কলকাতা, 7 জানুয়ারি : বেআইনি অস্ত্র তৈরির কারখানার হদিশ পাওয়া গেল বন্দর এলাকায় । সোমবার রাতে নাদিয়াল থানা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এক মুঙ্গেরি ইঞ্জিনিয়রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । সম্প্রতি এক দুষ্কৃতীর কাছে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রর সূত্র ধরেই ওই কারখানার খোঁজ পায় তারা । কারখানা থেকে বিভিন্ন বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ।
ধৃতের নাম আবদুল কাইয়ুম ওরফে মুন্না(28) । বিহারের মুঙ্গের জেলার রামপুরের বাসিন্দা । এখানে নাদিয়াল থানা এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকত । সেখান থেকে খানিক দূরেই মহম্মদ কালিম নামে এক দুষ্কৃতীর বাড়ির ছাদে বেআইনি অস্ত্র তৈরি করা হত । প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে কালিম এই চক্রের মাথা । অস্ত্র তৈরি এবং পাচারে মূল ভূমিকা নিত সে । মূলত তার উদ্যোগেই বিহার থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল আবদুল কাইয়ুম ওরফে মুন্নার মতো ইঞ্জিনিয়র । গতকাল রাতে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে 7MM, 9MM-র মতো আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে । যদিও মহম্মদ কালিমসহ অন্যদের খোঁজ পাওয়া যায়নি ।
এই ইঞ্জিনিয়রের পিছনে একটা ইতিহাস আছে । আসলে একটা সময় বিহারের মুঙ্গের ছিল অস্ত্র কারবারের মুক্তাঞ্চল । সেখানে তৈরি দেশি “ঘোড়া" ছড়িয়ে পড়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । এমনকী তা যেত বাংলাদেশেও । গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ঢাকায় হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল মুঙ্গেরি অস্ত্র । হাত কাটা নাসিরুল্লাহ সেই অস্ত্র নানাভাবে ঢুকিয়েছিল বাংলাদেশে । দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই সব অস্ত্রের দাম অনেকটাই কম । যারা নিখুঁত দক্ষতায় অস্ত্র বানিয়ে ফেলে তাদেরকে বলা হয় ইঞ্জিনিয়র । অস্ত্র কারবারিদের কোড নাম । গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বেআইনিভাবে ভারতে ঢোকা বিদেশি 9MM পিস্তলের দাম পড়ে যায় 60 থেকে 70 হাজার টাকা । সেখানে মুঙ্গের ইঞ্জিনিয়রদের তৈরি 9MM পিস্তল পাওয়া যায় 10 থেকে 15 হাজার টাকায় । স্বাভাবিকভাবেই পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা "ডন"-এর কাছে কদর রয়েছে মুঙ্গেরের ওই ইঞ্জিনিয়রদের হাতের কাজের ।
সম্প্রতি বিহার প্রশাসন কড়া মনোভাব নেওয়ায় এইসব ইঞ্জিনিয়ররা ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে । গোয়েন্দাদের কাছে এসেছে এমনই তথ্য । সেটা প্রথম সামনে আসে কাঁকিনাড়া অস্ত্র কারখানার পরদা ফাঁসের পর । 2018 সালের 30 জুলাই সুকু শেখ নামে মালদার কালিয়াচকের এক জালনোটের কারবারিকে পাকড়াও করে STF। তাদের সঙ্গেই ধরা পড়ে আমজাদ রায়ান এবং আব্দুল্লাহ নামে মুঙ্গেরের দুই বাসিন্দা । তাদের কাছে উদ্ধার হয় 1 লাখ টাকার জালনোট এবং 40 টি সেমি ফিনিসড 9MM পিস্তল । তাদের জেরা করেই জানা যায় কাঁকিনাড়ার লাড্ডু কারখানার আড়ালে অস্ত্র কারখানা কথা । পরে নাদিয়ালের মতো আরও এরকম কারখানার খোঁজ পাওয়া যায় ।