কলকাতা, 18 জানুয়ারি: জলপাইগুড়িতে সম্প্রতি অত্যধিক টাকা চাওয়ায় মায়ের দেহ কাঁধে তুলে ছেলে নিজেই নিয়ে যান শ্মশানে। সেই ঘটনায় তোলপাড় হয়ে উঠেছিল রাজ্য । খাস কলকাতাতেই বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে দিতে হয় মোটা টাকার ভাড়া (Ambulance service) । এমন অভিযোগও সামনে এসেছে বারবার ৷ এবার কলকাতা পৌরনিগমের (Kolkata Municipal Corporation) মাসিক অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে উঠল অ্যাম্বুলেন্স ও শববাহী গাড়ি প্রসঙ্গে ৷
সরগরম কলকাতা পৌরনিগম: তাই জলপাইগুড়ির ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে মহানগরে না-হয় এবং পরিষেবা আরও বিকেন্দ্রীকরণ করে বেশি মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তৃণমূল কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত । এদিন সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন 11 নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তারকেশ্বর চক্রবর্তী । আর তাতেই পালটা সরব হন কলকাতা পৌরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা মেয়র পরিষদ অতীন ঘোষ । প্রস্তাবের উত্তর দিতে উঠে তপন দাশগুপ্ত ও তারকেশ্বর চক্রবর্তীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "আপনারা কেন করতে পারেননি ?" ৷ আর এই প্রশ্ন ও পালটা প্রশ্নে সরগরম হয়ে ওঠে কলকাতা পৌরনিগম ৷
কলকাতা পৌরনিগমের মাসিক অধিবেশন: আর তাতেই অ্যাম্বুলেন্স ও শববাহী গাড়ি পরিষেবা নিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেন 10 নম্বর বরোর প্রাক্তন চেযারম্যান ও তৃণমূল কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত । তিনি এদিন প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, "কলকাতা পৌরনিগম যে সমস্ত পরিষেবা দেয় তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা হল বিভিন্ন অসুস্থ মানুষের কাছে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে দেওয়া এবং মৃত ব্যক্তির পরিজনদের পাশে থেকে শববাহী গাড়ি দিয়ে সহযোগিতা করা । যেকটি বিভিন্ন ধরনের অ্যাম্বুলেন্স বা শববাহী গাড়ি রয়েছে তা সব বরো অফিসে না-হলেও উত্তরে কিছু ও দক্ষিণে কিছু বরো থেকে এই পরিষেবা পাওয়া গেলে সাধারণ মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবেন ।"
তৃণমূল কাউন্সিলরের সওয়াল: আর তার এই প্রস্তাব সমর্থন করেন বর্তমান 11 নম্বর বরোর চেয়ারম্যান ও তৃণমূল কাউন্সিলর তারকেশ্বর চক্রবর্তী । তিনি 10, 11 বরোতেও অ্যাম্বুলেন্স ও শববাহী গাড়ির রাখা ও পরিকাঠামো তৈরির পক্ষে সাওয়াল করেন । আর তাতেই মনোক্ষুন্ন হন স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পরিষদ সদস্য অতীন ঘোষ । তিনি এই প্রস্তাবের উত্তরে বলতে উঠে বলেন," 23টি সাধারণ অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে । 3টি এসি শববাহী গাড়ি ও 2টি নন এসি শববাহী গাড়ি রয়েছে কলকাতা পৌরনিগমের ।"
আরও পড়ুন: পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে অত্যাধুনিক ট্রমা অ্যাম্বুলেন্স ও শববাহী গাড়ি, প্রশ্নের মুখে আসানসোল পৌরনিগম
তিনি আরও বলেন, "ফোন নম্বর দেওয়া আছে ডায়েরিতে ৷ প্রত্যেক কাউন্সিলর তাতে ফোন করে বললে বা নাগরিকরা যে কেউ ফোন করলেই পৌঁছে যায় অ্যাম্বুলেন্স বা শববাহী গাড়ি । খুবই সামান্য ভাড়া । 11, 12, 14, 15 ও 16 নম্বর বরো দফতরে একটি করে গাড়ি দেওয়া রয়েছে । সিআর এভিনিউ-তে এই পরিষেবার হেড অফিস ও কন্ট্রোল রুম আছে । এটা দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে ।"
এরপরেই অতীন ঘোষ পালটা প্রশ্ন তোলেন: "আপনারা এক জন বরো চেয়ারম্যান ছিলেন ৷ আরেকজন দীর্ঘ দিন ধরে বরো চেয়ারম্যান রয়েছেন ৷ তাহলে নিজেরা উদ্যোগ নেননি কেন?" এই প্রশ্ন ঘিরে বাদানুবাদ সৃষ্টি হয় অতীন ও তারকেশ্বর চক্রবর্তীর মধ্যে । যদিও মালা রায় ও দেবাশিস কুমারের তড়িঘড়ি হস্তক্ষেপ করায় বেশি দূর জল গড়ায়নি । শেষে অতীন ঘোষ বলেন, প্রয়োজনের ভিত্তিতে সংযুক্ত এলাকায় খোলা যেতে পরে কন্ট্রোল রুম । কর্মী রাখতে হবে । সেটা মেয়র অনুমতি দিলে আলোচনা করে পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে।
আরও পড়ুন: শববাহী গাড়ি ভাড়ার টাকা নেই, হাসপাতাল থেকে কাঁধেই মায়ের দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরল ছেলে