কলকাতা, 7 অক্টোবর: বাংলার হয়ে অনুর্ধ্ব-19 ক্রিকেট খেলেছেন। তিনিই এখন আবেদন করেছেন কলকাতা কর্পোরেশনের মজদুর পদে। অর্থাৎ সাফাই কর্মী হতে চান। শুধু তিনি নন এই পদে চাকরি চেয়ে আবেদন করেছেন ফার্স্ট ডিভিশনে খেলা ফুটবলবারও। কাজ, সকালে বাড়ি থেকে বাঁশি বাজিয়ে ময়লা তুলে আনা। পরে সেই ময়লা কম্প্যাক্টর স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া। তাছাড়া ঝাঁট দিয়ে রাস্তা পরিষ্কারও করত হবে। এই চাকরিটা যাতে পেয়ে যেতে অসুবিধা না হয় তার জন্য ওই প্রাক্তন ক্রিকেটার দ্বারস্থ হয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেট প্রশাসক তথা বর্তমানে তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে-র।
এই ঘটনায় অবাক কাউন্সিলর। বিষয়টি এদিন পৌরনিগমের মাসিক অধিবেশনে তুলে তাঁর প্রশ্ন, "এরা কি সঠিকভাবে কাজ করতে পারবেন ?" তাঁর কথায়, "যিনি বাংলার হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন তাঁকে দিয়ে কি আদৌ রাস্তা ঝাঁট দেওয়ানো সম্ভব ? বাংলার হয়ে যিনি ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করছেন পেটের দায়ে রাস্তা ঝাঁট দিলেও মন থেকে এই কাজ তিনি করবেন না। ফলে রাস্তা সাফাইয়ের কাজটাও ঠিক মতো হবে না।"
শনিবার কলকাতা কর্পোরেশনে এই প্রস্তাবটাই তোলেন কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের সাফাই কর্মী নেওয়ার বিজ্ঞাপনকে ঘিরেই গোলমালের সূত্রাপাত। সেখানে বলা হয়েছে, সাফাইকর্মী হিসেবে লোক নেওয়ার জন্য মেধাবী খেলোয়ার, প্রাক্তন চাকুরিজীবী, পূর্ত দফতরের প্রাক্তন কর্মী এবং স্বল্প দৃষ্টিশক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। 2022 সালের 28 মার্চ প্রকাশিত ওই বিজ্ঞাপন অনুযায়ী মোট 104 জন সাফাই কর্মী নেবে কলকাতা কর্পোরেশন। তার মধ্যে অসংরক্ষিত কোটায় চারজনকে নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, মেধাবী খেলোয়ারের কোটায় নেওয়া হচ্ছে সাতজনকে। অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী কোটায় নেওয়া হবে 24 জনকে। স্বল্প দৃষ্টিশক্তি বা লো-ভিশন কোটায় নেওয়া হবে একজনকে। এদিন মাসিক অধিবেশনে বিশ্বরূপ দে জানান, প্রাক্তন খেলোয়ার, স্বল্প দৃষ্টি শক্তিদের নিলে কাজ ঠিকমতো হবে না। ঝাঁট দেওয়ার কাজে যাঁরা দক্ষ তাঁদেরই নেওয়া হোক। প্রয়োজনে মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের আইন বদল করা হোক।
আরও পড়ুন: বকেয়া আদায়ে বিজেপির সুকান্তকে ফোন করার পরামর্শ অভিষেকের
এই প্রস্তাবে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, "আইন এভাবে বদল করা সম্ভব নয়।" মেয়র আরও জানান, সারা জীবন একই যোগ্যতায় ক্রিকেট খেলে যাওয়া সম্ভব নয়। এক সময় যিনি ক্রিকেট অথবা ফুটবল খেলতেন পরবর্তীকালে জীবিকা নির্বাহের জন্য তাঁকে রোজগার করতেই হয়। বিশ্বরূপ দে পালটা প্রশ্ন তোলেন, "তাই বলে রাস্তা ঝাঁট দেওয়ার কাজ করতে হবে ?" উত্তরে ফিরহাদ জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই এই নিয়ম চলে আসছে ৷ কর্পোরেশনের অধিবেশনে আইন বদল অসম্ভব বলেও দাবি মেয়রের। বিরোধীদের দাবি লজ্জার হলেও এটাই বাংলার কর্মসংস্থানের প্রকৃত অবস্থা।