কলকাতা, 19 ডিসেম্বর : রোগীর শরীরে গলব্লাডার-ই নেই। বাদ দেওয়া হয়েছে 27 বছর আগে । অথচ, ইউজিসি রিপোর্টে জানা গেল গলব্লাডার স্বাভাবিক রয়েছে । ঘটনাটি নিউ আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের । শুধু তাই নয়, রোগীর রক্তের রিপোর্টে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ-ও ভুল বলে জানিয়েছে নাম করা ওই বেসরকারি হাসপাতাল। এই ঘটনায় হাসপাতালকে 50 হাজার টাকা জরিমানা করল রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন ।
31 অক্টোবর নিউ আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয় রিনা পালকে । 8 নভেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর। ভরতির সময় রোগীর জ্বর, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতার পাশাপাশি কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা ছিল । উত্তর 24 পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা ওই প্রবীণাকে হাসপাতালে ভরতির পরে ইউএসজি করানো হয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন অর্থাৎ, ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এই হাসপাতালে এই রোগীর ইউএসজি-র রিপোর্টে জানানো হয়, রোগীর গলব্লাডার নরমাল আছে, কোনও স্টোন নেই, থিকনেস-ও নর্মাল। 2020-তে এই রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। অথচ এই রোগীর গলব্লাডার বাদ দেওয়া হয়েছে 1993-তে।" কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, "এই ঘটনায় ওই হাসপাতালের বক্তব্য, এটা টাইপের ভুল। কিন্তু, চিকিৎসক ইউজিসি করালেন, তিনি সই-ও করেছেন রিপোর্টে। কীভাবে সই করলেন, ঠিক মতো এর উত্তর দিতে পারেননি। বক্তব্য, গলব্লাডার বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটা রোগীর বেড হেড টিকিটে লেখা আছে । আমাদের প্রশ্ন, ইউজিসি রিপোর্টের কী হল?" তিনি আরও বলেন, "7 নভেম্বর এই রোগীর হিমোগ্লোবিন ছিল 7.9। পরের দিন তাঁর হিমোগ্লোবিন দেখা যাচ্ছে 11.3 । একদিনে আচমকা কীভাবে এমন পরিবর্তন হল, কোনও ব্লাড-ও দেওয়া হয়নি। কীভাবে নরমাল হল? ওই হাসপাতাল ঠিক মতো এর কারণ দর্শাতে পারেনি।" রক্তের এমন রিপোর্টের বিষয়ে কমিশনের মনে হয়েছে, ওই সময় রোগীর যে হাতে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছিল, সেই হাত থেকেই রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা বলছেন, এক্ষেত্রে অনেক সময় রক্তের রিপোর্ট ঠিক মতো হয় না। পরের দিন ঠিক মতো হয়েছে, সেই জন্য পরের দিনের রিপোর্ট ঠিক হয়েছে।
কমিশন জানিয়েছে, ওই রোগীর ক্ষেত্রে হাসপাতালের কিছু সমস্যা ছিল। প্যাথোলজিক্যাল বিভিন্ন টেস্টে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যে টাকা নেওয়া হয়েছে, সেই টাকা রোগীর পরিজনদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বেসরকারি ওই হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন। পাশাপাশি 50 হাজার টাকা জরিমানা-ও করা হয়েছে ওই ইউজিসি ও রক্তের ভুল রিপোর্টের জন্য।