কলকাতা, 17 জুলাই: সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ৷ প্রতিপক্ষ দ্রৌপদী মুর্মু ও যশবন্ত সিনহা ৷ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে জমজমাট বাংলার রাজনীতি । রবিবার, ভোটের আগের দিন এ রাজ্যে দলের 69 জন বিধায়ককে নিউটাউনের একটি হোটেলে নিয়ে গেল বিজেপি (Bengal BJP shifted all its MLAs to hotel before presidential election) ৷ যা দেখে অনেকের মতে এরাজ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও এবার মহারাষ্ট্রের ছায়া ।
সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ৷ এই অবস্থায় শাসক-বিরোধী দু'পক্ষই তাদের সমস্ত বিধায়কদের রবিবার রাতের মধ্যেই কলকাতায় চলে আসার নির্দেশ দিয়েছিল । শাসক দলে সামগ্রিকভাবে গোটা বিষয়টি নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি নিজে । এছাড়াও দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং দলের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তাঁদের মতো করে সাংসদ এবং বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন । অন্যদিকে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিরোধী বিধায়করা একজোট হয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ।
এরইমাঝে রবিবার দেখা গেল নয়া দৃশ্য ৷ নজিরবিহীনভাবে রাজ্যের 69 জন বিজেপি বিধায়ককে রাজারহাটের একটি হোটেলে নিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির । বিজেপি সূত্রে খবর, দলের সমস্ত বিধায়কেরা যাতে দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোট দেন সেটা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ । রাজনৈতিক মহল মনে করছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এটা একটি নজিরবিহীন ঘটনা । কারণ অতীতে এমনভাবে দলের সমস্ত বিধায়ককে নির্দিষ্ট কোনও হোটেলে বা রিসর্টে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা দেখা যায়নি । যদিও অন্য রাজ্যে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ ওঠেছে ৷ সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের বিধায়কদের একটি নির্দিষ্ট হোটেলে বা রিসর্টে নিয়ে যায় । ভোটের আগেই তাঁদের আবার সঠিক জায়গায় নিয়ে আসা হয় । খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে এমন ঘটনার কারণ কী এ রাজ্যে? তাহলে এতদিন ক্রসভোটিংয়ের কথা বলা বিজেপি কী তাদের বিধায়কদের উপর আর ভরসা রাখতে পারছে না !
আরও পড়ুন: বিরোধীদের উপ-রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হচ্ছেন মার্গারেট আলভা, ঘোষণা পাওয়ারের
রাজনৈতিক মহলের ধারণা বিধানসভা নির্বাচনের পর একের পর এক বিধায়কের দলত্যাগ করার ঘটনার পর বিজেপি এই মুহূর্তে চাইছে এখনও পর্যন্ত যে ক'জন বিধায়ক তাদের সঙ্গে রয়েছেন সকলের ভোট নিশ্চিত করতে ৷ আর সে কারণেই এই পদক্ষেপ । প্রসঙ্গত এই মুহূর্তে দলবদলুদের বাদ দিলে বিজেপি'র সঙ্গে রয়েছে সত্তর জন বিধায়কের সমর্থন । যদিও সাংসদ অর্জুন সিং দলবদলের পর তাঁর পুত্র পবন সিং দলবদল না-করলেও বিজেপি ধরে নিয়েছে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের পথেই পা বাড়িয়ে রয়েছেন । কাজেই তাঁকে বাদ দিয়ে 69 জন বিধায়ককে নিয়ে নিউটাউনের হোটেলে ঘাঁটি গেরেছেন বিজেপি নেতারা । এক্ষেত্রে তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দিলে অস্বস্তিতে পড়তে পারে বিজেপি নেতৃত্ব তাই আগেভাগে এই সতর্কতা বলে মনে করা হচ্ছে ।
যদিও এই মুহূর্তে বিজেপি যেটা প্রকাশ্যে বলছে তা হল, বিজেপির বিধায়কেরা দূরদূরান্ত থেকে আসছেন তাই তাঁদের এক জায়গায় রাখার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে । যতদূর জানা যাচ্ছে, এখানে দলের তরফ থেকে বিধায়কদের কী ভাবে ভোট দিতে হয় যাতে ভুল ভোটিং না হয়, তা দেখানোর জন্য এই ব্যবস্থা থাকছে । যদিও এই ঘটনা নিয়ে বিজেপিকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ।
এদিন বিজেপি নেতাদের এভাবে হোটেলে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্য সচেতন নির্মল ঘোষ বলেন, "দলের বিধায়কদের উপর কোনও ভরসাই নেই বিজেপি'র । শুভেন্দু অধিকারী মুখে অনেক বড় বড় কথা বললেও নিজেদের ঘর সামলাতেই নাকানি চোবানি খাচ্ছেন । আর সে কারণেই তাদের এই ধরনের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে ।" অন্যদিকে, বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, "এ নিয়ে যা বলার দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলবেন । তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে যা মনে হয়, এই নিয়ে অহেতুক জল ঘোলা করা হচ্ছে । এ বছর বিজেপির বিধায়কদের মধ্যে অধিকাংশই নতুন । তাঁদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কীভাবে ভোট দিতে হয় তার অতীত অভিজ্ঞতা নেই । সে কারণেই সকলকে এক জায়গায় করে যাতে ভোট ঠিকভাবে করা যায় তার চেষ্টা হচ্ছে । এই নিয়ে অহেতুক বিতর্কের কোনও অর্থ হয় না ।"