম খালি হাতে ফিরতে হল বাম এবং কংগ্রেসকে ৷ এবারের বিধানসভায় কংগ্রেস-সিপিএমের কোনও প্রতিনিধি থাকবে না ৷ 1972 সালে সিপিএম-এর ভরাডুবিতেও খাতা বন্ধ হয়নি বামেদের ৷ তেমনি 1977 সালে কংগ্রেসের চরম বিপর্যয়ের সময়েও শূন্য হাতে ফিরতে হয়নি তাদের ৷ কিন্তু 2021 সালের বিধানসভা ভোটে জোট গড়েও এই দুই দল খাতা খুলতে ব্যর্থ হল ৷ অথচ এই কংগ্রেস-সিপিএমের সঙ্গে জোট গড়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ কিন্তু বিধানসভার অন্দরে প্রবেশের ছাড়পত্র জোগাড় করে নিল ৷

বাম-কংগ্রেসের এই নিশ্চিহ্ন হওয়ার পিছনে প্রাথমিক ভাবে একাধিক কারণ উঠে আসছে ৷ 2011 সালে ক্ষমতা হারানোর সময় থেকে বামেদের রক্তক্ষরণ শুরু হয় ৷ সময় যত গড়িয়েছে এই রক্তক্ষরণের পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ তৃণমূলের সঙ্গে জোট ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর কংগ্রেসও গোটা রাজ্যে আড়াই খানা জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে ৷ 2016-তে কোণঠাসা দুই দল এত বছরের বৈরিতা ভুলে হাত মেলায় ৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে তৃতীয় স্থানে ফেলে দিয়ে বাম-কংগ্রেস জোটই কিন্তু তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে ৷ যদিও প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক ছিল ৷ 211টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আর বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে লাভের গুড় খেয়ে যায় কংগ্রেস ৷ সিপিএমকে পিছনে ফেলে তারাই বিধানসভায় প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে ৷ তখনই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, বামেদের ভোট যে ভাবে কংগ্রেসের বাক্সে গিয়েছে, কংগ্রেসের ভোট সে ভাবে সিপিএম-এর বাক্সে যায়নি ৷ এর পর দুই দলের জোট সাময়িক ছিন্ন হলেও 2019-এর লোকসভায় ফের পরিস্থিতির চাপে দুই দল হাত মেলায় এবং 2016-র পুনরাবৃত্তি করে 2019-এর লোকসভাতেও লাভের গুড় খেয়ে নেয় কংগ্রেস ৷ সিপিএম-এর হাত শূন্য থাকলেও কংগ্রেস দু'টি আসন দখল করে নেয় ৷

আরও পড়ুন: শীর্ষে মহিলা : বাংলার রায়ে মমতাকে কুর্নিশ স্বস্তিকার, টুইট আবির-পরমের

এই বার এই দুই দলের জোটে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ সামিল হয় ৷ সিদ্দিকিদের জোটে সামিল করা নিয়ে কংগ্রেস-সিপিএমের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয় ৷ সিপিএম আইএসএফকে খোলা মনে মেনে নিলেও কংগ্রেস কিন্তু চট করে আইএসএফ-কে মেনে নিতে পারেনি ৷ যার জেরে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরেও বেশ কিছুদিন সংযুক্ত মোর্চার অন্দরে টানাপড়েন চলে ৷ ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে এই জোটকে মানুষ একেবারে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ৷ কংগ্রেস-সিপিএমের সঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকিকে মেলাতে পারেননি রাজ্যের মানুষ ৷

মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও আইএসএফ মূলত সংখ্যালঘুদের নিয়েই মাঠে ময়দানে দাপিয়ে বেড়ায় ৷ সেই সংখ্যালঘু ভোটকে নিজেদের কব্জায় আনতেই সিদ্দিকির সঙ্গে জোট বাঁধতে অতি উৎসাহী হয়ে পড়েছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা ৷ কিন্তু দেখা গেল, সংখ্যালঘু ভোটের প্রায় সবটাই চলে গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে ৷ বরং আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট করায় বাম-কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতার ইমেজে কালির ছোপ পড়ে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ৷ যে অঙ্কে আইএসএফকে কার্যত জামাই আদর করে জোটে টানা হল, তা কোনও কাজে এস না ৷ বিজেপি-কে রুখতে তৃণমূলের উপরই ভরসা রাখলেন সংখ্যালঘুরা ৷

ভোটের আগে ব্রিগেডে সংযুক্ত মোর্চার সভায় উপচে পড়েছিল ভিড় ৷ যা দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলেন জোটের নেতারা ৷ ব্রিগেড নিয়ে টুম্পার প্যারডি সোশ্যাল মিডিয়ায় সুপারহিট ৷ পাশাপাশি এবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিট তরুণ মুখের উপর ভরসা রেখেছিল ৷ বামেদের প্রচারেও প্রচুর অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের দেখা গিয়েছে ৷ তাই এই নির্বাচনে জোট একটা নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছিলেন অনেকেই ৷ যদিও প্রতিটি বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই জোটের ভরাডুবিরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু এ ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র আঁচ পাওয়া যায়নি ৷ বহু বছরের অধীর গড় এবার ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছে ৷ ঠিক তেমনই এই প্রথম মালদহে গনি-মিথ কাজে এল না ৷ যার জেরে এই দুই জেলা থেকে মুছে গেল কংগ্রেস ৷ তৃণমূল-বিজেপির জোড়া ফলায় কংগ্রেস ও বাম নিজেদের খাস তালুকে একেবারে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল ৷ সংখ্যালঘু ভোট গিয়েছে তৃণমূলের বাক্সে আর সংখ্যাগুরুর ভোটের একটা অংশ টেনেছে গেরুয়া বাহিনী ৷

আগামী দিনে এই কঠিনতম পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ কী ভাবে সংগ্রহ করে বাম-কংগ্রেস জোট, সেটা রাজ্য রাজনীতিতে একটা কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠল ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.