কলকাতা , 11 নভেম্বর : হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর বিহার - সাম্রাজ্য শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে BJP-JD(U) নেতৃত্বধীন NDA জোট। এই বিহার জয়ে উৎফুল্ল BJPর বঙ্গ ব্রিগেড এবার সর্বশক্তিতে ঝাঁপাতে চলেছে বাংলা- বিজয়ের লক্ষে। রাজ্য BJP সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতে বিহারের এই জয় আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে নিশ্চিন্ত ভাবে সাহায্য করবে BJP কে।
"আমদের সম্পূর্ণ মনোনিবেশ পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে যথেষ্ট আশাবাদী। প্রতিটি নির্বাচনই আলাদা। তবে বিহারে আমাদের সাফল্য দলকে বাংলায় প্রচুর পরিমাণে সহায়তা করবে। আমাদের কর্মীরা এখানে টিএমসি সরকারের বিরুদ্ধে দিনরাত লড়াই করছে। তাদের কঠোর পরিশ্রম অবশ্যই ফল দেবে, ” দিলীপবাবু বলেন।
অপরদিকে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট নেতৃত্ব, যারা জোট করে এবারের নির্বাচন লড়তে চলেছেন, তাঁরা মনে করেন যে অল্পের জন্য পরাজয় হলেও বিহারে মহাজোট জোর ধাক্কা দিয়েছে বিজেপিকে এবং বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের ফল দেখে এরাজ্যের বিরোধীরাও কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন। তাঁদের মহাজোট বিহারে বিজেপির ঘারে নিঃশ্বাস ফেলায় এরাজ্যের বিরোধীরা জোটকে আরো কার্যকরী করতে তৎপর হয়েছে।
বিহারের ফল দেখে রাজের বিরোধী দল নেতা আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, বিজেপি এবং তৃণমূল নিজেদের মধ্যে অত্যাধিক দ্বন্দ্ব নিয়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। বাম কংগ্রেসের ঐক্য এখনো অটুট। আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার আলোচনা হয়েছে বাম দলগুলোর সঙ্গে কংগ্রেসের। বিধানসভা নির্বাচনের ফল আশানুরূপ হবে বলেই জানিয়েছেন আব্দুল মান্নান।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্রের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কয়েকবার বৈঠক করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সহ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বিমান বসু জানান, জোট প্রক্রিয়া মসৃন পথেই এগোচ্ছে। স্পষ্ট গরিষ্ঠতা নেই কারোরই। বৃহত্তম দল আরজেডি। নজরকাড়া ফল হয়েছে বামফ্রন্টের। গণনায় কারচুপি না হলে অন্য ধরণের ফল হতো। বামপন্থীদের যদি আরো বেশি আসন দেওয়া হতো তাহলে মহাজোটের আসন আরো বৃদ্ধি পেতো। এই ফলাফল দেখিয়ে দিচ্ছে বামপন্থীদের নস্যাৎ করা যাবে না। এরাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের জোট সরকার গঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
কিন্তু যে জিনিষটা তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের নেতৃত্বকে চিন্তায় রেখেছে সেটি হল আসাদউদ্দিন ওয়েইসির সংখ্যালঘু ভোট ভাগের ফলে বহুক্ষেত্রে বিহার নির্বাচনে লাভবান হয়েছে BJP। ওয়াসি বুধবারই জানিয়ে দিয়েছেন যে বিহারের পর বাংলাতেও তাঁর দল ভোট লড়বে একক শক্তিতে। যদি তাই হয়, তাহলে মুর্শিদাবাদ এবং মালদার মতো সংখ্যালঘু- অধ্যুষিত জেলাগুলিতে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বামফ্রন্টের যথেষ্ট চিন্তার কারণ আছে।
যদিও মুখে এই আশংকার কথা স্বীকার করতে নারাজ তিন শিবিরের নেতারাই। বিমান বাবু এবং শ্রী মান্নান দুজনেই জানান যে বাংলাতে আসাদুদ্দিন ওয়াসি কোনো বিশেষ প্রবাদ ফেলতে পারবে বলে তাঁরা মনে করেন না।
তৃণমূল,নেতা এবং রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের ভোটার চরিত্র আলাদা। "বাংলাতে যত প্রকল্প হয়েছে তাতে সব ধর্মের মানুষই উপকির্ত হয়েছে। তা ছাড়াও বাংলার রাজনীতি সচেতন মানুষ চিরকালই ভোট দেন কাজের নিরিখে। আগামী বছরও তাঁরা তাই দেবেন। তাই আমি মনে করি না যে আসাদুদ্দিন ওয়াসির দল কোনো বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারবে," শোভনদেব বলেন।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, শ্রী আমল কুমার মুখোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন যে বাংলার কিছু কিছু জায়গায় নিজেরা জিততে না পারলেও কিছু সংখ্যালঘু ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করেই দিতে পারে আসাদুদ্দিন ওয়াসির দল, বিশেষত সীমান্ত- সংলগ্ন জেলাগুলিতে।
ইতিমধ্যে বিহার নির্বাচনে বামদলগুলির অভুতপুর্ব ফলে স্বভাবতই উল্লসিত বঙ্গ বামফ্রন্ট তথা CPI(M)। মহাজোটের শরিক হিসাবে মাত্র ২৯টি আসন থেকে লড়ে, তিন বামপন্থী দল, CPI(ML), CPI এবং CPI(M) এবার জিতেছে ১৬টি কেন্দ্র। রাজনৈতিক মহলের মতে আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ফলাফল উজ্জুবিত করবে বঙ্গে বামদলগুলিকে, গত লোকসভা ই নির্বাচনের নিরিখে যাদের প্রাপ্ত ভোট নেমে এসেছিলে সাত শতাংশের কাছাকাছি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিহারে ২৪৩ বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র একটা কেন্দ্রে বামপন্থীরা এগিয়ে ছিল।
"সেই নিরিখে বামপন্থীরা সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে। আসলে রুটিরুজির, খাদ্য এবং কর্মসংস্থান, জাতধর্মের চাইতে অনেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা গরীব মানুষ আবার বুঝিয়ে দিলেন। পশ্চিমবঙ্গেও এবার দশ বছরের আবর্জনা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বামপন্থীরা তাদের সহযোগীদের নিয়ে এগোতে পারবে এটা নিশ্চিত থাকুন। বিহার নির্বাচনে রাজ্যসরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার একপক্ষের।পশ্চিমবঙ্গেও বকলমে তাই। কেন্দ্রীয় এবং বঙ্গের সরকার দুজনেই মানুষের বিপক্ষে," শ্রী চক্রবর্তী বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক CPI(M)এর এক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির নেতা বলেন যে পশ্চিমবঙ্গে আগামী নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক, বাম -কংগ্রেস জোটের আসন সংখ্যা এবং প্রাপ্ত ভোট দুটোই বাড়বে এটা নিশ্চিত। "কিন্তু সেটিকে আরো সুনিশ্চিত করতে এখুনি যেটা দরকার যে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস দুজনেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে আসন সমঝোতায় এসে যাতে প্রচারে নেমে পড়তে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি, এই দুটি দলেই অন্তর্দ্বন্দ্ব খুবই প্রকট। ভোটের টিকিট দেয়াও নিয়ে সেটা আরো প্রকট হবে। তাই জোটকে চেষ্টা করতে দুই বিপক্ষের আগেই যেন প্রচারের ময়দানে নেমে যাওয়া যায় যাতে মানুষের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট বার্তা দেওয়া যায়," তিনি বলেন।