বন্ধু,
এই চিঠি তোমাকে লিখছি শুধু এইটুকু জানাতে যে তোমার সঙ্গে একজনের ভারি মিল ! হয়তো আমার এই চিঠি পড়ে তোমার কষ্ট কিছু কম হবে !
আমি জানি, ধরিত্রীকে তুমি ভালোবাস ৷ তার সবটুকু নিয়েই তুমি তাকে ভালোবাস ৷ তার পর্বত, তার নদী, তার আকাশ এই সবকিছু নিয়েই তুমি তাকে ভালোবাস ৷ তার বোঁচা নাক আর কোঁকড়া চুল নিয়ে যে সৌন্দর্য, সেই সৌন্দর্যকেই তুমি ভালোবাস ৷ দূরে থাক ৷ তাতেও কমেনি তোমার ভালোবাসা ৷ আমি জানি, কত আশা নিয়ে তুমি এসেছিলে ধরিত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ৷ তুমি এসেছ এইটে বুঝতে পেরে সেও যে শিহরিত হয়ে উঠেছিল, তা তুমি টের পেয়েছিলে ৷ তোমার মনে হয়েছিল বুঝি কেঁপে কেঁপে উঠছে তার বুক ! আর তারপর যখন সে জ্বালিয়েছিল আগুনের ছোটো ছোটো কুণ্ড, তখন তোমার মনে হয়েছিল, এ বুঝি ইশারা ! সে চাইছে নিজেকে পোড়াতে, দগ্ধ হতে চাইছে ! বোঝোনি, এ আসলে তার তোমাকে দূরে ঠেলে দেওয়ারই এক কৌশল ! বোঝোনি বলেই তুমি তার জন্য সাজিয়েছিলে ফুল ৷ তুমি তো জানো, ফুল ভালোবাসে সে ৷ তাই এনেছিলে গোলাপ, এনেছিলে চন্দ্রমল্লিকা, এনেছিলে তুচ্ছ গাঁদাও ! সে কি খুশি হয়েছিল একটু ? তোমার তো মনে হয়েছিল তাই-ই ৷ সে কারণেই তুমি নিজেকে উজাড় করে দিতে চাইলে ! তাকে দিতে চাইলে তোমার সবটুকু ৷ নিল সে ৷ ভরে নিল তার গোলা ৷ তুমি শূন্য হলে ৷ নিজের বলতে আর কিছুই রইল না তোমার ৷
কিন্তু, এত কিছুর পরও মন কি পেলে তার ? তাহলে কেন তোমাকে ধরিত্রীকে ভোলাতে একদিন সাজতে হল সার্কাসের জোকার ? কেনই বা একদিন তাকে নিয়ে যেতে হল খেলার মাঠে দেখাতে ক্রিকেট কেনই বা পাড়ায় তোমাকে ডেকে আনতে হল তোচনবাবুকে ? বসাতে হল মাচা ? সে তো তার মন পাওনি আর মন পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলে বলেই ! তাই না ?
মন কিন্তু পেলে না তুমি ৷ তাই এবার এসেছে তোমার চলে যাওয়ার পালা ৷ তোমাকে চলে যেতে হবে ৷ তুমি বুঝতে পারছ, ধরিত্রীর জীবনে একজন যুবা পুরুষের আগমনের সময় হয়েছে ৷ তুমি বুঝতে পারছ, তার যৌবন আর পরাক্রমের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠবে না তোমার জরা আক্রান্ত এই শরীর ৷ ধরিত্রীকে ছেড়ে যেতে হবে তোমাকে। তুমি বুঝতে পারছ, ওই পুরুষটির কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে ধরিত্রী ! নিজেকে তুলে দেবে বসন্তের বাহুডোরে ৷
বন্ধু, মনখারাপ কোরো না ৷ পঞ্চাশ ছুঁই-ছুঁই লেখকটিরও একই দশা ৷ তাকেও ওই কড়ি-বরগার বাড়ি থেকে এই সেদিন একইভাবে প্রস্থান করতে হয়েছিল ৷ সে দেখেছিল সেই গৃহে প্রবেশ করছে অনিন্দ্যকান্তি বসন্ত ! বসন্ত জানা, ধরিত্রীর কলিগ ! চলে এসেছিল সে ৷ শুধু চলে আসার সময় একবার ফিরে তাকিয়েছিল ৷ আর তার মনে হয়েছিল, তার ওই তীক্ষ্ণ দৃষ্টির মুখোমুখি হয়ে কেঁপে উঠেছিল ধরিত্রী ! সেই প্রথমদিনের মতো ৷
বন্ধু, চলে যেও ৷ শুধু যাওয়ার আগে একবার ফিরে তাকিও ৷ ধরিত্রী যেন তোমার সেই দৃষ্টিতে আরও একবার কেঁপে ওঠে ৷ বসন্তের কাছে হেরে যাওয়া তোমার নিয়তি ৷ কিন্তু, চিন্তা কোরো না ৷ দেখ, বসন্তের বাহুডোরে নিজেকে সমর্পণ করতে করতে একবার, শেষবারের মতো, তোমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সম্মুখে পড়ে কেঁপে ওঠা ধরিত্রীরও নিয়তি হবে ৷
মনখারাপ কোরো না, ভাই শীত ৷
ইতি-
অংশুমান