কলকাতা, 27 সেপ্টেম্বর: দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা, জাতীয় পতাকা সাফল্যের মঞ্চে তুলে ধরার লক্ষ্যে সফল অনুষ। জাতীয় পতাকা তুলে ধরার ইচ্ছে কার না-থাকে, ছোটবেলার স্বপ্ন যখন যৌবনের শুরুতেই পূর্ণতা পায় তখন অন্যমাত্রা যোগ হয়। স্বপ্নপূরণের পর তাঁর অভিজ্ঞতা ইটিভি ভারতকে জানালেন তিলোত্তমার সোনার ছেলে অনুষ আগরওয়াল ৷
তাঁর বেড়ে ওঠা এই শহরের আর পাঁচটা ছেলের মতো নয়। কিছুটা আলাদাভাবেই নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি। পরিবার-পরিজন ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন জার্মানির এক ছোট্ট শহর বোর্চেনে। কলকাতা থেকে যার দূরত্ব সাড়ে আট হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। উদ্দেশ্য পড়াশোনার জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষালয়ে ভরতি হওয়া নয়, উদ্দেশ্য অশ্বারোহণ। সেই মরিয়া চেষ্টা মান্যতা পেল গতকাল মঙ্গলবার কলকাতা থেকে চিনের শহর হ্যাংঝাউতে। ইতিহাস গড়লেন অনুষ। ভারতীয় ইকুয়েস্ট্রিয়ানের নতুন নায়ক বালিগঞ্জের 23 বছরের এই যুবক।
ইকুয়েস্ট্রিয়ান বা অশ্বারোহণ সম্পর্কে বাঙালি খুব কম জানে। মঙ্গলবার এশিয়ান গেমসে ইকুয়েস্ট্রিয়ানের টিম ড্রেসেজ ইভেন্টে অনুষ সোনা জিতেছেন। যেহেতু দলগত ইভেন্ট তাই অন্য তিন সতীর্থ সুদীপ্তি হাজেলা, দিব্যাকৃতি সিং ও হৃদয় ছেদা তাঁর সোনা জয়ের সঙ্গী। অথচ চলতি এশিয়ান গেমসে ভারতের সম্ভাব্য পদকজয়ীদের কোনও তালিকাতেই ছিলেন না অনুষ বা তাঁর কোনও সতীর্থ। নিজের শহর এবং শহরবাসী, নিজের দেশের সিংহভাগের অজ্ঞতা কি অনুষকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছিল? অসম্ভবকে সম্ভব করে কী ভাবছিলেন লা মার্টসের এই প্রাক্তনী? জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। অনেক কষ্টের পরে হ্যাংঝাউ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে যোগাযোগ স্থাপন হল। তবে বেশ কয়েকবার সংযোগ বিচ্ছিন্নও হয়ে যায়। মিতভাষী অনুষ লম্বা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন যথা সম্ভব সংক্ষেপে।
- পদকের রং সোনালি হবে সেই স্বপ্ন কোথাও উঁকি দিয়েছিল?
আমরা একটা দুর্দান্ত দল নিয়ে এশিয়াডে এসেছি। এই সোনা সেই দলগত চেষ্টারই ফল এই পদক।
- সবমিলিয়ে অনুভূতি কেমন ?
এই অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। এক মুহূর্তের জন্য পৃথিবী যেন স্থির হয়ে গিয়েছিল। আসলে আমাদের লক্ষ্য ছিল ভারতের পতাকা সবার উপরে তুলে ধরা। আমার দেশের পতাকা সবার উপরে রয়েছে, জাতীয় সঙ্গীত বাজছে, সবাই আমার দেশের সম্মানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন- এই অনুভূতিটাই অন্যরকম ৷
- এই শহরে তেমন কোনও ভালো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সেইসময় ছিল না। এখনও সেভাবে নেই। ফলে কিছুটা বাধ্য হয়েই দিল্লির একটি ক্লাবে যোগ দেন । কীরকম ছিল সেই কলকাতা টু দিল্লির যাত্রা?
প্রতি শনিবার সকালের ফ্লাইটে দিল্লি যেতাম। তারপর আবার রবিবার বিকেলে কলকাতা ফিরে পরদিন স্কুল যেতাম।
এভাবে দু'নৌকায় পা দিয়ে চললে ইকুয়েস্ট্রিয়ানে ভালো কিছু সম্ভব নয় তা সোনার ছেলে বুঝতে পেরেছিলেন অচিরেই। ভালো কিছু করতে হলে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ জরুরি। প্রয়োজনে বিদেশে যেতে হবে। এরপরই 17 বছর বয়সে জার্মানি চলে যান, হিউবার্টস স্মিতের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে।
- কেন জার্মানিকে বাছলেন?
সেসময় আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে ইকুয়েস্ট্রিয়ান নিয়ে বিশেষ কিছু জানতাম না। ইন্টারনেটে সার্চ করে বিভিন্ন জায়গায় যোগযোগ করি। হিউবার্টস আমার মেইলের জবাব দিয়েছিলেন। এরপর সেখানে গিয়ে ভালো লেগে যায়।
সেই থেকে জার্মানির ছোট্ট শহর বোর্চেনের বাসিন্দা অনুষ। দেশ ছাড়লেও অবশ্যই ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্নটা জার্মানির ছোট্ট শহরে বসে লালন করেছিলেন। এখন ভারতীয় ইকুয়েস্ট্রিয়ানে চেনা মুখ অনুষ ৷ এক বছর আগে প্রথম ভারতীয় হিসাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ইন্ডিভিজুয়াল ড্রেসিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন । এবার এশিয়ান গেমসে ফাইনালে সোনা জয়ের ক্ষেত্রেও দলের সেরা তিনিই। অবশ্য এখনও কাজ শেষ হয়নি ।
আজ বুধবার ফের নিজের ঘোড়া এট্রোকে নিয়ে লড়াইয়ে নামবেন তিনি, এবার ইন্ডিভিজুয়াল ড্রেসিংয়ের যোগ্যতা অর্জন পর্ব। সেখানে সফল হলে বৃহস্পতিবার আরও একটা পদকের দৌড়ে দেখা যাবে অনুষকে। যে খেলা তিলোত্তমার কাছে অজ্ঞাতকুলশীল, সেখানেই দেখা সোনার ঝলকের। ধুলো উড়িয়ে সফল হোক অনুষ, এটাই এখন প্রার্থনা গোটা ভারতের ৷
আরও পড়ুন: অশ্বারোহণের ড্রেসেজ টিম ইভেন্টে সোনা ভারতের, দলে কলকাতার অনুষ; অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রীর