ETV Bharat / state

মমতার জয়ে উল্লসিত বাংলাদেশ; সতর্ক হাসিনা সরকার

author img

By

Published : May 2, 2021, 10:13 PM IST

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তৈরি এবং তা ধরে রাখার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ-ফ্যাক্টর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত কারণে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বন্ধনের অপরিহার্যতা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয় । আজ বঙ্গভোটে তৃণমূলের সাফল্য নিয়ে কী ভাবছে বাংলাদেশ ? আলোচনায় খায়রুল আলম ।

West Bengal Assembly Election Result 2021
ছবি

বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ । প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বরাবরেই বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মধুর । পশ্চিমবঙ্গে টানা তৃতীয়বারের জন্য তৃণমূল ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের মানুষজন উল্লসিত। তবে কৌশলি অবস্থানে রয়েছে সরকার ।

পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের যে কোনও নির্বাচনকে তাদের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ । দলটি মনে করে, যারাই ভারতে সরকার গঠন করুক, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং পাশের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যে নৈকট্য, তা যেন আরও গভীরে প্রোথিত হয় । দু’দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান হোক, এটাই প্রত্যাশা ।

বাংলাদেশ ও ভারত এই দুটি নিকট প্রতিবেশি দেশ বহুমাত্রিক পারস্পরিক স্বার্থের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ । এর শুরুটা হয়েছিল ঘোর দুর্দিনে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় । সে সময় ভারতের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি গড়ে দিয়েছে । ইতিহাস, ভুগোল, অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তার বিবেচনায় দুটি দেশ পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে, এটাই বাস্তব । এ সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ভারতের জন্যও । দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ইতিবাচক অগ্রগতি আছে অনেক, পাশাপাশি ব্যর্থতা বা ভুল–বোঝাবুঝি যে নেই তা নয় । দুই দেশের মানুষের মধ্যেই বন্ধুত্বের বাতাবরণের পাশাপাশি পরস্পরের প্রতি অভিযোগও আছে বেশ কিছু ।

আরও পড়ুন : গণি-মিথের অবসান, তৃণমূল ও বিজেপিতেই ভরসা রাখল মালদা

আওয়ামি লিগের 1996-2001 শাসনকালে বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য সূচিত হয় দীর্ঘকাল অমীমাংসিত গঙ্গার জল চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে । ভারতের পক্ষে মূল উদ্বেগের বিষয় ছিল নিরাপত্তা । উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে ভারতের প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের সহায়তা । 2009 সালে আওয়ামি লিগ আবার ক্ষমতায় আসার স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সহায়তায় এ সমস্যা সম্পূর্ণ দূরীভূত হয় । বিদ্রোহীদের আশ্রয়স্থলগুলো ভেঙে দেওয়া হয় এবং পালিয়ে থাকা বিদ্রোহি নেতাদের ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয় ।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অপ্রাপ্তি, অসন্তোষের তালিকা বেশ দীর্ঘ। গঙ্গার পানি চুক্তি যে প্রত্যাশার পরিবেশ তৈরি করেছিল, বিগত 24 বছরে তা দিগন্তরেখায় প্রায় অদৃশ্য। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি পিছতে পিছতে এখন তালিকা থেকেই বাদ পড়ে গিয়েছে। শুকনো মৌসুমে তিস্তার পুরো পানিই ব্যবহার করছে ভারত। ভারতীয় পণ্যের বিশাল বাজার বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েও আবার অশুল্ক বাধার বেড়াজালে বেঁধে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাষ্ট্রসমূহে ট্রানজিট সুবিধা হাসিল করেছে ভারত, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নেপালে পণ্য পরিবহনে শিলিগুড়ি করিডরের 14 মাইল দূরত্ব আর কমছে না কিছুতেই।

প্রতিবেশী দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস।

আরও পড়ুন : কাজে এল না সিদ্দিকি টনিক, এই প্রথম বিধানসভা বাম-কংগ্রেসহীন

এ আস্থা হঠাৎ এক দিনে বা আপনা–আপনি গড়ে ওঠে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি যুগান্তকারী ঘটনার মধ্য দিয়ে এ আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তি রচিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে তা ধাক্কা খেয়েছিল। 1996 সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা লাভ এবং তার পরপরই গঙ্গার পানি চুক্তি, এ ধাক্কা কাটিয়ে উঠে নতুনভাবে আস্থা ও প্রত্যাশার আবহ তৈরি করেছিল।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তৈরি এবং তা ধরে রাখার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ-ফ্যাক্টর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত কারণে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বন্ধনের অপরিহার্যতা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। সাতচল্লিশে ভূখন্ড ভাগ হওয়ার পর আত্মীয়তা ও আত্মার বন্ধনকে ছিন্ন করা যায়নি। বাংলা বিভাজনের সত্তর বছর পার হয়েছে। কিন্তু আত্মার সংযোগ ও নাড়ির টান এখনও পুরোদস্তুর অটুট, বলা যায় কালের বিবর্তনে সেটি আরও সুদৃঢ় হয়েছে। সাতচল্লিশ সালে রাজনৈতিক নেতাদের অদূরদর্শিতা ও ব্যর্থতার কারণে উভয় বাংলার বিশালসংখ্যক মানুষ চৌদ্দ পুরুষের মাটির মমতাকে ছিন্ন করে, সবকিছু ফেলে, চোখের পানি নিয়ে এপার-ওপারে দেশান্তরিত হয়। কিন্তু ভাষা, নৃতাত্ত্বিকতা ও সাংস্কৃতিক শক্তির ক্ষমতা অন্যরকম। ভৌগোলিক দূরত্ব ও রাষ্ট্রীয় সীমানা সেটিকে বিকর্ষণের চাইতে আকর্ষণই করে বেশি। বিরহের অনুভূতিতে সম্পর্ক কিভাবে শক্তিশালী হয় তার প্রমাণ পাওয়া যায় একাত্তর সালে। তখন বাংলাদেশের এক কোটি উদ্বাস্তু মানুষকে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার বাঙালিরা আপনজনের মতো গভীর মমতার সঙ্গে শুধু আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়নি, অকাতরে সব ধরনের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। তখন ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল জয় বাংলার মানুষ হিসেবে। এই পরিচয় পেলে ট্রাম, রেল ও বাসওয়ালারা ভাড়া নিত না। কলকাতার কোন কোন হোটেল-রেস্টুরেন্টে, বিশেষ করে এপার বাংলা থেকে যাওয়া মালিকের সামনে খাওয়ার পর জোর করেও বিল দেয়া যায়নি।

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা হলো- যারাই ক্ষমতায় আছেন , তারা যেন উভয় বাংলার ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও নাড়ির সংযোগটি অক্ষুণ্ণ রাখেন। একই সঙ্গে প্রত্যাশা করি উভয় দেশের স্বার্থে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য দুদেশের সম্পর্কের উন্নয়নের পথে বাধা নয়, সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন।

লেখক: খায়রুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)

বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ । প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বরাবরেই বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মধুর । পশ্চিমবঙ্গে টানা তৃতীয়বারের জন্য তৃণমূল ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের মানুষজন উল্লসিত। তবে কৌশলি অবস্থানে রয়েছে সরকার ।

পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের যে কোনও নির্বাচনকে তাদের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ । দলটি মনে করে, যারাই ভারতে সরকার গঠন করুক, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং পাশের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যে নৈকট্য, তা যেন আরও গভীরে প্রোথিত হয় । দু’দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান হোক, এটাই প্রত্যাশা ।

বাংলাদেশ ও ভারত এই দুটি নিকট প্রতিবেশি দেশ বহুমাত্রিক পারস্পরিক স্বার্থের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ । এর শুরুটা হয়েছিল ঘোর দুর্দিনে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় । সে সময় ভারতের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি গড়ে দিয়েছে । ইতিহাস, ভুগোল, অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তার বিবেচনায় দুটি দেশ পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে, এটাই বাস্তব । এ সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ভারতের জন্যও । দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ইতিবাচক অগ্রগতি আছে অনেক, পাশাপাশি ব্যর্থতা বা ভুল–বোঝাবুঝি যে নেই তা নয় । দুই দেশের মানুষের মধ্যেই বন্ধুত্বের বাতাবরণের পাশাপাশি পরস্পরের প্রতি অভিযোগও আছে বেশ কিছু ।

আরও পড়ুন : গণি-মিথের অবসান, তৃণমূল ও বিজেপিতেই ভরসা রাখল মালদা

আওয়ামি লিগের 1996-2001 শাসনকালে বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য সূচিত হয় দীর্ঘকাল অমীমাংসিত গঙ্গার জল চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে । ভারতের পক্ষে মূল উদ্বেগের বিষয় ছিল নিরাপত্তা । উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে ভারতের প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের সহায়তা । 2009 সালে আওয়ামি লিগ আবার ক্ষমতায় আসার স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সহায়তায় এ সমস্যা সম্পূর্ণ দূরীভূত হয় । বিদ্রোহীদের আশ্রয়স্থলগুলো ভেঙে দেওয়া হয় এবং পালিয়ে থাকা বিদ্রোহি নেতাদের ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয় ।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অপ্রাপ্তি, অসন্তোষের তালিকা বেশ দীর্ঘ। গঙ্গার পানি চুক্তি যে প্রত্যাশার পরিবেশ তৈরি করেছিল, বিগত 24 বছরে তা দিগন্তরেখায় প্রায় অদৃশ্য। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি পিছতে পিছতে এখন তালিকা থেকেই বাদ পড়ে গিয়েছে। শুকনো মৌসুমে তিস্তার পুরো পানিই ব্যবহার করছে ভারত। ভারতীয় পণ্যের বিশাল বাজার বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েও আবার অশুল্ক বাধার বেড়াজালে বেঁধে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাষ্ট্রসমূহে ট্রানজিট সুবিধা হাসিল করেছে ভারত, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নেপালে পণ্য পরিবহনে শিলিগুড়ি করিডরের 14 মাইল দূরত্ব আর কমছে না কিছুতেই।

প্রতিবেশী দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস।

আরও পড়ুন : কাজে এল না সিদ্দিকি টনিক, এই প্রথম বিধানসভা বাম-কংগ্রেসহীন

এ আস্থা হঠাৎ এক দিনে বা আপনা–আপনি গড়ে ওঠে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি যুগান্তকারী ঘটনার মধ্য দিয়ে এ আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তি রচিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে তা ধাক্কা খেয়েছিল। 1996 সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা লাভ এবং তার পরপরই গঙ্গার পানি চুক্তি, এ ধাক্কা কাটিয়ে উঠে নতুনভাবে আস্থা ও প্রত্যাশার আবহ তৈরি করেছিল।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তৈরি এবং তা ধরে রাখার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ-ফ্যাক্টর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত কারণে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বন্ধনের অপরিহার্যতা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। সাতচল্লিশে ভূখন্ড ভাগ হওয়ার পর আত্মীয়তা ও আত্মার বন্ধনকে ছিন্ন করা যায়নি। বাংলা বিভাজনের সত্তর বছর পার হয়েছে। কিন্তু আত্মার সংযোগ ও নাড়ির টান এখনও পুরোদস্তুর অটুট, বলা যায় কালের বিবর্তনে সেটি আরও সুদৃঢ় হয়েছে। সাতচল্লিশ সালে রাজনৈতিক নেতাদের অদূরদর্শিতা ও ব্যর্থতার কারণে উভয় বাংলার বিশালসংখ্যক মানুষ চৌদ্দ পুরুষের মাটির মমতাকে ছিন্ন করে, সবকিছু ফেলে, চোখের পানি নিয়ে এপার-ওপারে দেশান্তরিত হয়। কিন্তু ভাষা, নৃতাত্ত্বিকতা ও সাংস্কৃতিক শক্তির ক্ষমতা অন্যরকম। ভৌগোলিক দূরত্ব ও রাষ্ট্রীয় সীমানা সেটিকে বিকর্ষণের চাইতে আকর্ষণই করে বেশি। বিরহের অনুভূতিতে সম্পর্ক কিভাবে শক্তিশালী হয় তার প্রমাণ পাওয়া যায় একাত্তর সালে। তখন বাংলাদেশের এক কোটি উদ্বাস্তু মানুষকে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার বাঙালিরা আপনজনের মতো গভীর মমতার সঙ্গে শুধু আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়নি, অকাতরে সব ধরনের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। তখন ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল জয় বাংলার মানুষ হিসেবে। এই পরিচয় পেলে ট্রাম, রেল ও বাসওয়ালারা ভাড়া নিত না। কলকাতার কোন কোন হোটেল-রেস্টুরেন্টে, বিশেষ করে এপার বাংলা থেকে যাওয়া মালিকের সামনে খাওয়ার পর জোর করেও বিল দেয়া যায়নি।

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা হলো- যারাই ক্ষমতায় আছেন , তারা যেন উভয় বাংলার ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও নাড়ির সংযোগটি অক্ষুণ্ণ রাখেন। একই সঙ্গে প্রত্যাশা করি উভয় দেশের স্বার্থে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য দুদেশের সম্পর্কের উন্নয়নের পথে বাধা নয়, সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন।

লেখক: খায়রুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.