কলকাতা, 12 নভেম্বর: ডেঙ্গি মোকাবিলায় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকের পরেও গলদ থেকে গিয়েছে বলে মানলেন কলকাতা পৌরনিগমের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ ৷ মশাবাহিত রোগের দাপটে নাজেহাল নাগরিকরা (Kolkata Dengue situation)। আতঙ্কে ঘুম উড়েছে তাঁদের । বিরোধীরা এর জন্য কাঠগড়ায় তুলেছে পৌর প্রশাসনকে । এই সমস্ত জবাব দিতে গিয়ে বছর ভর পৌরসভা ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কী কাজ করছে শনিবার তা তুলে ধরেন মেয়র পারিষদ স্বাস্থ্য ও কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ (Atin Ghosh of KMC speaks on Kolkata Dengue situation) । সেখানেই তিনি স্বীকার করেন, তিন মাস আগে দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে ডেঙ্গি মোকাবিলায় যে প্রস্তুতি বৈঠক ডাকা হয়েছিল তা কোনও কাজে আসেনি ।
শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে সার্বিক সচেতনতার অভাব ছিল এবং এই বিষয়ে কাউন্সিলরদেরও গলদের কথা স্বীকার করে নিলেও এদিন বিরোধীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অতীন ঘোষ । বিরোধী কাউন্সিলররা কেন সচেতন না, কেন তাঁরা সচেতনতামূলক প্রচার করছেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন: অপদার্থ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, মন্তব্য ক্ষুব্ধ ফিরহাদের
এদিন অতীন ঘোষ বলেন, "ডেন থ্রি মাথা ব্যথার কারণ । এই নিয়ে এখনও কোনও গাইডলাইন তৈরি হয়নি কেন্দ্রের তরফে । পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করা হয় । তার পরেও গলদ ছিল যার ফলে এত আক্রান্ত ।" যদিও পৌরনিগমে ডেঙ্গি নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠকে ডাক না পাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ । তাঁর পালটা প্রশ্ন, "উনি কাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন ? বিরোধী কাউন্সিলর তো আছি মাত্র 5-6 জন । আমাদের ডাকা হয়েছে কোনওদিন ? মেয়র কতবার নাগরিক কনভেনশন করেছেন ? আমার ওয়ার্ডে কি ডেঙ্গি হয় না, নাকি ওখানে তৃণমূল নেই সবাই বিজেপি করেন ।"
এদিন তথ্যচিত্র দিয়ে কলকাতার ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার বর্তমান অবস্থা ঠিক কী তা তুলে ধরার চেষ্টা করেন ডেপুটি মেয়র (KMC report on Dengue situation) । তিনি দাবি করেন, শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, পরিত্যক্ত জমি । উত্তর কলকাতা থেকে দক্ষিণ কলকাতায় পরিত্যক্ত জমি, পুকুর, নর্দমার সংখ্যা বেশি । তাই এবার পরিত্যক্ত জমি নিয়ে রাজ্য সরকার কড়া কোনও আইন তৈরি করুক চাইছেন তিনি । অতীনের কথায়, "সরকারকে খালি জমি রাখার ক্ষেত্রে কড়া আইন প্রণয়ন করতে হবে, রাজ্য সরকারকে জানাব ।" এই নিয়েও অতীন ঘোষকে তীব্র কটাক্ষ করে সজল ঘোষ বলেন, "ব্যক্তিগত মালিকানাধীন খালি জমিতে আবর্জনা পড়লে পরিষ্কার, জরিমানা, শাস্তি হতে পারে । কিন্তু এছাড়া কিছু করার নেই । উনারা কী চাইছেন খালি জমি দখল করে যাতে প্রমোটিং হয় তার ব্যবস্থা করতে ৷"
আরও পড়ুন: নিকাশি নালার বেহাল দশা, ডেঙ্গি আতঙ্কে মেজিয়াবাসী
উল্লেখ্য, কলকাতা পৌরনিগমের করা সমীক্ষা অনুসারে, বছরের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ডেঙ্গি আক্রান্ত 6 হাজার 52 জন । দক্ষিণ কলকাতায় আক্রান্ত ( বরো 8-14) 4627 জন (76.5 শতাংশ), উত্তর কলকাতায় (বরো 1-7) 1371 জন (22.6 শতাংশ) ৷ জোকা ও গার্ডেনরিচে ( বরো 15-16) 54 জন (.9 শতাংশ) । সমীক্ষা বলছে, ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপটাই মশার পছন্দের আঁতুড়ঘর ফাঁকা জমি, নির্মীয়মান বাড়ি,পুকুর, নর্দমা । তথ্য বলছে, উত্তর কলকাতায় ফাঁকা জমি 383টি (9.9 শতাংশ)। নির্মীয়মান বাড়ি 1684টি (37 শতাংশ) । পুকুর 433টি (22.5 শতাংশ) । নর্দমা 1545টি (12 শতাংশ) । পাতকুয়ো 1766টি (15 শতাংশ) । দক্ষিণ কলকাতায় ফাঁকা জমি 3038টি (78.8 শতাংশ) । নির্মীয়মান বাড়ি 2844টি (63 শতাংশ) । পুকুর 1490টি (77.5 শতাংশ) । নর্দমা 11206টি (44 শতাংশ), পাতকুয়ো 10047টি (85 শতাংশ) । এছাড়াও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন 11 হাজারের বেশি । ডেঙ্গি আক্রান্তের মধ্যে 60 থেকে 70 শতাংশই এবার নতুন স্ট্রেন ডেন থ্রি'তে আক্রান্ত ।