ETV Bharat / state

Baruipur Rajbari: গা ছমছমে বারুইপুর রাজবাড়িকে ব্যস্ত করে তোলে সিনেমাওয়ালারাই - Shooting in Baruipur Rajbari

গা ছমছমে বারুইপুর রাজবাড়িকে (Baruipur Rajbari) ব্যস্ত করে তোলে সিনেমাওয়ালারাই ৷ এখনও চলছে শ্যুটিং (Shooting in Baruipur Rajbari ) ৷

Baruipur Rajbari is famous for its many scaring stories
গা ছমছমে বারুইপুর রাজবাড়িকে ব্যস্ত করে তোলে সিনেমাওয়ালারাই
author img

By

Published : Apr 7, 2022, 4:41 PM IST

বারুইপুর, 7 এপ্রিল: গ্রীষ্মের এক তপ্ত দুপুর । এক বাংলা ছবির শ্যুটিং কভার করতে হাজির হওয়া বারুইপুর রাজবাড়িতে (Baruipur Rajbari)। বলা বাহুল্য, এই বাড়ি এখন শ্যুটিংয়ের কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয় (Shooting in Baruipur Rajbari)। সে দিন শুটিং চলছিল বাংলা ছবি 'সুনেত্রা সুন্দরম'-এর ।

বারুইপুরের (South 24 parganas news) ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়ি শতাব্দী প্রাচীন । বারুইপুরের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে সুবিস্তৃত এলাকা যৌতুক হিসেবে পান জমিদার রাজবল্লভ চৌধুরী । এক বিঘা দুই বিঘা নয়, জমিদারি ছিল বারুইপুর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত । চৌধুরী পরিবার পরবর্তীকালে রায়চৌধুরী উপাধি পান । রাজা রাজবল্লভ রায়চৌধুরী লর্ড কর্নওয়ালিসের জমানায় বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে এক পেল্লাই রাজবাড়ি তৈরি করান । কী না হত সেই রাজবাড়িতে ? বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ । তার প্রায় প্রত্যেকটিই পালিত হত রাজকীয় ভাবে । দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে রথযাত্রা - বাদ পড়ে না কোনওটাই ।

এই বাড়ির কোণায় কোণায় যেমন ইতিহাস, তেমনই রয়েছে গা ছমছমে পরিবেশ । সন্ধে গড়ালেই নানা অনুভূতি ঘিরে ধরে উপস্থিত প্রায় সকলকে । এখানে বেশ কয়েকটি ঘর রয়েছে যেগুলি যুগ যুগ ধরে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে আছে । খোলা হয় না কখনও । তার মধ্যে একটি ঘর নাকি রানির অর্থাৎ জমিদার গিন্নির । একটি ছোট সিঁড়ি আছে । সেই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে অনেকেই নানা অনুভূতির শিকার হয়েছেন । সম্প্রতি দু‘জন সাংবাদিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সেই সিঁড়ি দিয়ে ওঠার লোভ সামলাতে পারেননি । চেয়েছিলেন কিছু এক্সপ্লোর করতে । সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে দু‘জনেরই বাঁ হাত অবশ হয়ে আসে । বাকি সিঁড়ি না উঠে নেমে আসেন গড়গড়িয়ে ।

সূত্রের খবর, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নাকি একবার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন একটি ঘরে ঢুকবেন । বাসিন্দাদের বারণ সত্ত্বেও তিনি ঘরটি খোলার জন্য অনুরোধ জানান । এক পা ঘরের দিকে বাড়িয়েই বেরিয়ে আসেন । পারেননি ঢুকতে । অনেকের এই একই অনুভূতি হয়েছে টয়লেটে গিয়েও । ঢুকতে পারেননি ভিতরে । এ রকম অনুভূতির শিকার অনেকেই হয়েছেন এই রাজবাড়িতে । সন্ধে নামলেই যেন মনে হয় দু‘টি চোখ চোখে চোখে রাখছে । দিনের বেলাতেও বেশ নিঝুম রাজবাড়ি চত্বর । বন্ধ ঘরের দিকে কেউ ভুলেও পা বাড়ায় না । স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যার পর রাজবাড়িতে প্রবেশ করলে রাজবাড়ির জরাজীর্ণ অবস্থার বদলে চোখে পড়ে রাজকীয়তা । তবে সেখানে বেশিক্ষণ কেউ থাকতে পারে না । কে যেন বলে, "দূর হটো।"

আরও পড়ুন: Sunetra Sundaram Shooting : বারুইপুর রাজবাড়িতে চলছে 'সুনেত্রা সুন্দরম' সিনেমার শুটিং

এ বাড়িতে ভয়ের আবহ যেমন রয়েছে তেমনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্তমান । গাছগাছালিতে ভরা রাজবাড়ি । সুন্দর ঠাকুর দালান । কার যেন হাতের নিখুঁত তুলির টানে সুন্দর আলপনা দালানের সিঁড়িতে । ঠাকুর দালানে উঠলেই সব ভয় এক নিমেষে উধাও হয়ে যায় । পজিটিভ এনার্জি আগলে রাখে আর বলে, "ভয় নেই । কীসের ভয় ? সবই অনুভূতির খেলা । মনে ভাবলে সব আছে । না ভাবলে কিছুই নেই ।"

রাজা রাজবল্লভ রায়চৌধুরী রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন । তিনশো বছরেরও প্রাচীন এই পুজো । শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো নিয়ে জানা যায়, এখনও তিনজন পুরোহিত মিলে দুর্গা পুজো করেন । প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো । সপ্তমী থেকে নবমী নিশি পর্যন্ত প্রতিদিন বলি হয় । নিয়ম মেনে ছাগ বলি হয় ওই তিনদিন । অষ্টমীর দিনে রাজ পরিবারের ছিড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিন দেশের সদস্যরাও একত্রিত হন রাজবাড়িতে । পরিবারের মহিলা সদস্যদের বিশ্বাস, পরিবারের বিবাহিত মহিলারা ওইদিন মিলে মিশে অষ্টমীর ভোগ খেলে পরিবারে সুখ শান্তি বিরাজ করে । একসময় জমিদার বাড়িতে নৈবেদ্যর ডালা সাজিয়ে প্রজারা আসতেন । এখন তা অতীত ।

পরিবার সূত্রেই জানা যায়, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও বারুইপুরের এই জমিদার বাড়িতে একবার সময় কাটিয়েছিলেন । এই বাড়িতে বসেই তিনি ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাস লেখা শুরু করেন । সাহিত্য সম্রাট যে টেবিল, চেয়ারে বসে লিখেছিলেন সেটি এখনও যত্নে রাখা আছে জমিদার বাড়িতে ।

নিঝুম এই রাজবাড়ি গমগম করে যখন সিনেমাওয়ালারা সিনেমা বানানোর কাজে আসেন এখানে । লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের ব্যস্ততায় ভয়েরা তখন বাপ বাপ করে পালায় একপ্রকার । শুধু সিনেমা নয়, বিভিন্ন শর্ট ফিল্ম, ধারাবাহিকের শ্যুটিংও হয় এখানে । মেক আপ রুম থেকে শুরু করে শ্যুটিং চালিয়ে যাওয়ার সবরকম ব্যবস্থা আছে সেখানে । নামী থেকে নবাগত সব স্তরের শিল্পীদেরই নানা সময়ে আগমন ঘটে বারুইপুর রাজবাড়িতে । আর আপনি যদি মনে করেন ভয় খুঁজবেন, যেতে পারেন । চিন্তা নেই । ভয়েরা এখানে ক্ষতি করেনি আজ অবধি কারও ।

বারুইপুর, 7 এপ্রিল: গ্রীষ্মের এক তপ্ত দুপুর । এক বাংলা ছবির শ্যুটিং কভার করতে হাজির হওয়া বারুইপুর রাজবাড়িতে (Baruipur Rajbari)। বলা বাহুল্য, এই বাড়ি এখন শ্যুটিংয়ের কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয় (Shooting in Baruipur Rajbari)। সে দিন শুটিং চলছিল বাংলা ছবি 'সুনেত্রা সুন্দরম'-এর ।

বারুইপুরের (South 24 parganas news) ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়ি শতাব্দী প্রাচীন । বারুইপুরের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে সুবিস্তৃত এলাকা যৌতুক হিসেবে পান জমিদার রাজবল্লভ চৌধুরী । এক বিঘা দুই বিঘা নয়, জমিদারি ছিল বারুইপুর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত । চৌধুরী পরিবার পরবর্তীকালে রায়চৌধুরী উপাধি পান । রাজা রাজবল্লভ রায়চৌধুরী লর্ড কর্নওয়ালিসের জমানায় বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে এক পেল্লাই রাজবাড়ি তৈরি করান । কী না হত সেই রাজবাড়িতে ? বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ । তার প্রায় প্রত্যেকটিই পালিত হত রাজকীয় ভাবে । দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে রথযাত্রা - বাদ পড়ে না কোনওটাই ।

এই বাড়ির কোণায় কোণায় যেমন ইতিহাস, তেমনই রয়েছে গা ছমছমে পরিবেশ । সন্ধে গড়ালেই নানা অনুভূতি ঘিরে ধরে উপস্থিত প্রায় সকলকে । এখানে বেশ কয়েকটি ঘর রয়েছে যেগুলি যুগ যুগ ধরে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে আছে । খোলা হয় না কখনও । তার মধ্যে একটি ঘর নাকি রানির অর্থাৎ জমিদার গিন্নির । একটি ছোট সিঁড়ি আছে । সেই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে অনেকেই নানা অনুভূতির শিকার হয়েছেন । সম্প্রতি দু‘জন সাংবাদিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সেই সিঁড়ি দিয়ে ওঠার লোভ সামলাতে পারেননি । চেয়েছিলেন কিছু এক্সপ্লোর করতে । সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে দু‘জনেরই বাঁ হাত অবশ হয়ে আসে । বাকি সিঁড়ি না উঠে নেমে আসেন গড়গড়িয়ে ।

সূত্রের খবর, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নাকি একবার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন একটি ঘরে ঢুকবেন । বাসিন্দাদের বারণ সত্ত্বেও তিনি ঘরটি খোলার জন্য অনুরোধ জানান । এক পা ঘরের দিকে বাড়িয়েই বেরিয়ে আসেন । পারেননি ঢুকতে । অনেকের এই একই অনুভূতি হয়েছে টয়লেটে গিয়েও । ঢুকতে পারেননি ভিতরে । এ রকম অনুভূতির শিকার অনেকেই হয়েছেন এই রাজবাড়িতে । সন্ধে নামলেই যেন মনে হয় দু‘টি চোখ চোখে চোখে রাখছে । দিনের বেলাতেও বেশ নিঝুম রাজবাড়ি চত্বর । বন্ধ ঘরের দিকে কেউ ভুলেও পা বাড়ায় না । স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যার পর রাজবাড়িতে প্রবেশ করলে রাজবাড়ির জরাজীর্ণ অবস্থার বদলে চোখে পড়ে রাজকীয়তা । তবে সেখানে বেশিক্ষণ কেউ থাকতে পারে না । কে যেন বলে, "দূর হটো।"

আরও পড়ুন: Sunetra Sundaram Shooting : বারুইপুর রাজবাড়িতে চলছে 'সুনেত্রা সুন্দরম' সিনেমার শুটিং

এ বাড়িতে ভয়ের আবহ যেমন রয়েছে তেমনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্তমান । গাছগাছালিতে ভরা রাজবাড়ি । সুন্দর ঠাকুর দালান । কার যেন হাতের নিখুঁত তুলির টানে সুন্দর আলপনা দালানের সিঁড়িতে । ঠাকুর দালানে উঠলেই সব ভয় এক নিমেষে উধাও হয়ে যায় । পজিটিভ এনার্জি আগলে রাখে আর বলে, "ভয় নেই । কীসের ভয় ? সবই অনুভূতির খেলা । মনে ভাবলে সব আছে । না ভাবলে কিছুই নেই ।"

রাজা রাজবল্লভ রায়চৌধুরী রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন । তিনশো বছরেরও প্রাচীন এই পুজো । শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো নিয়ে জানা যায়, এখনও তিনজন পুরোহিত মিলে দুর্গা পুজো করেন । প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো । সপ্তমী থেকে নবমী নিশি পর্যন্ত প্রতিদিন বলি হয় । নিয়ম মেনে ছাগ বলি হয় ওই তিনদিন । অষ্টমীর দিনে রাজ পরিবারের ছিড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিন দেশের সদস্যরাও একত্রিত হন রাজবাড়িতে । পরিবারের মহিলা সদস্যদের বিশ্বাস, পরিবারের বিবাহিত মহিলারা ওইদিন মিলে মিশে অষ্টমীর ভোগ খেলে পরিবারে সুখ শান্তি বিরাজ করে । একসময় জমিদার বাড়িতে নৈবেদ্যর ডালা সাজিয়ে প্রজারা আসতেন । এখন তা অতীত ।

পরিবার সূত্রেই জানা যায়, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও বারুইপুরের এই জমিদার বাড়িতে একবার সময় কাটিয়েছিলেন । এই বাড়িতে বসেই তিনি ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাস লেখা শুরু করেন । সাহিত্য সম্রাট যে টেবিল, চেয়ারে বসে লিখেছিলেন সেটি এখনও যত্নে রাখা আছে জমিদার বাড়িতে ।

নিঝুম এই রাজবাড়ি গমগম করে যখন সিনেমাওয়ালারা সিনেমা বানানোর কাজে আসেন এখানে । লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের ব্যস্ততায় ভয়েরা তখন বাপ বাপ করে পালায় একপ্রকার । শুধু সিনেমা নয়, বিভিন্ন শর্ট ফিল্ম, ধারাবাহিকের শ্যুটিংও হয় এখানে । মেক আপ রুম থেকে শুরু করে শ্যুটিং চালিয়ে যাওয়ার সবরকম ব্যবস্থা আছে সেখানে । নামী থেকে নবাগত সব স্তরের শিল্পীদেরই নানা সময়ে আগমন ঘটে বারুইপুর রাজবাড়িতে । আর আপনি যদি মনে করেন ভয় খুঁজবেন, যেতে পারেন । চিন্তা নেই । ভয়েরা এখানে ক্ষতি করেনি আজ অবধি কারও ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.