কলকাতা, 6 জুন : আজও খুঁজে বেড়ান তারাচাঁদ জৈন । হাতে তিন ফুটের একটি স্টিক । রবীন্দ্র সরোবরের প্রাতঃভ্রমণ কিংবা সান্ধ্যভ্রমণে তাঁর চোখ খুঁজে বেড়ায় পরিবেশের শত্রু প্লাস্টিককে । কলকাতা পৌরসভা সেই কবেই রবীন্দ্র সরোবরকে প্লাস্টিক মুক্ত ঘোষণা করেছে । কিন্তু কে শোনে কার কথা ! রবীন্দ্র সরোবর লেক কিংবা সবুজ প্রান্তর আজও প্লাস্টিকের গুঁতোয় বেসামাল । একা লড়াই করে চলেছেন তারাচাঁদ । সময় সুযোগ পেলে দিচ্ছেন পরিবেশ সচেতনতার পাঠ । কিন্তু আম আদমি সচেতনতা নেই বললেই চলে। না, কলকাতা পারেনি । তারাচাঁদদের বিক্ষিপ্ত একক লড়াই জারি থাকলেও, ভ্রূক্ষেপ নেই আমজনতা কিংবা পৌরনিগমের । অথচ বাঙুর পেরেছে । প্লাস্টিক সচেতনতায় হয়ে উঠেছে গোটা রাজ্যের রোল মডেল ।
কয়েক বছর আগের কথা । সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যেত দক্ষিণ দমদম পৌরসভার বাঙুর অ্যাভিনিউ এলাকা । তখন এলাকার কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য । বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটা তিনি শুরু করেন । ততদিনে রাজ্যের অন্যান্য পৌরসভার মতোই দক্ষিণ দমদম পৌরসভাও শুরু করেছে প্লাস্টিক নিয়ে সচেতনতার উদ্যোগ । বাঙুর অ্যাভিনিউকে মডেল ওয়ার্ড গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছেন মৃগাঙ্ক । এলাকার সৌন্দর্যায়নে বসানো হচ্ছে নানা মডেল। মৃগাঙ্ক বুঝতে পারেন, এই সবকিছুই নষ্ট হয়ে যাবে যদি এলাকার জল জমার সমস্যার সমাধান না হয় । শুরু করেন প্লাস্টিক বিরোধী প্রচার ।
মৃগাঙ্ক বলেন, "প্লাস্টিক বন্ধে আমরা কোনও দাদাগিরি চালাইনি । বলতে পারেন গান্ধিগিরিতেই এসেছে সাফল্য । আমরা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়েছিলাম । সাহায্য চেয়েছিলাম এলাকার প্রত্যেকটি মানুষের । বলেছিলাম, প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ না হলে এলাকায় জল জমার সমস্যার সমাধান কোনওদিনই হবে না । ওই প্লাস্টিকগুলিই বন্ধ করে দিচ্ছে ড্রেনের মুখ ।" এলাকার দোকানদারদের বোঝানো হয়। দেওয়া হয় ফতোয়া । কোনও পণ্যই প্লাস্টিকে ভরে দেওয়া যাবে না । সঙ্গে চলতে থাকে "টিম মৃগাঙ্ক"-র নজরদারি । জনসচেতনতা আর নিশ্ছিদ্র নজরদারিতে আসে সাফল্য । একটু একটু করে পরিবেশ পায় প্লাস্টিক মুক্ত এক অন্য পৃথিবী ।
আজ মৃগাঙ্ক আর বাঙুরের কাউন্সিলর নন । ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন কালিন্দীর কাউন্সিলর । কিন্তু বাঙ্গুর আজও বহন করে চলেছে প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবীর ঐতিহ্য । ফলের দোকান থেকে ফুলের দোকানদার কিংবা সবজি ব্যবসায়ী । আজও কেউ কোনও সামগ্রী দেন না প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে । মিষ্টির দোকানগুলিও তাই । এক ফলের দোকানদার বলেন, "আমরা প্লাস্টিকে কিছু দিই না । এখানে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ। আমরা ঠোঙা আর কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করি । পরিবেশের জন্য ভীষণ উপকারী।" এক এলাকাবাসী বলেন, "একটা সময় বাঙুরে প্রচুর জল জমত । এখন আর জমে না । এলাকার মানুষজন প্লাস্টিক ব্যবহার করেন না । আমি মনে করি প্লাস্টিক সব জায়গা থেকেই তুলে দেওয়া উচিত ।"
বাঙুর পেরেছে। রাজ্যের পরিবেশ দপ্তরের কাছে দক্ষিণ দমদম পৌরসভার এই একখণ্ড ভূমি এখন মডেল ওয়ার্ড। রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চল কি পারবে? মৃগাঙ্ক বলেন, "আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে চলুন সবাই শপথ নিই, প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবী গড়ার। এর জন্য সচেতন হতে হবে প্রত্যেকটি মানুষকে। প্রশাসনকে নিতে হবে সক্রিয় ভূমিকা।"